ETV Bharat / state

পাল-সেন যুগের বহু মূর্তি পড়ে রয়েছে বিভিন্ন থানায়, সংরক্ষণের দাবি ইতিহাসবিদদের

author img

By

Published : Jun 29, 2020, 6:06 PM IST

Updated : Jul 13, 2020, 2:09 PM IST

উদ্ধার হওয়া মূর্তি
উদ্ধার হওয়া মূর্তি

বিভিন্ন সময়ে উদ্ধার হওয়া পাল-সেন যুগের বহু মূর্তির বর্তমান ঠিকানা রায়গঞ্জের বিভিন্ন থানা ৷ পুলিশকর্মীরা ফাঁকা সময়ে যত্ন নিলেও মূর্তিগুলির সঠিক সংরক্ষণের জন্য় সংগ্রহশালা তৈরির দাবি জানিয়েছেন ইতিহাসবিদরা ৷

রায়গঞ্জ, 29 জুন : কোনও মূর্তির মাথা নেই ৷ কারও নেই পা ৷ কারও চালচিত্র ভাঙা ৷ এভাবেই যত্নের অভাবে পড়ে রয়েছে পাল, সেন যুগের বিভিন্ন মূর্তি ৷ রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার বিভিন্ন থানার আনাচে কানাচে তাকালে এরকম প্রায় 40টি মূর্তি চোখে পড়বেই ৷ যত্নের অভাবে ধুলো পড়ছে সেগুলিতে ৷ পুলিশকর্মীরা ফাঁকা সময়ে কখনও পরিষ্কার করেন ৷ কিন্তু, সেভাবে যত্ন নেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না ৷ কোনও কোনও থানায় মন্দির বানিয়ে মূর্তিগুলি প্রতিষ্ঠাও করা হয়েছে ৷ রোজ নিয়ম করে তা পুজো করা হয় ৷ কিন্তু, সঠিক পরিচর্যার জন্য মূর্তিগুলিকে কোনও সংগ্রহশালায় রাখার ব্যবস্থা করলে ভালো হয় বলে মনে করছেন ইতিহাসবিদরা ৷ পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন সময়ে উদ্ধার হওয়া মূর্তিগুলিকে থানাতেই এনে রাখা হয় ৷ সেগুলিকে সম্পূর্ণ নিয়ম মেনে পুরোহিত ডেকে পুজোও দেওয়া হয় ৷

বিভিন্ন সময়ে রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার হেমতাবাদ, রায়গঞ্জ, করমদিঘি, ইটাহার ও কালিয়াগঞ্জ থানা এলাকা থেকে উদ্ধার হয়েছে বহু মূর্তি ৷ সেগুলি যত্ন করে রাখা হয়েছে বিভিন্ন থানায় ৷ সবচেয়ে বেশি মূর্তি রাখা রয়েছে ইটাহার থানায় ৷ এই থানার ভিতরেই তৈরি করা হয়েছে একটি মন্দির ৷ বর্তমানে এই মন্দির গুপ্ত, পাল, সেন যুগের ইতিহাস চর্চার অন্যতম জায়গা হয়ে উঠেছে ৷ এছাড়াও এরকম বহু মূর্তি রয়েছে হেমতাবাদ থানা, কর্ণজোড়া পুলিশ ফাঁড়ি ও করণদিঘি থানায় ৷

ইতিহাসবিদরা জানান, উত্তর দিনাজপুর বহু ইতিহাসের সাক্ষী ৷ এই জেলার উপর দিয়ে একটা সময় অনেক নদী বয়ে যেত ৷ এই নদ-নদীর মাধ্যমেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতেন জেলার মানুষ ৷ নানা সভ্যতার সম্ভার নিয়ে এই নদীপথেই চলত ব্যবসা ৷ তাই নদীগুলিতে রয়েছে বিভিন্ন সভ্যতার চিহ্ন ৷ উত্তর দিনাজপুরের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ তাঁদের সংস্কৃতির চিহ্ন রেখে গিয়েছেন ৷ বিশেষত, পাল-সেন যুগে জেলায় প্রচুর মূর্তি তৈরি করা হত ৷ সেগুলি উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ নিয়ে যেতেন ৷ তারপর বিভিন্ন মন্দিরে স্থাপন করা হত এবং তার পুজো করা হত ৷

পাল-সেন যুগের বহু মূর্তি পড়ে রয়েছে বিভিন্ন থানায়

কিন্তু বখতিয়ার খিলজির আক্রমণের সময় মূর্তিগুলিকে ভেঙে দেওয়া হয় ৷ ভেঙে দেওয়া হয় মন্দিরগুলিকেও ৷ তখন মন্দির কর্তৃপক্ষ বা পুরোহিতরা ভয় পেয়ে মূর্তিগুলিকে পুকুরে ডুবিয়ে দিতেন ৷ পরে পুকুর সংস্কার বা খোদাই করতে গিয়ে সেই মূর্তিগুলি খুঁজে পাওয়া যায় ৷ হাজার বছরের পুরানো এই মূর্তিগুলি কোথাও পাওয়া গিয়েছে চার বছর আগে ৷ কোথাও পাওয়া গিয়েছে এক বছর আগে ৷ এভাবে কয়েক বছর ধরে মূর্তিগুলি থানায় পড়ে রয়েছে ৷ ইতিহাসবিদদের মতে, এই মূর্তিগুলির ভালোভাবে চর্চা করলে জেলার ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য খুব সহজেই পাওয়া যেতে পারে ৷

এই বিষয়ে রায়গঞ্জের ইতিহাসবিদ বৃন্দাবন ঘোষ বলেন, "আমাদের জেলা দিয়ে একসময় বহু নদ-নদী বয়ে গিয়েছে ৷ সেইসব নদীর উপর দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ নির্ভরশীল ছিলেন ৷ অনেক সভ্যতা তৈরি হয়েছিল এই নদীগুলিকে ঘিরে ৷ সেসময় বহু মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল ৷ কিন্তু, পরিস্থিতির চাপে পড়ে সাধারণ মানুষ মূর্তিগুলি নদী-নালাতে ফেলে দিতেন ৷ সেগুলিই বর্তমানে বিভিন্নভাবে উদ্ধার করা হচ্ছে ৷ বিভিন্ন থানায় এই মূর্তিগুলি পড়ে রয়েছে ৷ সব মূর্তি সংগ্রহ করে একটি সংগ্রহশালা তৈরি করলে আগামী দিনে ঐতিহাসিকদের জন্য গবেষণা করতে সুবিধা হবে ৷"

রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার সুপার সুমিত কুমার বলেন, "আমাদের পুলিশ জেলার বিভিন্ন থানায় প্রচুর মূর্তি উদ্ধার করে রাখা রয়েছে ৷ সেগুলি অনেক পুরানো ৷ ইতিহাসবিদরা এই মূর্তিগুলিকে পাল, সেন যুগের বলে জানিয়েছেন ৷ আমরা মূর্তিগুলি সংরক্ষণ করার চেষ্টা করছি ৷" কীভাবে উদ্ধার হয়েছে মূর্তিগুলি ? সুমিত কুমার জানান, "বিভিন্ন সময়ে খোদাই করার সময় বা চাষ করার সময়, কখনও পুকুর সংস্কার করতে গিয়ে উদ্ধার হয়েছে মূর্তিগুলি ৷" মূর্তি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে ? তিনি বলেন, "যখন মূর্তিগুলি উদ্ধার করা হয়েছিল, তখন যোগাযোগ করা হয়েছিল ৷"

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তরফে কি কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে মূর্তি সংরক্ষণের বিষয়ে ? ইতিহাসবিদ বৃন্দাবন ঘোষ জানাচ্ছেন, "রাজ্যের প্রত্নতত্ত্ব দপ্তরের তরফে 10জনের একটি দল ডিসেম্বর মাসে জেলার 61টি ঐতিহাসিক জায়গা পরিদর্শন করে ৷ জেলার মানুষ তাদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, ইতিহাসের নিদর্শনগুলিকে সংরক্ষণ করার জন্য ৷ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তরফেও আশা দেওয়া হয়েছে ৷"

Last Updated :Jul 13, 2020, 2:09 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.