ETV Bharat / sports

নির্বাপিত প্রদীপ স্মরণ

author img

By

Published : Mar 20, 2021, 4:35 PM IST

প্রশিক্ষক প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পেপ টকে উদ্বুদ্ধ হয়ে শুধু ম্যাচ জেতাননি ফুটবলাররা । জীবনের অর্থ খুঁজে পেয়েছেন । সুভাষ ভৌমিক, সুরজিৎ সেনগুপ্ত, সুধীর কর্মকার, সমরেশ চৌধুরী, গৌতম সরকার সহ অগনিত নামের সারি তাঁর ছাত্র তালিকায় । সেই প্রদীপ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের আজ প্রথম প্রয়াণ দিবস ৷

pk-banerjee-death-aniversary
নির্বাপিত প্রদীপ স্মরণ

কলকাতা, 20 মার্চ : সময় চলিয়া যায় নদীর স্রোতের মত, কথাগুলো বলতেন প্রয়াত কিংবদন্তী ফুটবলার প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় । ভারতীয় ফুটবলের পিতামহ নিজের খেলোয়াড় এবং কোচিং জীবন থেকে পাওয়া অভিজ্ঞার ভাণ্ডার থেকে মণিমুক্ত বিলিয়ে গিয়েছেন ৷ যা আইএসএল অধ্যুষিত ভারতীয় ফুটবলে সমান প্রাসঙ্গিক। দীর্ঘ রোগভোগের পরে গতবছর 20 মার্চ দুপুরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন প্রদীপকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় । পোষাকি নামের আলখাল্লা সরিয়ে পিকে নামেই সমাদৃত সকলের কাছে । ফুটবল জ্ঞান তাঁর সহজাত। পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন অধ্যায়ে তাঁর ছিল অনায়াস চলাচল।

2019 সালে তিন প্রধানের বাইরে কলকাতা লিগ জিতেছিল পিয়ারলেস। এর আগে এই কৃতিত্ব ছিল প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পূর্ব রেলের । 61 বছর আগের রেকর্ড ভাঙার দিনে নবীন চ্যাম্পিয়নকে স্বাগত জানিয়েছিলেন প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় । 1961 সালে অর্জুন, 1990 সালে পদ্মশ্রী সম্মানে সম্মানিত মানুষটি গত শতকের সেরা ভারতীয় ফুটবলার হিসেবে নির্বাচিত।আইএফএফএইচ যে সম্মান তাঁকে দিয়েছিল, তাতে বাড়তি পালক যোগ হয়েছিল ফিফার দেওয়া ফিফা অর্ডার অব মেরিট সম্মানে । 1951 সালে যে কিশোর মাত্র 15 বছর বয়সে বিহারের হয়ে সন্তোষ ট্রফিতে খেলতে নেমে নজর কেড়েছিল ৷ তাঁর কলকাতা ময়দানে দু’বছর পরে অভিষেক হয়েছিল এরিয়ানের জার্সিতে । পরবর্তী পর্যায়ে একযুগের বেশি সময় পূর্ব রেলের জার্সিতে শুধু দাপিয়ে বেড়াননি, ভারতীয় ফুটবলে সাম্রাজ্য কায়েম করেছিলেন পিকে । যার পেছনে ছিল না বড় ক্লাবের আশীর্বাদ, যে শুধু ফুটবল নৈপুণ্যে শান দিয়ে চোখে চোখ রেখে সবার সঙ্গে পাল্লা দিয়েছিলেন । ফলে প্রদীপের তুলনা ছিলেন শুধু মাত্র ‘পিকে ব্যানার্জি’ । 1955 থেকে 1967 পর্যন্ত দেশের জার্সিতে 45টি ম্যাচে 14টি গোল রয়েছে তাঁর । সেই গোল এশিয়ান গেমসে দেশকে সোনার পদক দিয়েছে ৷ দিয়েছে অলিম্পিকের মঞ্চে ভারতীয় ফুটবলের সগর্ব উপস্থিতি।

রহিম সাহেব পরবর্তী ভারতীয় ফুটবলে কোচিং-এর ব্যাটন তিনিই সফলভাবে বহন করেছিলেন । ক্লাব ফুটবলে কলকাতার তিন প্রধানের ডাগআউটে বসে অসাধারণ পারফর্মেন্স কোচ প্রদীপ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়কে কিংবদন্তি পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল । যা অন্যদের কাছে ছিল অনুসরণ যোগ্য। আজও ভারতীয় ফুটবলে কোচেদের ইয়ার্ডস্টিক পিকের সাফল্যের প্রিজমে মাপা হয়। নিয়ম শৃঙ্খলা তাঁর জীবনের সাফল্যের চাবিকাঠি । ছোটবেলায় পিতৃহীন প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন, তাঁর পরিবারের ফাদার ফিগার । যার অনুপস্থিতি আজও তাড়িয়ে বেড়ায় ভাই প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে । তিনি বলেন, ‘‘দাদা আমার জীবনে ছিলেন ধ্রুবতারার মতো । পারিবারিক জীবনে ছিলেন বাবার মতো আশ্রয় স্থল । মাঠে ছিলেন কড়া মাস্টার মশাই । মাঠের বাইরে ছিলেন বন্ধু, ফিলোজ়ফার এবং প্রকৃত পথপ্রদর্শক । একবছর পরেও তাঁর অনুপস্থিতি আমার এবং আমাদের জীবনে অবিশ্বাস্য মনে হয়,’’ বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারের মাঝে ব্যাথাতুর শোনায় প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলা ।

আরও পড়ুন : বিনিয়োগকারী সংস্থার কর্ণধার আসছেন, মিটবে কি ইস্টবেঙ্গলের চুক্তি জট ?

প্রশিক্ষক প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পেপ টকে উদ্বুদ্ধ হয়ে শুধু ম্যাচ জেতাননি ফুটবলাররা । জীবনের অর্থ খুঁজে পেয়েছেন । সুভাষ ভৌমিক, সুরজিৎ সেনগুপ্ত, সুধীর কর্মকার, সমরেশ চৌধুরী, গৌতম সরকার সহ অগনিত নামের সারি তাঁর ছাত্র তালিকায় । প্রয়াত পি কে বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্যা পলা বন্দ্যোপাধ্যায় পেশায় অধ্যাপিকা । নিজে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেন । তাঁর চোখে, ‘‘বাবার গুরুকুল কোনও সিলেবাসে আটকে থাকা পরিসর নয় । সেখানে কোনও ‘মেড ইজি’ পথ নেই । গুরু শিষ্য পরম্পরা বিশ্বাসের মধ্যে দিয়ে গড়া । একজন মানুষের হাতে বিশ্বাস করে জীবন ছেড়ে দেওয়া সহজ নয় । তাই বাবার শিক্ষকতার সঙ্গে আমাদের তুলনা চলে না।’’


ফুটবল মাঠ থেকে সরে গিয়েও নিয়ম করে নিজের মত করে ফিটনেস বজায় রাখার চেষ্টা চালাতেন প্রদীপ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় । তিরাশি বছর বয়সেও ছিলেন তাজা মনের মানুষ । কিন্তু সবাইকে থামতে হয় । তাই অসুস্থতার সঙ্গে মরিয়া লড়াই চালিয়ে নির্বাপিত হয়েছিল প্রদীপ । ‘বিয়ন্ড নাইন্টি মিনিটস’ তাঁর আত্মজীবনীর নাম । যা এখনও প্রাসঙ্গিক। 20 মার্চ ভারতীয় ফুটবল হারিয়েছিল তার শিল্পী ফুটবলার কৃশানু দে-কে। প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম প্রিয় শিষ্য ছিলেন বাঁ পায়ের ফুটবলারটি । একই দিনে চলে গিয়েছিলেন সঙ্গীত শিল্পী অখিলবন্ধু ঘোষ । যাঁর ‘‘ও দয়াল বিচার করো’’ গানটি ভীষণ প্রিয় ছিল পিকের। পরপাড়ে বসে হয়তো সমকালের বিচার দেখছেন কিংবদন্তি এই ফুটবল ব্যক্তিত্ব।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.