ETV Bharat / bharat

1962-2020 : মুখোমুখি ভারত-চিন

author img

By

Published : Jun 16, 2020, 4:18 PM IST

1962 সাল থেকে বেশ কয়েকবার মুখোমুখি হয়েছে ভারতীয় ও চিনা সেনা । সীমান্ত সমস্যা নিয়ে দু'পক্ষের মধ্যে বহুবার যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয় ।

India and china face off
মুখোমুখি ভারত-চিন

দিল্লি, 16 জুন : লাদাখে চিনা সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে শহিদ হয়েছেন ভারতীয় সেনার তিনজন। তার মধ্যে একজন আধিকারিক রয়েছেন, বাকি দুই জওয়ান । এর আগেও ভারত ও চিনের মধ্যে যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল । একনজরে সেগুলি দেখে নেব ...

1962 - সে বছর চিন আক্রমণ করতে পারে তা কল্পনা করতে পারেনি ভারত । 1962 সালের 20 অক্টোবর ভারতে আক্রমণ করে চিন । প্রস্তুতি না থাকায় মাত্র 10 থেকে 20 হাজার ভারতীয় সেনা যুদ্ধে নামে । উলটো দিকে 80 হাজার সেনা নিয়ে প্রস্তুত ছিল চিন । প্রায় একমাস সেই যুদ্ধ চলে। 21 নভেম্বর যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে চিন ।

1967- ঠিক পাঁচ বছর পর ফের মুখোমুখি হয় ভারতীয় ও চিনা সেনা । সে বছর 80 জন ভারতীয় সেনা শহিদ হন । অন্যদিকে 300 থেকে 400 জন চিনা সেনাকে খতম করেন ভারতীয় সেনা জওয়ানরা ।

1967- সিকিম স্ট্যান্ড অফ নিয়ে দু'দেশের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল । সিকিমে ভারতীয় সেনার উপস্থিতি মানতে পারছিল না চিন । সেই ঘটনার স্মৃতিচারণ করেছেন মেজর জেনেরাল শেরু থাপলিওন । তিনি সেই সময় সেবু লা-তে নিযুক্ত ছিলেন ।

চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মির শত্রু দেশের সঙ্গে বোঝাপড়ার কিছু নীতি রয়েছে । শত্রু দেশের যেসব জায়গা চিনের কবজায় রয়েছে তা কোনওভাবে হাতছাড়া করা যাবে না । দ্বিতীয়ত, সেই জায়গা নিজেদের বলে দাবি করা এবং তৃতীয়ত শত্রু দেশের কোনও জায়গা যদি তাদের জায়গার মধ্যে থাকে তাহলে বিপক্ষকে তা নিয়ে সর্বদা হুমকি দেওয়া ।

1987- অরুণাচল প্রদেশের স্ট্যান্ড অফ নিয়ে ভারত ও চিনের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল । সেবছর প্রায় যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয় । কিন্তু ভারতের কূটনীতিতে শুধু যুদ্ধ এড়ানো নয় চিনকে আলোচনায় বসতে বাধ্য করেছিল । এর পরের বছর অর্থাৎ 1988 সালে প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি চিন সফরে যান এবং চিনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা করেন ।

2013- এপ্রিল মাসে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর চিনা সেনা তাদের ক্যাম্প তৈরি করেছিল । দৌলত বেগ ওল্ড সেক্টরে 10 কিলোমিটার জুড়ে চিনা সেনা ক‍্যাম্প তৈরি করে । পরে তা 19 কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ানো হয় । সেই ক্যাম্পে জিনিস পৌঁছে দিতে চিনের হেলিকপ্টার ভারতীয় আকাশসীমার মধ্যে ঢুকে পড়েছিল । যদিও চিনের তরফে পুরোটা অস্বীকার করা হয় । পরে দুই দেশ নিজেদের সেনা সরিয়ে নেয় ওই অঞ্চল থেকে ।

2014- সেপ্টেম্বর মাসে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর দেমচক গ্রামে খাল তৈরিকে কেন্দ্র করে চিনা সেনার মদতে সে দেশের বাসিন্দারা প্রতিবাদ জানান । তিন সপ্তাহ সীমান্তে উত্তেজনা চলার পর দু'পক্ষ সেনা সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় । ভারতীয় সীমানার মধ্যে তিন কিলোমিটার পর্যন্ত ক‍্যাম্প তৈরি করে ফেলেছিল চিনা সেনা ।

2015- উত্তর লাদাখের বার্সে এলাকায় মুখোমুখি হয়েছিল ভারত ও চিনা সেনা । সে বছর ওই অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর একটি ওয়াচ টাওয়ার তৈরি করছিল চিন । যার প্রতিবাদ জানায় ভারতীয় সেনা ।

2017 - জুন মাসে ডোকলাম সীমান্ত নিয়ে ভারত ও চিনের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয় । ডোকা লা পাসের কাছে 16 জুন চিনা সেনা রাস্তা তৈরির জন্য ভারী যন্ত্রপাতি এনে জড়ো করে এবং রাস্তা তৈরি শুরু করে । এর আগে ওই অঞ্চলে একটি রাস্তা তৈরি করেছিল চিন । যেখানে ভারতীয় সেনা নজরদারি চালাচ্ছিল সেখান থেকে রয়‍্যাল ভুটানিজ় আর্মি পোস্ট পর্যন্ত হেঁটে নজরদারি রাখছিল চিনা সেনা । ডোকলাম নিয়ে ভারত ও ভুটানের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে । 16 জুন চিন সেখানে রাস্তা তৈরি শুরু করার পর 18 জুন ভারত তাতে আপত্তি জানায় । শেষ পর্যন্ত ডোকলামে সেনা অভ্যুত্থান ঘটে । পরে দু'পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে ওই অঞ্চল থেকে সেনা সরিয়ে নেয় চিন ।

এবার যদি ভারত-চিন মুখোমুখি হয় তাহলে তার সম্ভাব্য বিষয়-

চিন ও পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক করিডর তৈরির স্বপ্ন দেখছেন প্রেসিডেন্ট শি জ়িনপিং । এই করিডর তৈরি হলে স্থলপথে পাকিস্তানের গোয়াদার বন্দরে পৌঁছাতে পারবে চিন । সেখান থেকে আফ্রিকায় চিনা পণ্য সরাসরি পৌঁছে যাবে । দক্ষিণ এশিয়ার দেশের উপর চিনকে নির্ভর করতে হবে না । পাকিস্তান ও চিনের মধ্যে অর্থনৈতিক করিডর তৈরি করতে গেলে পাক অধিকৃত গিলগিট-বালটিস্তান এলাকা ব্যবহার করতে হবে । যার বিরোধিতা করে আসছে ভারত । গিলগিট-বালটিস্তান নিয়ে চিন ও পাকিস্তানকে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে ভারত । IMD-র পক্ষ থেকে জম্মু-কাশ্মীর সাব ডিভিশনকে জম্মু এবং কাশ্মীর, লাদাখ, গিলগিট-বালটিস্তান এবং মুজাফফরাবাদ বলে উল্লেখ করা হয়েছে । গিলগিট-বালটিস্তান এবং মুজাফফরাবাদ বেআইনিভাবে দখল করে রেখেছে পাকিস্তান । আজ IMD-র পক্ষ থেকে উত্তর পশ্চিম ভারতের সীমানা প্রকাশ করা হয় । সেখানে গিলগিট-বালটিস্তান এবং মুজাফফরাবাদকে দেখানো হয়েছে ।

ওয়াকিবহাল মহলের মতে, চিন বহু পণ্য উৎপাদন করছে । কিন্তু বিশ্বের বাজারে তার চাহিদা নেই । এর ফলে চিনের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । এই পরিস্থিতিতে চিন নিজের দেশে জাতীয়তাবাদ প্রচার করছে । ফলে সীমান্তে আরও উত্তেজনা বাড়ছে । নিজেদের দেশের নাগরিকদের যুদ্ধের ভয় দেখাচ্ছে চিন এবং তাদের দারিদ্র ও বেকারত্ব থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর চেষ্টা করছে জ়িনপিং সরকার । MIT র অধ্যাপক টেইলর ফ্র‍্যাভেল জানান, COVID-19 চিনের ইউহান থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে । এর ফলে চিনের অর্থনীতির পাশাপাশি পররাষ্ট্র সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । চিনে ভারতের প্রাক্তন প্রতিনিধি অশোক কান্থা জানান, সীমান্তে চিনের এটা চোখরাঙানি ছাড়া আর কিছু নয় ।

মোদি জমানায় ভারত-চিন সীমান্ত সমস্যার সমাধান কীভাবে হল-

2014- শেপজ়ি থেকে সুমার পর্যন্ত রাস্তা তৈরির চেষ্টা করছিল চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি । য নিয়ে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত ও চিনা সেনা । পরে ওই এলাকা থেকে সেনা সরিয়ে নিয়েছিল দু'পক্ষ ।

2015- বার্সে এলাকায় একে অপরের মুখোমুখি হওয়ার পর দু'পক্ষ নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সেনা সরিয়ে নেয় । ভারত ও চিন সরকার এরমধ্যে হস্তক্ষেপ করেনি ।

2017- চিনের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে দাবি করা হয়, ভারত একতরফা নিজেদের সেনা সরিয়ে নিক ডোকলাম থেকে । পরে দু'পক্ষ 28 অগাস্ট নিজেদের সেনা সরিয়ে নেয় ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.