নয়াদিল্লি, 8 ডিসেম্বর: বিচারপতিদের কাছ থেকে তাঁদের ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করা প্রচার করা প্রত্যাশিত নয় ৷ কলকাতা হাইকোর্টের একটি রায় সংক্রান্ত মামলায় এমনই মত প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্ট ৷ সেখানে কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের কড়া সমালোচনা করা হয়েছে ৷ ওই রায়ে কলকাতা হাইকোর্ট এক তরুণীকে তাঁর ‘যৌন আকাঙ্খা নিয়ন্ত্রণের’ এবং এক কিশোরকে নারীদের সম্মান করা শেখার পরামর্শ দিয়েছিল ৷
সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি অভয় এস ওকা ও পঙ্কজ মিথালের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয় এ দিন ৷ সেখানে কলকাতা হাইকোর্টের হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণকে ‘অত্যন্ত আপত্তিকর ও অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করেছে শীর্ষ আদালত ৷ পাশাপাশি আদালত জানিয়েছে, এই ধরনের পর্যবেক্ষণ সংবিধানের 21 অনুচ্ছেদের অধীনে কিশোর-কিশোরীদের অধিকারের সম্পূর্ণ লঙ্ঘনও বটে ।
গত 18 অক্টোবর সংশ্লিষ্ট মামলাটির রায় দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ হাইকোর্টের বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাশ ও পার্থসারথি সেনের ডিভিশন বেঞ্চ ওই রায় দেয় ৷ সেখানে বেঞ্চ বলে যে কিশোরী মেয়েদের উচিত ‘যৌন প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করা’ এবং ‘দু’মিনিটের আনন্দ না দেওয়া’ ৷
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, এক ব্যক্তিকে আদালত ভারতীয় দণ্ডবিধির 363 (অপহরণ) এবং 366 (অপহরণ, অপহরণ বা মহিলাকে বাধ্য করার জন্য প্ররোচিত করা) এবং পকসো আইনের 6 নম্বর ধারা অনুযায়ী দোষী সাব্যস্ত করা হয় 2022 সালের 19-20 সেপ্টেম্বর ৷ সেই রায় বৈধ কি না, তা নিয়েই রায় দেওয়ার কথা ছিল কলকাতা হাইকোর্টের ৷
শীর্ষ আদালত এ দিন আরও জানিয়েছে, দেশের প্রধান বিচারপতির আদেশ অনুসারে, হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ দ্বারা রেকর্ড করা সুস্পষ্ট পর্যবেক্ষণ বা ফলাফলের কারণে স্বতঃপ্রণোদিত রিট পিটিশন দাখিল করা শুরু করা হয়েছে । দোষী সাব্যস্ত হওয়ার বিরুদ্ধে আপিলের ক্ষেত্রে, হাইকোর্টকে শুধুমাত্র আপিলের যোগ্যতার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল এবং অন্য কিছু নয় । তাই এই ধরনের ক্ষেত্রে বিচারপতিদের তাঁদের ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ বা প্রচার করা উচিত নয় ।
বেঞ্চ বলেছে, "রায় মনোযোগ সহকারে বিবেচনা করার পরে আমরা দেখতে পেয়েছি যে অনুচ্ছেদ 30.3-সহ এর অনেকগুলি অংশ অত্যন্ত আপত্তিকর এবং সম্পূর্ণ অযৌক্তিক । প্রাথমিকভাবে, উল্লিখিত পর্যবেক্ষণগুলি সংবিধানের 21 অনুচ্ছেদের অধীনে কিশোর-কিশোরীদের অধিকারের সম্পূর্ণ লঙ্ঘন হয়েছে ৷ প্রাথমিক দৃষ্টিতে, আমরা মনে করি যে বিচারপতিদের ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করা বা প্রচার করা প্রত্যাশিত নয় ৷"
এই মামলায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও অন্যান্য পক্ষকে নোটিশ জারিও করেছে সুপ্রিম কোর্ট ৷ শীর্ষ আদালত সিনিয়র আইনজীবী মাধবী দিভানকে আদালতকে সহায়তা করার জন্য অ্যামিকাস কিউরি এবং অ্যামিকাসকে সহায়তা করার জন্য আইনজীবী লিজ ম্যাথিউকে নিযুক্ত করেছে । আগামী 4 জানুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি ৷
যৌন নিপীড়নের অপরাধে 20 বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত একটি ছেলের আপিলের শুনানির সময় হাইকোর্ট এই পর্যবেক্ষণ করেছিল । হাইকোর্ট ছেলেটিকে বেকসুর খালাস দিয়েছিল ৷ রায়ে হাইকোর্ট জানায়, এটি দুইজন কিশোর-কিশোরীর মধ্যে উভয়ের সম্মতিতে অ-শোষণমূলক যৌন সম্পর্কের একটি মামলা ৷ তাই কিশোরীর বয়স বিবেচনা করার বিষয়টি অমূলক । একই সঙ্গে হাইকোর্ট যৌন ইচ্ছা নিয়ন্ত্রণ ও নারীকে সম্মান করার বিষয় শেখা উচিত সংক্রান্ত বিষয়গুলি উল্লেখ করে সমালোচনামূলক মন্তব্য করেছিল ৷
সংবাদসংস্থা - পিটিআই
আরও পড়ুন:
