ETV Bharat / sports

প্রেম দিবসে সম্প্রীতির আলোয় ময়দানের 'খেলাঘর'

author img

By

Published : Feb 14, 2021, 11:47 AM IST

valentine's day: sports celebrities send message of harmony
বেটার হাফের সঙ্গে সুনীল।

লাভ জিহাদ নয়, প্রেম দিবসে সম্প্রীতির বার্তা ময়দানের খেলাঘরে। খেলার দুনিয়ায় নানা ভিনধর্মী যুগলের ভালোবাসা রীতিমতো নজির সৃষ্টি করেছে। ধর্মের বেড়াজাল ভুলে এখন তাঁদের সুখের সংসার।

কলকাতা, 14 ফেব্রুয়ারি: প্রেম কত কিছু বদলে দেয় । প্রেম করে বিয়ে করে বনানী হয়েছিলেন আতিয়া বেগম। ডাক নাম ছিল ঝুমু । কাছের মানুষ জন তাঁকে ডাকতেন ওই নামে । পঞ্চাশ বছর আগে উত্তর কলকাতার বনানী কিন্তু প্রেমের টানে পালটে ফেলেছিলেন ধর্ম । তাঁর স্বামী বা তিনি নিজে কোনওদিন এই ব্যাপারে আলোচনা চাইতেন না । একেবারে গোঁড়া মুসলিম, স্বল্প কথার মানুষ সৈয়দ নইমুদ্দিন কীভাবে বাঙালি মেয়ে বনানীর সঙ্গে প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন তা আলোচনার বিষয় ।

1966 সালে নিজামের শহর থেকে কলকাতায় খেলতে এসেছিলেন নইম । যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে অনুশীলন করতেন । সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে ফুটবলে প্রতিনিধিত্ব করতেন । সেখান থেকেই দুজনের ভালোলাগা এবং ভালোবাসা। কাছের মানুষরা বলেন, শৃঙ্খলার ঘেরাটোপে থাকতে ভালোবাসা নইমুদ্দিনকে আরও বেশি কেতাদুরস্ত করে তুলেছিলেন তাঁর স্ত্রী । একদা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী বনানী তাঁর ভালোবাসার মানুষকে সাফল্যের রাজপথে হাঁটতে দিয়ে নিজেকে কার্যত স্বেচ্ছাবন্দি করে রেখেছিলেন ।

কোভিড অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে । নইম-বনানীর সংসার ভেঙে দিয়েছে মারণ ভাইরাস । দুরুদুরু বুকে ফুটবলের প্রথম দ্রোণাচার্যকে ফোন করেছিলাম বিশ্বজোড়া প্রেম দিবসের আগে । "এত কিছু থাকতে এই ব্যাপারে আমাকে ফোন করলেন কেন ? আমি আগ্রহী নই," সামান্য নীরবতার পরে ফের দ্রোণাচার্যের গলায় প্রয়াত প্রিয় মানুষটির জন্য হাহাকার । "আমাকে বুঝে চলতে পারত । সবকিছু মেনে নিয়ে সংসারটা আগলে রাখত । কীভাবে এখন থাকছি তা উপরওয়ালা জানেন । এই একাকীত্ব কষ্টদায়ক, সহ্য করা যায় না ।"

ফুটবল পরিসংখ্যানবিদ এবং ঐতিহাসিক কুশল চক্রবর্তী বলছিলেন,"কলকাতা ময়দান বড় বিচিত্র দুনিয়া । কলকাতা শহরের একটুকরো ফুসফুসে কত মানুষ কীভাবে শ্বাস খুঁজে পান, তা খুঁজলে একটা এনসাইক্লোপিডিয়া হয়ে যাবে । যেখানে ধর্মের সীমা-না মেনে হৃদয়ের ডাকে সাড়া দেয় সবাই । আল্লা ভগবানের সহাবস্থানের এমন নজির বোধহয় বর্তমান রাম রহিমের ভারতবর্ষে বড় দরকার ।"

ভারতীয় ফুটবলের যাদুকর আমেদ খানের স্বপ্নের রানি ছিলেন মেডিক্যাল কলেজের নার্স অঞ্জলি । চোটের শুশ্রূষা করাতে গিয়ে দুজনের প্রেমের সুত্রপাত । প্রেমিকাকে ডার্বির টিকিট দিয়েছিলেন আমেদ । ওই ম্যাচে মোহনবাগানের অনির দে-র সঙ্গে মারপিট করেছিলেন তিনি । গ্যালারিতে বসে সেই সব দৃশ্য দেখেছিলেন অঞ্জলি । তবে সে দিনের ঘটনা আমেদ-অঞ্জলির প্রেমে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি । বেঙ্গালুরুতে সংসার পেতেছিলেন ওঁরা।

valentine's day: sports celebrities send message of harmony
প্রেমদিবস পালন

এই শহরে খেলতে এসে বাঙালি মেয়ে বিয়ে করেছেন আরও অনেকে । ফুটবলারদের মধ্যে প্রয়াত পুঙ্গম কান্নন, ভেঙ্কটেশ, কিংবা উলগানাথন, রামন বিজয়ন সকলেই বাঙালি মেয়ের পানিগ্রহণ করেছিলেন এবং তা চুটিয়ে প্রেম করার পরে ।

এভরিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ অ্যান্ড ওয়ার । কথাটা আরও বেশি করে কানে বাজে কলকাতা ময়দানের ক্রীড়াদুনিয়ার প্রেমপর্বের দিকে তাকালে ।

আরও পড়ুন: প্রেমের দিনে উত্তাপ বাড়াবে সুয্য়িমামাও!

উত্তর কলকাতার দীপ্তির সঙ্গে ভেঙ্কটেশের যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলেন মোহনবাগানের তারকা অনিল দে । ইস্টবেঙ্গলের পঞ্চপাণ্ডবের অন্যতম ভেঙ্কটেশ বিয়ে করে কলকাতায় থেকে গিয়েছিলেন । ভবানিপুর, বেহালা হয়ে প্রয়াত ভেঙ্কটেশের স্ত্রী দীপ্তি থাকেন তাঁর বড় ছেলের কাছে, দমদমের মোতিঝিলে ।

ক্রিকেটারদের মধ্যে অরুণলাল, অশোক মালহোত্রা এই শহরে খেলতে এসে তাঁদের "লেডি লাভ" খুঁজে পেয়েছিলেন। প্রাক্তন টেনিস তারকা জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী শরমিন। তারকা ডেভিস কাপারের যাবতীয় দেখভাল শরমিনের দায়িত্বে । অ্যাকাডেমি থেকে অন্যান্য সব বিষয় শরমিনের হাতে ছেড়ে দিয়ে জয়দীপ বেশ রয়েছেন । এখানে ধর্মের আগল শুধুই শব্দমাত্র ।

ভারতীয় ফুটবল দলের বর্তমান অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী কীভাবে তদানীন্তন কড়া মেজাজের ক্লাব কোচ সুব্রত ভট্টাচার্যের চোখ এড়িয়ে তাঁরই মেয়ের সঙ্গে প্রেম করেছিলেন তাও এক মজার গল্প। সুনীল-মেমের সংসার এখন ভালোবাসায় মোড়া ।

একযুগের কাছাকাছি হয়ে গেল মেহতাব-মৌমিতার বিয়ে । বারুইপুরের মেহতাব হোসেনের সঙ্গে তিনটে স্টেশন দূরে পড়তে যাওয়া মৌমিতার আলাপ এবং প্রেম,পরিণয় । "আমাদের সংসারে লক্ষ্মীর সিংহাসনের পাশে মক্কা মদিনার অবস্থান । ধর্ম নিয়ে কোনওদিন ভাবিনি । কোনও ফ্যাক্টর নয় আমাদের কাছে । ফুটবল খেলাটা বা যেকোনও খেলা ধর্মের বেড়াটা জাস্ট উড়িয়ে দেয় বুঝলে দাদা । তবে প্রেম যে বদলে দেয় তা মানি। মৌমিতার সাহচর্য আমাকে বদলে দিয়েছে । দুই ছেলেকে নিয়ে আমাদের ছোট পরিবার সুখী পরিবার," তৃপ্তি, প্রশান্তি ঝড়ে পড়ে মেহতাব ভিকি হোসেনের গলায়। মৌমিতা নিয়মিত দক্ষিণেশ্বরে যেতেন বলে মেহতাবও সঙ্গী হতেন। অভি দত্তরায়ের কোচিংয়ে ফুটবল শিক্ষা লাভ করা মেহতাবের আদর্শ ছিলেন বাসুদেব মণ্ডল, অমিত দাস । ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের প্রাক্তন মিডফিল্ডার রায়ান গিগসের ভক্ত মেহতাব বাড়িতে বিফ খান না স্ত্রী-র আবেগ আঘাত প্রাপ্ত হতে পারে বলে । লক্ষ্মীপূজার নাড়ু বানানোতে হাত লাগান । আবার সিমুইয়ে পাক ঠিক করেন দুজনে । ধর্ম এবং ভালোবাসা মেহতাব-মৌমিতার সংসারে হাত ধরাধরি করে চলে ।

আরও পড়ুন: ভীষণ প্রেম পাচ্ছে শ্রীলেখার !

লাইবেরিয়া থেকে ফুটবলকে আঁকড়ে কলকাতায় পা দেওয়া আনসুয়োমা ক্রোমা এখন সাদিয়া পূজাকে নিয়ে সুখের ঘর বেঁধেছেন। ওদের মিস্টি একটি মেয়ে হয়েছে সম্প্রতি। ফুটবল মিলিয়ে দেয় ধর্মপ্রাণ ক্রোমা এবং দমদমের বাঙালি মেয়ে পূজাকে।

আইএসএলের এটিকে মোহনবাগানের হয়ে নিয়মিত খেলা শুভাশিস বসু এবং পুষ্পা থাপার প্রেম নয়া সেনসেশন। সন্দেশ ঝিঙ্গানের রাশিয়ান লেডিলাভ ইভাঙ্কার প্রেম এখন হাবাসের সংসারে বসন্তের আগমনী।

ময়দান শ্বাস নেয় সবুজ ঘাসে। মাঘের শিশির মেখে ফাগুনের অপেক্ষায় থাকে সে । কোকিলের ডাক সেই আগমনী । যেখানে বিশ্বপ্রেম দিবসে ধর্মের জিগির তুলে "লাভ জিহাদ" নেই । বরং"কে প্রথম কাছে এসেছি" বলে হৃদয় দেওয়ার পালা সংগঠিত হয়।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.