নয়াদিল্লি, 22 মার্চ: অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গ্রেফতারি নিয়ে আরও বড় আন্দোলনের পথে আম আদমি পার্টি ৷ এবার তারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবন ঘেরাওয়ের ডাক দিল ৷ আগামী মঙ্গলবার (26 মার্চ) তারা এই কর্মসূচি পালন করবে বলে জানানো হয়েছে আপের তরফে ৷ এমনকী, তারা এবার হোলির উৎসবও বাতিল করছে বলে জানিয়েছে ৷
উল্লেখ্য, দিল্লির আবগারী দুর্নীতি মামলায় দীর্ঘদিন ধরেই এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছে ৷ বারবার সমন পাঠালেও কেজরিওয়াল হাজিরা দেননি ৷ উলটে তিনি দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ৷ পর পর দু’দিন তাঁকে রক্ষাকবচ দিতে অস্বীকার করে আদালত ৷ তার পরই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে হাজির হন ইডির আধিকারিকরা ৷ রাতে গ্রেফতার করা হয় কেজরিওয়ালকে ৷
এই নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই উত্তাল সারা দেশের রাজনীতিতে ৷ দফায় দফায় দিল্লিতে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করছেন আপের কর্মী ও সমর্থকরা ৷ সেই আন্দোলনকেই এবার আরও বড় আকারে করার পরিকল্পার কথা শুক্রবার জানিয়েছেন আপ নেতা তথা দিল্লি সরকারের মন্ত্রী গোপাল রাই ৷ তিনি বলেন, "এই বছর হোলির অনুষ্ঠান হবে না । 25 মার্চ আমরা জনগণের কাছে যাব এবং তাদের বলব দেশে কী ঘটছে... 26 শে মার্চ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গ্রেফতারির প্রতিবাদে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও করা হবে ।"
এ দিন বিরোধীদের জোট ‘ইন্ডিয়া’র নেতারা নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কেজরিওয়ালের গ্রেফতারি নিয়ে ৷ সেই নিয়ে গোপাল রাই বলেন, "আজ ইন্ডিয়া জোট নেতারা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করেছেন... এবং এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন (অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গ্রেফতার) ৷’’
এ দিন আপের তরফে নির্বাচন কমিশনে গিয়েছিলেন সাংসদ সন্দীপ পাঠক ৷ তিনি বলেন, "এটা কোনও একজন ব্যক্তি, একটা দল বা একটি জোটের প্রশ্ন নয় । এটি গণতন্ত্রের প্রশ্ন । এমনকী নির্বাচন কমিশন জানে যে আদর্শ আচরণবিধি কার্যকর হওয়ার পরে, পুরো আমলাতন্ত্র কমিশনের কাছে জবাবদিহি করে । কিভাবে তা হল ? এজেন্সি হঠাৎ করে এসে একজন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে ?’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘... ইডি আজ তার সমস্ত সম্মান হারিয়েছে... ইসিআই বলেছে যে তারা বিষয়টি দেখবে... আমি সমর্থনের জন্য ইন্ডিয়া জোটকে ধন্যবাদ জানাই গতকাল থেকে... ৷"
সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও ছিলেন সেই দলে ৷ তিনি বলেন, "নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে । আদর্শ আচরণবিধি বলবৎ আছে ৷ তা সত্ত্বেও এমন পদক্ষেপ (অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গ্রেফতার) করা হচ্ছে ৷ যা স্বাভাবিক পরিস্থিতিকে ধ্বংস করছে । স্বাভাবিক পরিস্থিতি ছাড়া গণতন্ত্র কিছুই নয়... নির্বাচন কমিশন পুলিশের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখে, প্রশাসন তাহলে কেন্দ্রীয় সংস্থার ওপর কেন নয়, তাদের ভাবতে হবে ।’’
কংগ্রেসের অভিষেক মনু সিংভি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের পর বলেন, "প্রায় প্রতিটি বিরোধী দল এখানে রয়েছে । এই ঘটনাটি গভীর রাতে ঘটেছে (দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে) । নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আমাদের বিশদ আলোচনা হয়েছে । এটি কোনও ব্যক্তি বা কোনও দলের বিষয়ে নয় তবে এটি নির্বাচনের মূল কাঠামোর সঙ্গে সম্পর্কিত ।’’ তাঁর অভিযোগ, এই ধরনের ঘটনা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রকে প্রভাবিত করে ।
তিনি বলেন, ‘‘আমরা নির্বাচন কমিশনকে হস্তক্ষেপ করতে বলেছি । স্বাধীন ভারতের 75 বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে । পুরনো এবং সবচেয়ে বড় বিরোধী দলের অ্যাকাউন্ট স্থগিত করা হয়েছে । আমরা প্রমাণ দিয়েছি । বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে এজেন্সির অপব্যবহার হচ্ছে । আমরা জিজ্ঞাসা করেছি নির্বাচন কমিশন যদি ডিজিপি, সচিব পরিবর্তন করতে পারে, তাহলে এসব সংস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করছে না কেন ?’’
আরও পড়ুন: