ETV Bharat / state

দানধ্যান স্বভাবসিদ্ধ, মৃত্যুর পর অঙ্গদান শ্রীতেশের

author img

By

Published : Aug 25, 2019, 11:51 AM IST

Updated : Aug 25, 2019, 11:56 AM IST

শ্রীতেশ

গত বৃহস্পতিবার স্টোক হয় শ্রীতেশ দত্ত রায়ের ৷ পরের দিন তাঁর ব্রেন ডেথ ঘোষণা করে চিকিৎসকরা ৷ এরপর শুক্রবার তাঁর লিভার প্রতিস্থাপিত করা হয় দমদমের বাসিন্দা ৫৬ বছর বয়সি এক পুরুষ রোগীর শরীরে ৷

কলকাতা, 25 অগাস্ট: অসুস্থতা তাঁকে কাবু করতে পারেনি । বইয়ের ব্যবসার পাশাপাশি দানধ্যান করতেও ভালোবাসতেন তিনি । তবে, ইদানিং কিডনি সংক্রান্ত সমস্যা বেড়ে যাওয়ায় কিছুই করতে পারতেন না । বরাবরই ইচ্ছা ছিল মৃত্যুর পর নিজের অঙ্গদান করবেন ৷ ইচ্ছা মতো, শুক্রবার রাতে লিভার প্রতিস্থাপিত করা হল এক রোগীর শরীরে । উলটোডাঙার EM বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালের ঘটনা ৷

শ্রীতেশ দত্ত রায় (47) । বাড়ি সোদপুর । গড়িয়াহাটে তাঁর বইয়ের দোকান । চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে কিডনি সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছিলেন ৷ গত বৃহস্পতিবার সকালেও সকলের সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলেছিলেন । সমস্যার সূত্রপাত হয় ওই দিন সকাল 11টা নাগাদ ৷ আচমকা বমি করতে শুরু করেন । গলব্লাডারে স্টোনের কারণে মাঝে মধ্যে বমি করতেনই । পরে ধীরে ধীরে ঠিকও হয়ে যেত ৷ সেদিন অতিরিক্ত বমি হওয়ার কারণে পরিবারের সদস্যরা প্রথমে তাঁকে স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে ভরতি করেন । সেখানে সিটি স্ক্যান হয় । সেখানকার চিকিৎসকরা জানান, রোগীর অবস্থা ভালো নয় । তাঁর চিকিৎসার জন্যে সেখানে যথাযথ পরিকাঠামো নেই । তাই তাঁরা রোগীকে স্থানান্তরিত করার পরামর্শ দেন । ওইদিনই বেলা দুটো নাগাদ উলটোডাঙার কাছে EM বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি একটি হাসপাতালে তাঁকে ভরতি করা হয় । চিকিৎসকরা জানান, স্ট্রোক হয়েছে শ্রীতেশবাবুর ৷ অবস্থা ভালো নয় । তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয় । পরদিন চিকিৎসকরা ব্রেন ডেথ ঘোষণা করেন ৷ ব্রেন ডেথ ঘোষণার পর শ্রীতেশবাবুর অঙ্গদানের সম্মতি জানান তাঁর পরিজনরা । তবে, তাঁর লিভার এবং কর্নিয়া দান করা সম্ভব হয়েছে ।


শ্রীতেশবাবুর জামাই বাপ্পা কর বলেন, "দানধ্যান করতে বরাবরই ভালোবাসতেন বাবা । রাস্তায় পড়ে থাকা অসুস্থ কোনও মানুষের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থাও করতেন । 2-3 বছর আগে ব্লাড সুগার ধরা পড়ে । এর জন্য আতঙ্কে থাকতেন । এরপরে কিডনি সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে । গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ডায়ালিসিস শুরু হয় । অঙ্গদানের ইচ্ছা ছিল । তাই আমরা অঙ্গদানের কথা বলি ।" পরিজনদের এই সম্মতি পাওয়ার পর শুরু হয় গ্রহীতার খোঁজ । শুক্রবার রাতে ওই বেসরকারি হাসপাতালেই দমদমের বাসিন্দা 56 বছর বয়সি এক রোগীর শরীরে লিভার প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয় । গতকাল সকালে এই প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় । শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, ওই লিভার গ্রহীতার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ।

বাপ্পা বলেন, "অঙ্গদান, মহৎ কাজ । বাবাকে দেখে আমরা শিখেছি । আমি ও আমার স্ত্রী অঙ্গদানের অঙ্গীকার করেছি ।"

Intro:কলকাতা, ২৪ অগাস্ট: অসুস্থতা তাঁকে কাবু করতে পারেনি। বইয়ের ব্যবসার পাশাপাশি বরাবরের মতো দানধ্যানেও মগ্ন থাকতেন তিনি। তবে, তাঁর কিডনি সংক্রান্ত সমস্যা বেড়ে যাওয়ার পর থেকে তিনি সেভাবে আর কিছুই করতে পারতেন না। যদিও তিনি চেয়েছিলেন, মৃত্যুর পরে তাঁর অঙ্গ যেন দান করা হয়। তাঁর এমন ইচ্ছা অনুযায়ী, শুক্রবার রাতে তাঁর লিভার প্রতিস্থাপিত হয়েছে এক রোগীর শরীরে। আর, তাঁর এই অঙ্গের মাধ্যমেই, তিনি এখন অন্য মানুষের শরীরে বেঁচে থাকবেন বলে আশায় রয়েছেন পরিজনরা।Body:তিনি, শ্রীতেশ দত্ত রায় (৪৭)। সোদপুরের বাসিন্দা। তাঁর বইয়ের দোকান রয়েছে গড়িয়াহাটে। কিডনি সংক্রান্ত সমস্যার কারণে গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে নিয়মিত তাঁর ডায়ালিসিস করানো হতো। তাঁর জামাই বাপ্পা কর বলেন, "গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯-১০টা পর্যন্ত সকলের সঙ্গে তিনি ভালোভাবে কথা বলেছেন। ১১টা নাগাদ আচমকা বমি করেন। গলব্লাডারে স্টোন রয়েছে। মাঝে মধ্যে বমি করতেন। সেরে যেত। সেদিন যে এমন হবে আমরা কেউ আন্দাজ করতে পারিনি।" ওই দিন তাঁকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে। সিটি স্ক্যান করা হয়। সেখানকার ডাক্তাররা জানান, রোগীর অবস্থা ভালো নয়। সেখানে চিকিৎসার জন্য যথাযথ পরিকাঠামো নেই। এর জন্য রোগীকে তাঁরা অন্য কোনও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেন।

এর পরে গত বৃহস্পতিবার বেলা দুটো নাগাদ উল্টোডাঙ্গার কাছে EM বাইপাসের ধারে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালে শ্রীতেশ দত্ত রায়কে ভর্তি করানো হয়। সেখানে তাঁকে ICU-তে রাখা হয়। ডাক্তাররা জানান, রোগী স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁর অবস্থা ভালো নয়। এর পরে তাঁকে ভেন্টিলেশনেও রাখা হয়। পরের দিন ডাক্তাররা জানান, এই রোগীর ব্রেন ডেথ ঘোষণা করা ছাড়া অন্য আর কোনও উপায় নেই। অবশেষে, গত বৃহস্পতিবার বিকালে ব্রেন ডেথ ঘোষণা করা হয়। ব্রেন ডেথ ঘোষিত এই রোগীর অঙ্গ দানের জন্য সম্মতি জানায় পরিজনরা। তবে, শ্রীতেশ দত্ত রায়ের শুধুমাত্র লিভার এবং কর্নিয়া দান করা সম্ভব হয়েছে।

বাপ্পা কর বলেন, "ব্রেন ডেথ ঘোষণার পরে অঙ্গ দানের বিষয়টি উনি জানতেন। মানুষের সেবা করতেন। দানধ্যান করতেন।" বই-খাতা, জামা কাপড়, শীতবস্ত্র সহ অর্থ বিভিন্নভাবে গরিব মানুষকে সাহায্য করতেন শ্রীতেশ দত্ত রায়। তাঁর জামাই বলেন, "রাস্তায় পড়ে থাকা অসুস্থ কোনও মানুষের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থাও করতেন তিনি।" কিডনি সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দেওয়ার আগে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। একথা জানিয়ে বাপ্পা কর বলেন, "২-৩ বছর আগে ব্লাড সুগার ধরা পড়ে। এর জন্য আতঙ্কে থাকতেন তিনি। এর পরে কিডনি সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে তাঁর ডায়ালিসিস করানো শুরু হয়।"

একই সঙ্গে তিনি বলেন, "রাস্তায় কেউ হয়তো বিনা চিকিৎসায় পড়ে রয়েছেন, তাঁর জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থাও করতেন তিনি। কিছু হয়ে গেলে, তাঁর অঙ্গ দানের কথা বলতেন উনি। ওনার ইচ্ছা অনুযায়ী আমরা অঙ্গ দানের কথা বলি।" পরিজনদের এই সম্মতি পাওয়ার পর শুরু হয় অঙ্গ গ্রহীতার খোঁজ। তবে, কিডনি সংক্রান্ত সমস্যার কারণে শেষ পর্যন্ত ব্রেন ডেথ ঘোষিত এই রোগীর লিভার এবং কর্নিয়া ছাড়া অন্য আর কোনও অঙ্গ অন্য কোনও রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপনের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হয়নি। ক্রনিক কিডনি ডিজিজ থাকার কারণে এই রোগীর দুই কিডনি প্রতিস্থাপনের যোগ্য ছিল না অন্য কোনও রোগীর শরীরে। তাঁর হৃদযন্ত্রও অন্য কোনও রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপনের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হয়নি।Conclusion:শুক্রবার রাতে ব্রেন ডেথ ঘোষিত এই রোগীর লিভার বেসরকারি ওই হাসপাতালে এক পুরুষ রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। শনিবার সকালে এই প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। দমদম এর বাসিন্দা ৫৬ বছর বয়সি এক রোগীর শরীরে শ্রীতেশ দত্ত রায়ের লিভার প্রতিস্থাপিত হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, এই লিভার গ্রহীতার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। বাপ্পা কর বলেন, "অঙ্গ দান, মহৎ কাজ। অঙ্গ দানের জন্য আমার এবং আমার স্ত্রীর ইচ্ছা রয়েছে।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "শ্বশুরমশায় দানধ্যানের মধ্যে থাকতেন। ওনার লিভারের মাধ্যমে এখন অন্য মানুষের মধ্যে উনি বেঁচে থাকবেন।"

_______


ছবি:
wb_kol_01a_brain_death_liver_donor_pic_7203421
ব্রেন ডেথ ঘোষিত রোগী শ্রীতেশ (Sritesh) দত্ত রায়




Last Updated :Aug 25, 2019, 11:56 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.