ETV Bharat / bharat

কন্যাসন্তানের উন্নতিতেই লুকিয়ে রয়েছে উন্নতির সঠিক পথ

author img

By

Published : Jan 26, 2021, 9:15 AM IST

1961 সালের হিসাব অনুযায়ী এদেশে ছয় বছর বয়সি প্রতি এক হাজার শিশুপুত্রের অনুপাতে শিশুকন্যার পরিমাণ ছিল 976 । ভয় ধরিয়ে দেওয়া তথ্য বলছে, এই অনুপাত 2001 সালে কমে প্রতি এক হাজার শিশুপুত্রের তুলনায় হয় 927। এই সংখ্যা আরও কমে 2011 সালে হয় 918। এই তথ্য থেকেই পরিষ্কার যে ভারতীয় সমাজে কন্যাসন্তানের প্রতি বৈষম্যটা ঠিক কোন অবস্থায় রয়েছে ।

girl childs development
girl childs development

শুরুটা হয়েছিল সেই 2012 সালে । তারপর থেকে প্রতি বছরই 11 অক্টোবর দিনটিকে আন্তর্জাতিক কন্যাসন্তান দিবস হিসাবে পালন করে রাষ্ট্রপুঞ্জ । বিশ্বজুড়েই পালিত হয় এই দিনটি । কিন্তু রাষ্ট্রপুঞ্জের বেশ কয়েক বছর আগেই, 2009 সাল থেকে আমাদের দেশে পালিত হয় জাতীয় কন্যাসন্তান দিবস। কিন্তু তা পালিত হয় 24 জানুয়ারি । তবে এই প্রতীক থাকা সত্ত্বেও এর গুরুত্ব সম্বন্ধে এখনও বেশির ভাগ মানুষই অবহিত নন । শতকের পর শতক ধরে আমাদের দেশের শিকড়ের গভীরে যেন প্রথিত হয়ে গিয়েছে লিঙ্গ বৈষম্যের বিষ। কন্যাসন্তানের প্রতি সাধারণ ভাবে বৈষম্য থাকায় জন্য এমনিতেই ভারতের দুর্নাম রয়েছে । এখনও এ দেশে সন্তান জন্মের আগে গর্ভাবস্থায় লিঙ্গ নির্ধারণের চল রয়েছে বহু জায়গায়। এখনও কন্যা ভ্রূণ হত্যার মতো ঘৃণ্য অপরাধ হয়েই চলেছে এ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে । এখনও বহু ক্ষেত্রে মেয়েদের পরিবারের বোঝা বলেই মনে করা হয় । বহু পরিবার সেই ‘বোঝা’ নামাতে খুব কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেয় । কন্যাসন্তানের প্রতি অমানবিক আচরণের যেন কোনও শেষ নেই ।

1961 সালের হিসাব অনুযায়ী এদেশে ছয় বছর বয়সি প্রতি এক হাজার শিশুপুত্রের অনুপাতে শিশু কন্যার পরিমাণ ছিল 976 । ভয় ধরিয়ে দেওয়া তথ্য বলছে, এই অনুপাত 2001 সালে কমে প্রতি এক হাজার শিশুপুত্রের তুলনায় হয় 927। এই সংখ্যা আরও কমে 2011 সালে হয় 918। এই তথ্য থেকেই পরিষ্কার যে ভারতীয় সমাজে কন্যাসন্তানের প্রতি বৈষম্যটা ঠিক কোন অবস্থায় রয়েছে । কন্যাসন্তান রক্ষার্থে কেন্দ্রীয় সরকার ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ প্রকল্প চালু করেছে 2015 সালে । সরকারের দাবি এই প্রকল্পের ফলাফল এখনও পর্যন্ত যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক । এর ফলে পুত্র এবং কন্যার অনুপাতে 16 পয়েন্ট উন্নতি হয়েছে । 918 থেকে এখন তা বেড়ে হয়েছে 934 । জাতীয় কন্যা সন্তান দিবসে সরকার দাবি করেছে যে দেশের 640টি জেলার মধ্যে 422টিতে লিঙ্গের অনুপাতে উন্নতি হয়েছে । প্রকল্পের যথেষ্ট ভাল প্রভাব পড়েছে উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব এবং হরিয়ানার মতো রাজ্যে । নবজাতক এবং সদ্য মায়েদের নথিভুক্তিও অনেক বেশি পরিমাণে বেড়েছে বলে দাবি করা হয়েছে সরকারের তরফে । বেড়েছে হাসপাতাল বা নার্সিং হোমের মতো জায়গায় প্রসবের ঘটনা । মেয়েদের স্কুলে উপস্থিতির হারও বেড়েছে বলে দাবি করা হয়েছে ।

যদিও কন্যাসন্তানের ভবিষ্যতে অন্ধকার ছায়া ফেলেছে কোভিড-19 । মোটামুটি ভাবে ধরে নেওয়া হয় প্রতি এক হাজার ছেলেদের সঙ্গে 950 জন মেয়েদের অনুপাত সঠিক । সেই মাপকাঠি ছুঁতে অবশ্য এখনও ঢেড় দেরি ভারতের। এই অতিমারির পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত পরিমাণে বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে যা আক্ষরিক অর্থেই হৃদয় বিদারক । দেশের সঠিক উন্নতি তখনই সম্ভব যখন কন্যাসন্তানকে যথেষ্ট ক্ষমতা দেওয়া হবে ।

1995 সালের বেজিং ঘোষণা অনুযায়ী 2011 সালে রাষ্ট্রপুঞ্জ সর্বসম্মত ভাবে ঘোষণা করে যে শিক্ষা এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকার রয়েছে কন্যাসন্তানের। শেফালি ভার্মা, মৈথিলি ঠাকুর, প্রিয়ঙ্কা পল, হিমা দাস, শিবাঙ্গী পাঠক, রিধিমা পাণ্ডেদের সাফল্যের কাহিনি নতুন করে আশার আলো দিচ্ছে । এসবের পাশাপাশি ভয় ধরাচ্ছে আরও একটি তথ্য । বিশ্ব পুষ্টি রিপোর্ট বলছে ভারতে প্রতি দুই জন মা হতে সক্ষম মহিলার মধ্যে এক জন রক্তাল্পতার শিকার । অসরকারি সংগঠন ক্রাই-এর একটি সমীক্ষা বলছে, গ্রামীণ ভারতে যে সমস্ত বিবাহ হচ্ছে, তার প্রায় 57 শতাংশ ক্ষেত্রে পাত্রীর বয়স 15 থেকে 19 বছরের মধ্যে হচ্ছে । ওই সংস্থারই অন্য় একটি রিপোর্ট বলছে যে, শুধুমাত্র গত বছর দেশে 72 লাখ বাল্যবিবাহ অনুষ্ঠিত হয়েছে ।

জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষার একটি রিপোর্ট বলছে, 7টি রাজ্যের মহিলারা বেড়ে চলা গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ করেছে । দেশের আটটি রাজ্যে লিঙ্গের অনুপাত কমে গিয়েছে । 9টি রাজ্যের মহিলারা অভিযোগ করেছেন যে তাঁরা শিশু অবস্থায় যৌন হেনস্থার শিকার হয়েছেন । দেশের তৃণমূল স্তরে অবস্থাটা ঠিক কতটা ভয়াবহ, এই সব তথ্য তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে । বিশ্ব ব্যাঙ্ক প্রস্তাব দিয়েছে যে, বিশ্বের প্রতিটি দেশের উচিত শিশু কন্যার জন্য 12 বছর নিরবচ্ছিন্ন পড়াশোনার ব্যবস্থা করা । এই ক্ষ‌েত্রে যে সব দেশ পিছিয়ে পড়ছে বা তেমন একটা গুরুত্ব দেয়নি সে সব দেশ বাৎসরিক 15 থেকে 30 লাখ মার্কিন ডলার ক্ষতি করছে বলে কয়েক বছর আগে 2018 সালে জানিয়েছিল বিশ্ব ব্যাঙ্ক । এই সব দুর্ভাগা দেশের মধ্যে অন্যতম হল ভারত । দেশের মানবাধিকার সূচক এবং উন্নতি সূচকের রকেট গতিতে উত্থান ঘটবে যদি আমাদের দেশ এই প্রস্তাবগুলি মেনে চলে এবং কন্যা সন্তানের নিরাপত্তার দিকটু গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে। কন্যা সন্তানদের সুস্বাস্থ্য, ভাল শিক্ষা, বাল্য বিবাহের নির্মূলকরণ এবং কন্যা ভ্রুণ হত্যা বন্ধ মহিলাদের ক্ষমতায়নের পাশাপাশি চালিয়ে যেতে হবে । এবিষয়ে কোনও সন্দেহ থাকার অবকাশ নেই ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.