কলকাতা, 19 অক্টোবর : থাকে বহুল প্রচার। পুলিশের পক্ষ থেকে শোনানো হয় সতর্কবাণী। কলকাতার সর্বত্র রাখা হয় কড়া নজর। তারপরও কালীপুজোর রাতে থামানো যায় না শব্দদানবকে। প্রশ্ন ওঠে, এত নজরদারির পরেও কি করে শহরে ঢুকল এত শব্দবাজি? দীর্ঘ বিচার বিশ্লেষণের পর তার উত্তর খুঁজে পেল পুলিশ। পুলিশের সূত্র বলছে, যখন শব্দবাজির নিয়ে নজরদারি থাকে না, তখনই কলকাতায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয় সে সব৷ চুপিসারে, সন্তর্পণে।
সবে দুর্গাপুজোর ঢাকে কাঠি পড়েছে। বেশ কিছু জেলায় দুর্গাপুজোয় বাজি পোড়ানোর রেওয়াজ থাকলেও কলকাতা এবং শহরতলিতে বাজি পোড়ানো হয় মূলত দীপাবলিতে। কিন্তু এ রাজ্যে 90 ডেসিবেলের উপর শব্দবাজির ব্যবহার নিষিদ্ধ। সেই সূত্রে গত বছরও নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা। কালীপুজা এবং দীপাবলির সন্ধ্যায় শব্দতাণ্ডবের জেরে অনুজের নির্দেশ ছিল, কড়া হাতে দমন করতে হবে শব্দবাজির ব্যবহার। কিন্তু কোথায় কী! কলকাতা ছিল কলকাতাতেই। নাগরিকদের একাংশ দেদার ফাটান শব্দবাজি। প্রায় বিনা বাধায়, অবলীলায়।
![banned_fire_cracker_recovered_at_topsia](https://etvbharatimages.akamaized.net/etvbharat/prod-images/wb-kol-04-bannedfirecrackerrecovered-7201045_18102020211452_1810f_02605_550.jpg)
কালীপুজোর রাতে গত বছর তুবড়ির খোল প্রাণ কেড়েছে দু-জনের। বেহালার বড়িশায় ঠাকুমার সঙ্গে রাস্তায় বেরিয়ে প্রাণ হারিয়েছে শিশু। না, সে বাজি ফাটাচ্ছিল না। তুবড়ি পোড়াচ্ছিল অন্য কেউ। হঠাৎই একটি তুবড়ি ফেটে যায়। তার খোল গিয়ে বিঁধে যায় পাঁচ বছরের আদি দাসের গলায়। মুহূর্তে ঠাকুমার গায়ের উপর ঢলে পড়ে সে। গলা দিয়ে ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসে রক্তস্রোত। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বিদ্যাসাগর হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। দুঃখজনক এই ঘটনার খবর পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী ফোন করেন কলকাতার নগরপালকে। বিদ্যাসাগর হাসপাতালে ছুটে যান অনুজ শর্মা। অন্যদিকে, কসবার উত্তর পাড়ায় নিজেই তুবড়ি পোড়াচ্ছিলেন দীপ কুমার কোলে। বয়স 40। এ ক্ষেত্রেও তুবড়ি ফেটে গিয়ে খোলের টুকরো বিঁধে যায় গলায়। মৃত্যু হয় দীপের। ঘটনাস্থলে ছুটে যান কলকাতার তৎকালীন মেয়র তথা বর্তমান প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম।
![banned_fire_cracker_recovered_at_topsia](https://etvbharatimages.akamaized.net/etvbharat/prod-images/wb-kol-04-bannedfirecrackerrecovered-7201045_18102020211452_1810f_02605_585.jpg)
তা সত্ত্বেও এ সব ঘটনা শহরবাসীকে শিক্ষা দেয়নি। দীপাবলিতে শব্দদৈত্যের আবাহনের প্রস্তুতি এখন থেকেই শুরু করে দিয়েছে কলকাতা! অসাধু ব্যবসায়ীরা আগেভাগেই সেরে রাখছেন কাজ। গতকাল বিশেষ সূত্রে খবর পেয়ে পূর্ব তপসিয়া রোডে আটক করা হয় একটি গাড়ি। তাতে ছিল 31 কার্টুন চকোলেট বোমা। যা ওজনে 1550 কেজি। প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে, দক্ষিণ 24 পরগনার চম্পাহাটি থেকে ওই বাজি শহরে ঢোকানো হচ্ছিল। গাড়িতে ছিল শুধুই ড্রাইভার। তার নাম শংকর মল্লিক, বয়স 50 বছর। পুলিশ বাজি আটক করেছে। ওই বাজি কার হাতে পৌঁছে দিতে যাচ্ছিল সে? শংকরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তা জানার চেষ্টা চলছে।