ETV Bharat / state

Old Man Returning Home : খড়গপুরে বাবাকে ফেলে পালিয়েছে ছেলে, 3 মাস পর উদ্ধার বৃদ্ধ

author img

By

Published : Oct 31, 2021, 11:04 PM IST

Old Man Returning Home
খড়গপুরে বাবাকে ফেলে হায়দরাবাদে চলে গিয়েছিল ছেলে, ভাইযের চেষ্টায় বাড়ি ফিরছেন বৃদ্ধ

অভিযোগ, গত জুলাই মাসে হঠাৎ তাঁর মাথায় ভারী কিছু জিনিস দিয়ে আঘাত করে ছেলে ভি বিজয় কুমার। পরে তাঁকে আবারও মারধর করা হয়৷ বাধ্য হয়ে প্রতিবেশীদের সাহায্যে খড়গপুর হাসপাতালে চিকাৎসার জন্য ভর্তি হন তিনি।

মেদিনীপুর, 31 অক্টোবর : সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরে চিকিৎসার নাম করে বাবাকে খড়গপুরে ফেলে রেখে হায়দরাবাদে চলে গিয়েছিল ছেলে ৷ ভাইয়ের চেষ্টায় তিন মাস 18 দিন পর বাড়ি ফিরলেন বৃদ্ধ ৷

জানা গিয়েছে, বছর 65 এর বৃদ্ধ ভি কৃষ্ণা রাও একজন অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মচারী। তিনি তাঁর ছেলে, স্ত্রী, বউমার সঙ্গে থাকতেন খড়গপুরের 16 নম্বর ওয়ার্ডের গাট্টার পাড়ার একটি ভাড়া বাড়িতে। তাঁর দেখভাল ছেলেই করত। যেহেতু তিনি অবসরপ্রাপ্ত কর্মী তাই পেনশনের কিছু টাকাও তিনি পেতেন। কিছু জমি-জায়গা ও সম্পত্তিও ছিল তাঁর। কিন্ত সম্পত্তি লিখে দেওয়া নিয়ে তাঁর সঙ্গে বিবাদ ঘটে ছেলের।

অভিযোগ, গত জুলাই মাসে হঠাৎ তাঁর মাথায় ভারী কিছু জিনিস দিয়ে আঘাত করে ছেলে ভি বিজয় কুমার। পরে তাঁকে আবারও মারধর করা হয় ৷ বাধ্য হয়ে প্রতিবেশীদের সাহায্যে খড়গপুর হাসপাতালে চিকাৎসার জন্য ভর্তি হন তিনি। এই হাসপাতালে দিন দশেক চিকিৎসার পর ছাড়া পান তিনি৷ কিন্তু বৃদ্ধের অভিযোগ, বাড়ি ফিরে আসার মিনিট দশেকের মাথায় তাঁর ছেলে তাঁকে বলেন, গাড়িতে করে তাঁদের এক জায়গায় যেতে হবে। সেই মোতাবেক তাঁকে নিয়ে কয়েকজন জোর করে গাড়িতে করে চলে যায়। এরপর বৃদ্ধের আর মনে নেই সেদিন তিনি কোথায়, কীভাবে গিয়েছিলেন। পরে সকাল হলে বৃদ্ধ দেখেন, একটি নেশামুক্তি কেন্দ্র তিনি কয়েকজন মাদকাসক্ত যুবকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। সেখানেই তিনি তাঁদের সঙ্গে তিনি দিন কাটাতে থাকেন। বৃদ্ধ জানিয়েছেন, নিজের পরিবারের কথা জানতে চেয়ে তিনি ওই সেন্টার কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জানতে পারেন, মাথার রোগ আছে বলে তাঁকে তাঁর ছেলে এখানে দিয়ে গেছেন ৷

আরও পড়ুন : Rajib Banerjee : রাজীবের সেদিন-এদিন

এরকম করেই দিন চলতে থাকে। একটি বাড়ির মধ্যেই নির্দিষ্ট গণ্ডিতে আবদ্ধ হয়ে নিজের বাড়ির লোকজনের অপেক্ষা করতে থাকেন তিনি৷ এক এক করে ওই সেন্টারে তিন মাস 18 দিন কাটিয়ে দেন ওই বৃদ্ধ । জানা গিয়েছে, এই কাণ্ড ঘটিয়েই ওই বৃদ্ধির ছেলে ভি বিজয় কুমার তাঁর স্ত্রী এবং বাচ্চা নিয়ে পাড়ি দেন হায়দরাবাদে। অপরদিকে বৃদ্ধের এক ভাই ভি জগনমোহন রাও দাদার খোঁজখবর শুরু করলে জানতে পারেন যে বৃদ্ধকে চিকিৎসার জন্য খড়গপুর রেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই সেখানে তাঁরা ওই বৃদ্ধের খোঁজ পাননি ৷

এরপর গোটাপাড়া এলাকায় খোঁজখবর শুরু করেন তাঁরা। এলাকার এক প্রাক্তন কাউন্সিলরের সহায়তায় অবশেষে মেদিনীপুরের ধর্মার ওই মাদকমুক্তি সেন্টারে ওই বৃদ্ধের খোঁজ পাওয়া যায়। খোঁজ নিয়ে দেখা যায় বৃদ্ধ সেখানে আরও কয়কজন মাদকাসক্তের সঙ্গে ভর্তি রয়েছেন । তাঁকে চিকিৎসার নাম করে দেওয়া হচ্ছে মাথার রোগ সারানোর ওষুধ। এরপর পুলিশের দ্বারস্থ হন ওই বৃদ্ধের ভাই ভি জগমোহন রাও। এই ঘটনা চাউর হতেই খোঁজ পড়ে বৃদ্ধের ছেলের । তাঁকে প্রশ্ন করলে সে জানায়, বাবার মিকিৎসার জন্যই সে ওই কেন্দ্রে তাঁকে রেখে এসেছিল ৷

তবে সব ভাল যাঁর শেষ ভাল৷ অবশেষে নিজের ভাইয়ের চেষ্টায় বাড়ি ফিরছেন ওই বৃদ্ধ ৷ এদিন বৃদ্ধের ভাই ভি জগমোহন রাও বলেন, "এই ধরনের অমানবিক কাজে আমরা দুঃখিত। আমার ভাইপো যে তাঁর বাবার সঙ্গে এই ধরনের ব্যাবহার করবে তা ভাবতে পারিনি। কেনই বা বাবাকে এখানে ছেড়ে দিয়ে চলে গেল, রাতারাতি কেনই বা পালিয়ে গেল তা বুঝতে পারছি না। দাদার খোঁজ শুরু করেছিলাম কিন্তু ওই ভাড়া বাড়ির মালিকের কাছে জানতে পারি দাদাকে হাসপাতালে এখানে চিকিৎসা করানো হচ্ছে। পরবর্তীকালে হাসপাতালে খবর নিয়ে দেখা যায় তিনি সেখানে নেই । এরপর খোঁজখবর শুরু করি এবং আরেক প্রতিবেশী ভাইয়ের চেষ্টায় আজ দাদাকে উদ্ধার করলাম সেন্টার থেকে। সমস্ত সরকারি কাজকর্ম মিটিয়ে আজ দাদাকে নিয়ে যাব৷ " এলাকার প্রাক্তন কাউন্সিলর বান্তা মুরলি বলেন, "উনি বাড়ি ফিরতে পারায় খুব খুশি। একটি সেন্টারে এভাবে একটা মানুষকে বন্ধ করে রাখা যায় না। তার কারণ অবশ্যই দেখাতে হয়।"

অবশেষে ভাইয়ের সঙ্গে বাড়ি ফিরে যেতে পেরে খুশি ভি কৃষ্ণা রাও । তিনি বললেন, " আমি নিজের পরিবার না পেলেও, আরেক ভাইয়ের কাছে পেয়ে যথেষ্ট আনন্দ লাগছে। "

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.