ETV Bharat / bharat

75 Years of Independence বিদ্রোহের লেখা থেকে স্বাদেশিকতার সুর, পরাধীন ভারতে আগুন ঝরেছিল যাঁদের কলমে

author img

By

Published : Aug 14, 2022, 8:30 PM IST

indian writers and poets who shaped the freedom struggle
পরাধীন ভারতে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আগুন জ্বেলেছিলেন লেখক কবিরা

পরাধীন ভারতে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আগুন জ্বেলেছিলেন লেখক-কবিরা ৷ স্বাধীনতার 75 বছর পূর্তির (75 Years of Independence) প্রাক-মুহূর্তে তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা ইটিভি ভারতের ৷

কলকাতা, 14 অগস্ট: স্বাধীনতার 75তম বর্ষপূর্তির প্রাক-লগ্নে দেশ ধীরে ধীরে সেজে উঠছে তেরঙায় ৷ দেশ স্মরণ করছে তার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ৷ চলছে 'হর ঘর তিরঙা' ও 'আজাদি কা অমৃত মহোৎসব' কর্মসূচি ৷ আর কয়েকঘণ্টা পর, সোমবার সকালেই লালকেল্লা থেকে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে স্বাধীনতার হীরক জয়ন্তী বর্ষে (75 Years of Indian Independence) দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ এই গর্বের মুহুর্তে স্মরণ করা যাক ভারতের কয়েকজন কবি-লেখককে, যাঁদের লেখনী পরাধীন ভারতে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়তে উদ্বুদ্ধু করেছিল, অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল ও প্রতিবাদের আগুন জ্বলেছিল লাখ লাখ পরাধীন ভারতবাসীর হৃদয়ে (writers and poets who shaped the freedom struggle) ৷

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: কেবল দেশের জাতীয় সংগীত 'জনগণমন'-এর রচয়িতা বললে ভুল হবে, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) অবদানের ব্যাপ্তি ও পরিসর আরও বড় ৷ দেশবাসীকে স্বাধীনতা আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করতে 1911 সালে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন 'ভারত ভাগ্য বিধাতা' ৷ পরবর্তীকালে তাঁর রচিত এই কবিতারই প্রথম অনুচ্ছেদ দেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে গৃহীত হয় ৷ ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বারবার গর্জে উঠেছে তাঁর কলম ৷ 1919 সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি ব্রিটিশদের দেওয়া 'নাইটহুড' উপাধি ত্যাগ করেন ৷ তার আগে ইংরেজদের বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে 1905 সালে রাখি বন্ধন উৎসব পালন করেছিলেন কবি ৷ বস্তুত ব্রিটিশ বিরোধী, জাতীয়তাবাদী তাঁর বিভিন্ন লেখা, বিভিন্ন সভায় তাঁর বক্তৃতা যুব ও তৎকালীন নাগরিক সমাজে এমন প্রভাবে ফেলেছিল যে ব্রিটিশ পুলিশের নজরেও পড়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৷ সে সময় প্রতিবাদ আর রবি ঠাকুর প্রায় সমার্থক হয়ে উঠেছিলেন ৷ যাবতীয় বাধা অতিক্রমে 'একলা চলো রে'র ডাক দিয়েছিলেন তিনি ৷ 'গীতাঞ্জলি' কাব্যগ্রন্থের জন্য 1913 সালে নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত হন তিনি ৷ তাঁর লেখনীর গুণেই রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর বহু বছর পর 1971 সালে কবির লেখা 'আমার সোনার বাংলা' বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে গৃহীত হয় ৷

আরও পড়ুন: ভার্গিস কুরিয়েন, ভারতে শ্বেত বিপ্লবের জনক

কাজি নজরুল ইসলাম: তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামে কাজি নজরুল ইসলামের (Kazi Nazrul Islam) বিভিন্ন লেখা ও কবিতা কার্যত অনুঘটকের কাজ করেছিল ৷ তাঁর নানা প্রতিবাদী লেখার জন্যই অবিভক্ত ভারতে 'বিদ্রোহী কবি' হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন নজরুল ৷ পরে অবশ্য বাংলাদেশের জাতীয় কবির তকমা পান তিনি ৷ 1917 থেকে 1920 সাল পর্যন্ত সেনাবাহিনীতে কাটালেও, লেখার প্রতি তাঁর টান ছিল বরাবর ৷ 1921 সালে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়ে পথে নামেন নজরুল ৷ 1922 সালে প্রকাশিত হয় তাঁর বিখ্যাত 'বিদ্রোহী' কবিতা ৷ গোটা দেশে পরিচিতি পান নজরুল ৷ তাঁর এই প্রতিবাদী লেখার জন্যই পড়ে যান ব্রিটিশ পুলিশের নজরে ৷ ওই বছরই প্রকাশিত হয় নজরুল ইসলাম সম্পাদিত 'ধূমকেতু' পত্রিকা ৷ তাঁর এই পত্রিকাকে আশীর্বাদ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, 'আয় চলে আয় রে ধূমকেতু, আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু, দুর্দ্দিনের এই দুর্গশিরে, উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন '৷ বিভিন্ন স্বদেশী ও জাতীয়তাবাদী লেখা প্রকাশিত হত ধূমকেতু-তে ৷ 1922 এর 13 অক্টোবর এই পত্রিকার সম্পাদকীয়তে নজরুল ঘোষণা করেন, "ধূমকেতু ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা চায়" ৷ সেই বছরই পুজোর আগে ব্রিটিশদের বিঁধে রূপকের আড়ালে এখানে প্রকাশিত হয় 'আনন্দময়ীর আগমণে' কবিতা ৷ এরপরেই ব্রিটিশদের রোষানলে পড়েন নজরুল ৷ 23 নভেম্বর গ্রেফতার করা হয় তাঁকে ৷ কারার ওই লৌহকপাট, দুর্গম গিরি কান্তার মরু, মোরা একই বৃন্তে দু'টি কুসুম হিন্দু-মুসলমানের মতো কবিতা সে সময় একই সঙ্গে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দিয়েছিল ৷

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়: ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে লেখকদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করতে হলে যাঁকে বাদ দেওয়া যায় না তিনি হলেন সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (Bankim Chandra Chatterjee) ও তাঁর লেখা 'আনন্দমঠ' (1882) উপন্যাস ৷ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে এই উপন্যাসের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে ৷ জাতীয়তাবাদী এই উপন্যাস ছাপার বিরুদ্ধে আইন পাশ করেছিল ব্রিটিশ সরকার ৷ এই উপন্যাসেই ছিল 'বন্দে মাতরম' গানটি ৷ এই গানকে সে সময় বঙ্গদেশের জাতীয় সংগীত বলে উল্লেখ করেছিলেন ঋষি অরবিন্দ ৷ 1896 সালে জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে সর্বপ্রথম গাওয়া হয় গানটি ৷ পরবর্তীতে তা জাতীয় পরিচিতি পায় ৷ একটা বড় সময় পর্যন্ত এই গানটিকেই জাতীয় সঙ্গীত হিসেবেই গাওয়া হত ৷ তবে গানের কয়েকটি অংশ নিয়ে আপত্তি ওঠে ৷ বলা হয়, গানটিতে এক হিন্দুদেবীকে আরাধনা করা হয়েছে ৷ আর তাই বহু ধর্মের দেশ ভারতে এই গান নিয়ে সমস্যা দেখা দিতে পারে ৷ সে সময় পরামর্শ চেয়ে মহাত্মা গান্ধিকে চিঠি লেখেন তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ৷ গান্ধিজি পরামর্শ দেন প্রথম অংশটুকু গাইতে ৷ বর্তমানে এই গানটিই জাতীয় গান হিসেবে সম্মানিত ৷

আরও পড়ুন: স্বাধীন ভারতে যুগান্তকারী সাত 'সুপ্রিম' রায়

রামপ্রসাদ বিসমিল: ভারতের অন্যতম স্বাধীনতা সংগ্রামী ও ব্রিটিশ রাজত্বের সময় অন্যতম প্রতিবাদী লেখক ছিলেন রামপ্রসাদ বিসমিল (Ram Prasad Bismil) ৷ মাত্র 30 বছর বয়সে ফাঁসির মঞ্চে প্রাণ দেন তিনি ৷ তাঁর লেখা একাধিক গান ও কবিতা পরাধীন ভারতের বহু বিপ্লবীকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল ৷ বিসমিলের লেখা 'সরফরোসি কি তামান্না' গেয়ে কত স্বাধীনতা সংগ্রামী যে সে সময় ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন তা গুণে শেষ করার নয় ৷

ঋষি অরবিন্দ: ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন ঋষি অরবিন্দ বা শ্রী অরবিন্দ ঘোষ (Sri Aurobindo) ৷ বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে যোগ দেন দিয়েছিলেন তিনি ৷ কংগ্রেসে থাকার সময় চরমপন্থী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন তিনি ৷ 1908 সালে আলিপুর বোমা ষড়ষন্ত্র মামলায় নাম জড়িয়েছিল তাঁর ৷ গ্রেফতারও হন তিনি ৷ যদিও 1909 সালে সেই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পান তিনি ৷ জেলে থাকার সময়েই তাঁর ভাবাদর্শে আধ্যাত্মিকতার প্রভাব ঘটে ৷ 1910 সালে আধ্যাত্মিকতার টানেই তিনি পণ্ডিচেরী চলে যান ৷ গড়ে তোলেন অরবিন্দ আশ্রম ৷ তাঁর আধ্যাত্মিকতা ও স্বাদেশিকতা সম্পর্কিত বিভিন্ন লেখা সে সময় বিপ্লবীদের প্রভাবিত করেছিল ৷

আরও পড়ুন: দেশ বদলে দিয়েছিল যে সব সিদ্ধান্ত, স্বাধীনতার হীরক জয়ন্তীতে ফিরে দেখা একনজরে

এছাড়াও পরাধীন ভারতের লেখক-লেখিকাদের মধ্যে আরও অনেক এমন নাম আছে যাঁদের লেখা সেসময় সমাজে প্রভাব বিস্তার করেছিল ৷ সরোজিনী নাইডু, শ্যামল গুপ্ত, হসরত মোহানি, মাখনলাল চতুর্বেদী, হরিবংশ রাই বচ্চন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.