ETV Bharat / bharat

স্থূলতা : প্যানডেমিক পরিস্থিতিতে বাড়তে থাকা উদ্বেগের কারণ

author img

By

Published : Sep 30, 2020, 7:12 PM IST

Corona
Corona

বেশি খাওয়াদাওয়া, চলাফেরা কমিয়ে দেওয়া এবং অালসে্যর ফলে মানুষের ওজন বাড়ছে, যা ক্রমশ উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে ।

কোভিড—19 প্যানডেমিকের ফলে একটি আপাত—নিষ্ক্রিয় জীবনযাত্রা তৈরি হয়েছে । গোটা জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই যেখানে বাড়ি থেকে কাজ করছে, সেখানেই রোজকার রুটিনে এর সাংঘাতিক প্রভাব পড়েছে এবং এতে জীবনশৈলীতেও পরিবর্তন এসেছে । বেশি খাওয়াদাওয়া, চলাফেরা কমিয়ে দেওয়া এবং অালসে্যর ফলে মানুষের ওজন বাড়ছে, যা ক্রমশ উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে । ইন্দোরের অ্যাপল হসপিটালের সঙ্গে যুক্ত ডা. সঞ্জয় কে জৈন, MBBS, MD (মেডিসিন) বলেছেন, “স্থূলতার অর্থ অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়া এবং এই অবস্থার নির্ধারক হল বডি মাস ইনডেক্স (BMI) । ওজন কিলোগ্রামে মাপার পর তাকে দৈর্ঘ্য (বর্গ মিটার) দিয়ে ভাগ করা হয় । অর্থাৎ kg/m2 । এইভাবে, আমরা স্থূলতার শ্রেণি বা স্তর চিহ্নিত করতে পারি, সাধারণত যাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয় ।”

স্থূলতার কারণ

ডা. সঞ্জয়ের ব্যাখ্যা, স্থূলতার কারণ মূলত দু’টি–

1. যথাযথ ডায়েট অনুসরণ করে না চলা

2. শারীরিক কার্যকলাপের অভাব

এছাড়া অন্যান্য কারণের মধে্য রয়েছে জেনেটিক্সের ভূমিকা যেমন পরিবারে বংশ পরম্পরায় স্থূলতার ধাত থাকলে, অন্যান্য কোনও রোগের কারণে, ওষুধপত্র সেবনের কারণে অথবা অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার জন্যও স্থূলতা দেখা দিতে পারে।

তিনি আরও জানিয়েছেন, “আজকের এই কঠিন সময়ে, যেখানে আমাদের মধে্য বেশিরভাগ মানুষই বাড়ি থেকে কাজ করছেন, সেখানে আমরা ঘুম থেকে উঠেই সরাসরি কম্পিউটার বা ল্যাপটপের স্ক্রিনের সামনে কাজ করতে বসে যাই । তাছাড়াও যখন প্রায় সারাক্ষণই আমরা বাড়িতে, তখন আমাদের বেশি বেশি খিদে পায় কারণ অফিসের মতো সেখানে খাওয়া—দাওয়ার সময়ের উপর কোনও বিধিনিষেধ নেই । তাছাড়াও মানসিক চাপমুক্ত জীবনে আপনি সারাক্ষণই বিশ্রামে থাকেন আর এ সব কিছুর ফলে প্রত্যক্ষ হোক বা পরোক্ষভাবে, স্থূলতা দেখা দেয় । আমি এমন অনেক রোগীরই সংস্পর্শে এসেছি, লকডাউনের পর যাদের বিপুল পরিমাণ ওজন বেড়ে গিয়েছে ।”

এর পরিণতি কী?

“স্থূলতা অনেক রোগের উৎস ।” এই রোগগুলির তালিকায় রয়েছে–

হাইপারটেনসন

ডায়াবিটিস

উচ্চ কোলেস্টরল

অস্টিওপোরোসিস

অস্টিওআর্থারাইটিস

হার্টের রোগ বা স্ট্রোক

কিডনি ফেলিওর

ক্যানসারের কিছু ধরণ যেমন লিভার ক্যানসার

অতিরিক্ত খাওয়াদাওয়া এড়ানো

অতিরিক্ত খাওয়াদাওয়া এড়াতে ডা. সঞ্জয় বলেন, “দিনে ঠিক কতটা খাওয়াদাওয়া হবে, তার জন্য যথাযথ রুটিন তৈরি করে তা অনুসরণ করা উচিত । 24 ঘণ্টা সময়ের মধে্য সময় বের করে যথাযথ পথ্য পরিকল্পনা করতে হবে এবং দু’টি পথ্যের মাঝের সময়ে অস্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস খাওয়া বন্ধ করতে হবে । আপনি একদিনের জন্য সম্পূর্ণ একটি ডায়েট প্ল্যান বানাতে পারেন আবার গোটা সপ্তাহের জন্যও বানাতে পারেন । যদি ইতিমধে্যই ওজন অনেকটা বেড়ে গিয়ে থাকে এবং নিজের রোজকাল খাদ্যতালিকা থেকে অবাঞ্ছিত ক্যালোরি বাদ দিতে চান, তাহল কোনও ডায়েটিশিয়ানের দ্বারস্থ হতে পারেন। তাঁরা আপনাকে যথাযথ ডায়েট চার্ট তৈরি করে দেবেন ।”

শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার নামে বেশি খাওয়া—দাওয়া

এখন যখন স্বাস্থ্যবিদরা নভেল করোনাভাইরাস মোকাবিলায় শরীরের অনাক্রম্যতা বাড়িয়ে তোলার উপর বেশি জোর দিচ্ছেন, তখন মানুষ বেশি করে প্রোটিন, ফ্যাট খাওয়ার পাশাপাশি ইমিউনিটি বাড়ে, এমন খাবারও খাচ্ছেন । এর ফলে, আমাদের বিশেষজ্ঞের মতে ক্ষতিই হচ্ছে । তিনি বলেছেন, “কোনও কিছুরই অতিরিক্ত ক্ষতিকর । আমাজের শরীর কেবলমাত্র সেটুকুই গ্রহণ এবং শোষণ করে, যা তার দরকার । বাকিটা ফেলে দেয় । কিন্তু যদি আপনি বেশি বেশি জিনিস গ্রহণ করতেই থাকেন, তাতে শরীরের ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই হবে না ।” সুতরাং শরীরের প্রয়োজন বুঝে খাওয়াদাওয়া খুব দরকার। তাছাড়াও কৃত্রিম সাপলমেন্টগুলি ঘন ঘন গ্রহণ করা বন্ধ করুন, যা আজকাল বাজারে খুব সহজেই পাওয়া যায় । এতে শারীরিক জটিলতা তৈরি হতে পারে, তাই কোনওভাবেই এর সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয় না ।

কী কী টিপস অনুসরণ করবেন ?

আমাদের বিশেষজ্ঞ কিছু টিপস দিয়েছেন, যা অনুসরণ করা যেতে পারে ।

—যে সব খাবারে ফ্যাট বেশি, উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স রয়েছে (যেমন রিফাইনড সুগার রয়েছে এমন খাবারদাবার যেমন পিৎজা, বার্গার প্রভৃতি) বা বেশি চিনি রয়েছে, এমন খাবার এড়িয়ে চলুন ।

—সুষম পথ্য মেনে চলুন, যেখানে 50—55 শতাংশ কার্বোহাইড্রেট, 30 শতাংশ প্রোটিন, 15 শতাংশ ফ্যাট রয়েছে । এই ভারসাম্য নষ্ট হলে স্থূলতার আশঙ্কা বাড়বে ।

—ডায়েটে বেশি করে স্যালাড এবং সবুজ শাকসবজি যোগ করুন, কারণ তাতে ফাইবার রয়েছে এবং ক্যালোরিও কম ।

—প্রতিদিন শারীরিক কসরত করুন। দিনে অন্তত 45 মিনিট মতো হাঁটুন । তবে কোভিড—19 প্যানডেমিকের জন্য বর্তমান পরিস্থিতিতে যদি বাড়ির বাইরে বেরোনো সম্ভব না হয়, তাহলে স্পট জগিং, স্কিপিং প্রভৃতিও করতে পারেন ।

প্রতিদিন অন্তত 30—45 মিনিট যোগচর্চা, অ্যারোবিকস বা অন্যান্য ধরনের শারীরিক কসরতও করা যেতে পারে ।

হানিকারক মানসিক চাপ এবং আবেগপ্রবণ হয়ে বেশি খেয়ে ফেলা থেকে বিরত থাকুন ।

সুতরাং, ডায়েট—জীবনযাত্রা এবং অন্যান্য কিছু বিষয়ে মানুষকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে কারণ এগুলিই হল স্থূলতার কারণ । গোড়া থেকে এদের নিয়ন্ত্রণ করাটা জরুরি । বিশেষ করে এখন, যখন আমরা আমাদের বেশিরভাগ সময়ই বাড়িতে কাটাচ্ছি । এখন আমাদের শারীরিক সুস্থতাকে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি মানসিকভাবেও সুস্থ থাকতে হবে ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.