ETV Bharat / state

কোরোনা রাজ্যের শাসকদলকে অক্সিজেন দিল, কটাক্ষ বিরোধীদের

author img

By

Published : Apr 17, 2020, 6:14 PM IST

malda corona affects municipal election
kkkkk

কোরোনার সংক্রমণের জেরে পৌর নির্বাচন অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে গেছে। বিরোধীরা বলছে, এতে সুবিধা হল শাসক দলের। যদিও, বিরোধীদের মন্তব্যে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল৷

মালদা, 17 এপ্রিল: কোরোনা সংক্রমণের জেরে রাজ্যের পৌরভোট কবে হবে তা নিয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না ৷ বিরোধীদের বক্তব্য, কোরোনা রাজ্যের শাসকদলকে বাড়তি অক্সিজেন দিয়েছে ৷ নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন হলে নিশ্চিতভাবে রাজ্যের অনেক জায়গাতেই মুখ থুবড়ে পড়ত তৃণমূল ৷ সেই কারণেই তারা পৌরসভাগুলিতে প্রশাসক নিয়োগের চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছিল৷ কিন্তু আচমকা কোরোনার প্রকোপ শাসকদলকে সুবিধা করে দিল ৷ যদিও বিরোধীদের এই মন্তব্যে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল ৷ তাদের বক্তব্য, এখন রাজনীতি করার সময় নয় ৷ আগে মানুষের জীবন, পরে রাজনীতি ৷

ইংরেজবাজার ও পুরাতন মালদা পৌরসভার বোর্ডের মেয়াদ 25 মে শেষ হচ্ছে । তার মধ্যে ভোট হবে ধরে নিয়ে প্রচারও শুরু করে দিয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলিও। এমনকী মালদা শহরে দেওয়াল দখলের লড়াইও শুরু হয়ে গিয়েছিল ৷ এরই মধ্যে বিশ্বব্যাপী কোরোনার প্রকোপ পালটে দেয় পুরো ছবিটাই ৷ ফলে, বর্তমানে স্থগিত নির্বাচন সংক্রান্ত কাজ ৷

জেলা BJP-র সহ সভাপতি তথা দলের মুখপাত্র অজয় গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “আমরা প্রথমেই বলেছিলাম, শাসকদল প্রথমে কলকাতা কর্পোরেশনের ভোট করে জল মাপবে ৷ যদি সেই ভোটে তারা বুঝতে পারে যে জনসমর্থন কমছে, তবে তারা পৌরসভাগুলির মেয়াদ শেষের পর প্রশাসক বসাবে ৷ এবং বিধানসভা নির্বাচনের সঙ্গে কিংবা তারপর পৌরভোট করবে ৷ আমাদের ধারণা যে ভুল ছিল না, তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল তখনই, যখন 10 মে-র মধ্যে মেয়াদ উত্তীর্ণ সমস্ত পৌরসভায় প্রশাসক নিয়োগের কথা বলা হয়৷“

অজয়বাবুর আরও বক্তব্য, “আসলে শহরের মানুষ যদি শাসকদলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তার প্রভাব বিধানসভা নির্বাচনেও পড়বে ৷ এর মধ্যেই মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মতো কোরোনা এসে পাশে দাঁড়াল শাসক শিবিরের ৷ এখন ত্রাণ নিয়ে শাসকদলের যে দুর্নীতি প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে এখন ভোট হলে তৃণমূলের হার কেউ রুখতে পারবে না ৷”

প্রায় একই বক্তব্য জেলার কংগ্রেস সভাপতি মোস্তাক আলমেরও ৷ তিনি বলেন, “এটা এক কাকতালীয় যোগাযোগ ৷ রাজ্য সরকার আগেই পৌর নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিল ৷ তার মধ্যেই কোরোনা সংক্রমণ ৷ এতে শাসকদলের একেবারেই সোনায় সোহাগা হয়েছে ৷ 2021 সালের আগে আর এই ভোট হবে না ৷ তবে এই সুযোগ তারা কাজে লাগাতে পারবে কি না তা সময়ই বলবে৷ আমরা যে কোনও সময় ভোটের জন্য তৈরি রয়েছি ৷ শাসকদল যাই ভাবুক কিংবা করুক না কেন, এই জেলায় তাদের কোনও জায়গা নেই৷”

এই বিষয়ে CP(I)M-এর জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, “শাসকদল আগেই চেয়েছিল তারা নির্দিষ্ট সময়ে রাজ্যে পৌর নির্বাচন করবে না ৷ কারণ, এই মুহূর্তে মানুষ তাদের সঙ্গে নেই ৷ তাই তারা অনেক পৌরসভায় আগে থেকেই প্রশাসক নিয়োগ করেছিল ৷ এরই মধ্যে কোরোনা তাদের কাছে আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিল ৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনের কোনও প্রশ্নই ওঠে না ৷ তাই শাসকদল যে এই পরিস্থিতির কিছুটা সুবিধা পেল তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই৷“

তিনি আরও বলেন, “কিন্তু, এই পরিস্থিতিতেও শাসকদলের নেতারা যে দুর্নীতি চালাচ্ছে, তা মানুষ দেখতে পাচ্ছে ৷ বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষের প্রতিরোধের খবর পাওয়া যাচ্ছে ৷ ত্রাণ নিয়ে দলবাজির জন্য শাসকদলের কাউন্সিলরের বাড়িতে লোকজন চড়াও হচ্ছে ৷ তাই কোরোনার সুবিধা পেলেও তারা সেই সুবিধে কাজে লাগাতে পারবে না ৷ একথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়৷”

এদিকে, ইংরেজবাজার পৌরসভার চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল নেতা নীহাররঞ্জন ঘোষ বলেন, “আমরা মানুষের জীবন নিয়ে কখনও রাজনীতি করি না ৷ এখন মানুষের জীবন রক্ষা করাই আমাদের প্রধান কাজ ৷ তার জন্য সামনে থেকে লড়ে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ নির্দিষ্ট সময়ে গোটা রাজ্যে পৌর নির্বাচন করার জন্য তিনি রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছিলেন ৷ সেইমতো কমিশনও প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিল ৷ এনিয়ে কমিশন জেলা প্রশাসনগুলিকে চিঠি করতেও শুরু করে দিয়েছিল৷ কিন্তু তার মধ্যেই কোরোনার প্রকোপ শুরু হয়৷ এই অবস্থায় নির্বাচন করা সম্ভব না ৷ “

তাঁর আরও বক্তব্য, “আজ বিরোধীরা প্রশাসক নিয়োগের তত্ত্ব দিচ্ছে ৷ কিন্তু এর আগে ইংরেজবাজার পৌরসভায় নির্বাচন ছাড়াই বামফ্রন্টের প্রভাত আচার্য 10 বছর চেয়ারম্যান ছিলেন ৷ তখন তো কেউ এনিয়ে কোনও কথা বলেনি ? এখন পরিস্থিতির গুরুত্ব না বুঝে বিরোধীরা যেভাবে প্রশ্ন তুলছে, তা নিতান্তই দুর্ভাগ্যজনক ৷ এরা মানুষের জীবন নিয়েও রাজনীতি করে ৷”

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.