ETV Bharat / state

কোন পথে ত্রিপুরায় মমতার সমীকরণ ?

author img

By

Published : Jun 18, 2021, 7:29 AM IST

Updated : Jun 18, 2021, 2:20 PM IST

ত্রিপুরায় বিজেপির রাজনৈতিক সঙ্কট
ছবি

মুকুল রায় তৃণমূলে ফিরতেই গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছে ত্রিপুরার রাজনীতিতে । আবার কি তৃণমূলে ফিরবেন সুদীপ রায় বর্মণ ? আর এবার যদি সুদীপ তৃণমূলে ফেরেন, তাহলে বিজেপি ঘর ভেঙে আরও একঝাঁক বিদ্রোহী বিধায়ককে সঙ্গে নিয়েই পদ্ম ছাড়বেন বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বিজেপির অন্দরে ।

আগরতলা, 18 জুন : ত্রিপুরা । রাজনীতির দিক থেকে ভাবলে আজও প্রথমেই ,ত্রিপুরার সঙ্গে যাঁর নামটা সবার আগে আসে... তিনি মানিক সরকার । দীর্ঘদিনের বাম জমানা । তারপর কোনও পূর্বাভাস ছাড়াই এক কালবৈশাখীতে সিপিএমের সাজানো বাগান উড়িয়ে বিজেপি রাজ । তৃণমূল সেখানে ধারে কাছেও নেই । সংগঠনও তেমন উল্লেখযোগ্য নয় । কিন্তু এই বাঙালি অধ্যুষিত প্রতিবেশী রাজ্যটার দিকেই এবার নজর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) । গানও বেধে ফেলেছে তৃণমূল (Trinamool Congress) । ত্রিপুরা কইতাসে... মমতাদি আইতাসি । খেলা হবে গানের ত্রিপুরা ভার্সন আর কি !

নামে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস হলেও, এতদিন পর্যন্ত বাংলার বাইরে তৃণমূলের সেভাবে কোনও অস্তিত্ব ছিল না । কিন্তু একুশের বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে কার্যত দুরমুশ করে দেওয়ার পর থেকে সমীকরণ বদলাতে শুরু করেছে । দলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেই দিয়েছেন, তৃণমূল একটা-দুটো আসনের জন্য কোনও রাজ্যে যাবে না । গোটা রাজ্যটাকে জেতার জন্যই ঝাঁপাবে । সেটারই প্রথম ধাপ সম্ভবত ত্রিপুরা । আর মুকুল রায়ের প্রত্যাবর্তনের পর থেকে যেন তা আরও বেশি করে ফুটে উঠছে ।

জাতীয় রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাসঙ্গিকতা বেড়েছে । সর্বভারতীয় দলের ছাপটা আরও স্পষ্ট করতে চাইছেন নেত্রী । কিন্তু তাই বলে ত্রিপুরা ! পশ্চিমবঙ্গের মতো সেখানে মমতার সরকার নেই । সরকার দূরে থাক, সেখানে তো দলের কোনও সংগঠনই নেই । মুখ থুবড়ে পড়তে হবে না তো শেষ পর্যন্ত ?

এখানেই চলে আসছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক দূরদর্শিতা । রাজনীতিতে চিরন্তন বলে কিছু হয় না । সমীকরণ প্রতিমুহূর্তে পরিবর্তনশীল । আর সেটা ভালই বোঝেন তৃণমূল নেত্রী । প্রথমত, ত্রিপুরা মূলত বাঙালি অধ্যুষিত । তাই ভাষাগত ব্যবধানের প্রশ্নটি শুরু থেকেই থাকছে না । বিজেপির দিল্লির নেতাদের মতো সমস্যায় পড়তে হবে না তৃণমূলের নেতৃত্বকে ।

আরও পড়ুন : শুভেন্দুর দলত্যাগ বিরোধী আইনের হুঁশিয়ারি কতটা বাস্তব ?

দ্বিতীয়ত, বিপ্লব দেবের নেতৃত্বে ত্রিপুরার বিজেপি সরকারের অবস্থা কিন্তু বেশ টালমাটাল । অন্তর্দ্বন্দ্ব । গোষ্ঠীকোন্দল । কিছুতেই থামছে না । দিল্লি থেকে নেতারা আগরতলায় ছুটে আসছেন । কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে না । আর এটারই ফায়দা তুলতে চাইছেন মমতা ।

আর তাছাড়া ত্রিপুরা যে মমতার জন্য একেবারেই নতুন মাঠ, এমনটাও নয় । আগেও চেষ্টা করেছিলেন ত্রিপুরায় জমি পাওয়ার । তখন অবশ্য সফল হননি ।

সেইসময় ত্রিপুরার দায়িত্ব ছিল মুকুল রায়ের উপর । বেশ কিছুটা অগ্রসরও হয়েছিলেন তিনি । সংগঠন তৈরি হতে শুরু করেছিল । এক্ষেত্রে ত্রিপুরায় তৃণমূলের অন্যতম নেতাদের মধ্যে ছিলেন সুদীপ রায় বর্মণ । ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সমীররঞ্জন বর্মণের ছেলে । মুকুল রায়ই তাঁকে কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে নিয়ে এসেছিলেন । সঙ্গে ছিলেন আরও পাঁচ কংগ্রেস বিধায়ক । যে তৃণমূলের কোনও সংগঠনই ছিল না, সেই দল রাতারাতি ছয় বিধায়ককে নিয় বিরোধী দল হিসেবে উঠে এল । কিন্তু মুকুল রায় বিজেপিতে চলে যাওয়ার পরপরই তিনিও দলবল নিয়ে গেরুয়া শিবিরে নাম লেখান । আর তখনকার মতো ওখানেই ইতি পড়ে যায় ত্রিপুরায় তৃণমূলের জমি পাওয়ার স্বপ্নে ।

এখন মুকুল রায়ের প্রত্যাবর্তনের পর আবার 'প্রজেক্ট ত্রিপুরা' নিয়ে তৎপরতা শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে । এখনও তৃণমূলের নজরে সেই সুদীপ রায় বর্মণ । সুদীপবাবু বিজেপিতে গিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু স্বস্তিতে নেই সেখানে । 2018 সালে যখন বিজেপি ত্রিপুরায় সরকার গঠন করে, তখন তার পিছনে অনেকটা অবদান ছিল সুদীপের । অনেকেই ভেবেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী হবেন সুদীপ রায় বর্মণ । তিনি নিজেও হয়ত আশা করেছিলেন । কিন্তু তা হয়নি । বিপ্লব দেবকে বসানো হয় মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে । তখন থেকেই চাপা অসন্তোষ ছিল সুদীপ বর্মণের মধ্যে । প্রথমে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হলেও পরে তাও হাতছাড়া হয় । দলে তেমন কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদেও নেই তিনি । ত্রিপুরা বিজেপির ভিতরে তারপর থেকে বিপ্লব বিরোধী গোষ্ঠী হিসেবেই পরিচিত তিনি ।

আরও পড়ুন : Mukul Roy : কৃষকবন্ধু নিয়ে ভোলবদল তৃণমূলে ফেরা মুকুলের

দলের মধ্যে বেশ কিছু বিধায়কও বিপ্লব দেবের উপর বেজায় অসন্তুষ্ট । বিপ্লব হটাও বিজেপি বাঁচাও-এর মতো স্লোগানও উঠেছিল । সুদীপের নেতৃত্বে তাঁর অনুগামী বিধায়করা দিল্লিতেও গিয়েছিলেন দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে কথা বলতে । থুড়ি, বিপ্লবের বিরুদ্ধে নালিশ করতে । কিন্তু তাতেও কোনও কাজ হয়নি । এবার মুকুল তৃণমূলে ফিরতেই গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছে ত্রিপুরার রাজনীতিতে । আবার কি তৃণমূলে ফিরবেন সুদীপ ? আর এবার যদি সুদীপ তৃণমূলে ফেরেন, তাহলে বিজেপি ঘর ভেঙে আরও একঝাঁক বিদ্রোহী বিধায়ককে সঙ্গে নিয়েই পদ্ম ছাড়বেন বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বিজেপির অন্দরে ।

কিছুদিন আগেই ত্রিপুরাতে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় স্বশাসিত জেলাপরিষদ নির্বাচন হয়েছে । রাজ্যে শাসক দল হলেও সেখানে আশানরূপ কিছু করতে পারেনি বিজেপি । সম্প্রতি টিএমসি ফর ত্রিপুরা টুইটার হ্যান্ডেল থেকে দাবি করা হয়েছে, সেখানকার কমপক্ষে 13 জন বিধায়ক তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে । আর এরপরই নিজেদের জমি বাঁচাতে তৎপর হয় ওঠে বিজেপি । দিল্লি থেকে উড়ে আগরতলায় উড়ে আসেন বি এল সন্তোষ । বৈঠক করেন । কিন্তু বৈঠক কী কথা হয়েছে, তা নিয়ে প্রচণ্ড রকমের রাখ-ঢাক । বিপ্লব শিবিরই হোক বা সুদীপ শিবির... কোনওপক্ষই মুখ খুলতে চাইছে না ।

অর্থাৎ, বোঝাই যাচ্ছে তৃণমূলের যদি ত্রিপুরায় ঝোপ বুঝে কোপ মারার দরকার হয়, তবে তার জন্য মোক্ষম সময় এটাই । তবে তৃণমূল নেত্রী এও বোঝেন যে কাজটা এতটা সহজ নয় । রাতারাতি ত্রিপুরা হাতে আসবে না । এত সহজে বিজেপি তাদের জমি ছাড়বে না । তাই ত্রিপুরা বিধানসভা ভোটের দু'বছর বাকি থাকতেই আসরে নেমে পড়তে চাইছেন তিনি । আর এবারও সংগঠনের দায়িত্ব যদি থাকে মুকুলের ঘাড়ে, তবে রণকৌশলে অবশ্যই প্রশান্ত কিশোরের আইপ্যাক । এবারের পশ্চিমবঙ্গ ভোটে পিকের রণকৌশলের উপর ভরসা করেই কখনও খেলা হবে স্লোগানে, কখনও গানে বাজিমাত করেছে মমতা । এবার ত্রিপুরা জয়ের লক্ষ্যেও তাই মুকুলের পাশপাশি ভরসা রাখতে চাইছেন পিকের উপরেও ।

Last Updated :Jun 18, 2021, 2:20 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.