পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

নবমীতে কুমারী রূপে পূজিতা, ব্রাত্য নয় ওরা

By

Published : Oct 7, 2019, 11:24 PM IST

Updated : Oct 7, 2019, 11:57 PM IST

দুরারোগ্য ব্যাধি যেমন থ্যালাসেমিয়া, ক্যানসারের মতো রোগে আক্রান্ত বা দৃষ্টিশক্তিহীন এমন নয় নাবালিকাকে কুমারী পুজোর আসনে বসিয়ে নবমীতে পুজো হল এই দর্জিপাড়ায় ।

দর্জিপাড়া সর্বজনীন

কলকাতা, 7 অক্টোবর : কুমারী পুজো ৷ অষ্টমীতে বিশেষ কিছু স্থানে এই পুজো দেখতে ভিড় জমান দর্শনার্থীরা ৷ নবমীতে কুমারী পুজো হয় দর্জিপাড়া সর্বজনীনে । প্রথা মেনে ব্রাহ্মণের মেয়েদের নয় বরং প্রথা ভেঙে বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন নাবালিকাদের পুজো করা হয়েছে এই মণ্ডপে । উদ্যোক্তাদের কথায়, একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে এই উদ‍্যোগ নেওয়ার মূল কারণ, মানুষকে বোঝানো যে এই ধরনের মানুষদের সহানুভূতি নয়, সমানুভূতির সঙ্গে দেখা উচিত । প্রতিমারা আছে প্রতি মা'তেই ।

দুরারোগ্য ব্যাধি যেমন থ্যালাসেমিয়া, ক্যানসারের মতো রোগে আক্রান্ত বা দৃষ্টিশক্তিহীন এমন নয় নাবালিকাকে কুমারী পুজোর আসনে বসিয়ে পুজো হল এই দর্জিপাড়ায় । কীভাবে এই ভাবনা ? দর্জিপাড়া সর্বজনীনের গণমাধ্যম সচিব সন্দীপ বোস বলেন, "আমরা প্রায় গত এক বছর ধরে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়েছি । এদের কাজের সঙ্গে আমরা মানসিকভাবে একাত্ম হয়েছি । তাঁরাই প্রথম আমাদের প্রস্তাব দিয়েছিলেন এই রকমভাবে যদি একটা পুজো করা যায় । আমরা সঙ্গে সঙ্গে প্রস্তাবটাতে সম্মতি জানিয়েছিলাম । কারণ, আমরা মনে করি কোনও মানুষ শারীরিকভাবে অসুস্থ হতে পারে, কিন্তু সে কখনও পিছিয়ে পড়তে পারে না । যার জন্য আমরা তাদেরকে সহানুভূতি নয়, সমানুভূতি, এই বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেই নয় জন কুমারীকে আমরা পুজো দিয়েছি । প্রথা, ব্রাহ্মণের মেয়ে না হলে কুমারী পুজো হবে না । এই জাত, ধর্ম, বর্ণের উপরে উঠে আজ সমাজের প্রান্তিক স্তর থেকে আমরা সেই সমস্ত কুমারীদের তুলে এনেছি যারা দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত, যারা দৃষ্টিশক্তিহীন, যারা শ্রবণশক্তিহীন ৷ যারা মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী, শারীরিক দিক থেকে বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন, এই রকম নয়জন কুমারীকে আমরা এখানে পুজো দিয়েছি আজকে ।"

একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার থেকে এই ন'জনকে আজ আনা হয়েছিল পুজো মণ্ডপে । সেই সংস্থার সম্পাদক সমিত সাহাকে এই অভিনব উদ্যোগ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "আমরা আজকে নয় জন কুমারীকে মা দুর্গার সামনে কুমারী পুজোর আসনে নিয়ে এসেছি । যারা নানাভাবে জীবনের সঙ্গে সংগ্রাম করে চলেছে । এদের মধ্যে কেউ কেউ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত, কেউ দৃষ্টিহীনতাকে জয় করে এগিয়ে চলেছে, কেউ অটিস্টিক, কেউ বা ফুটপাতবাসী প্রান্তিক বালিকা । এইরকম নয় জন বালিকা আজকে কুমারী পুজোর আসনে বসেছেন । আমরা সাধারণত দেখি, কোনও বারোয়ারি দুর্গা পুজোর কুমারী পুজোতে হয়তো পাড়ার সম্ভ্রান্ত বাড়ির কুমারীরা পূজিতা হন । কিন্তু আমাদের এখানে আজ প্রথম এরকম একটা প্রান্তিক জায়গা থেকে বালিকাদের নিয়ে আসা হয়েছে । আমাদের উদ্দেশ্য তারা যাতে মায়ের আশীর্বাদে আগামী দিনে নারী শক্তির জাগরণে জীবনযুদ্ধে এগিয়ে চলতে পারে । পাশাপাশি মানুষের মধ্যেও একটা বার্তা যাক যে, এই প্রান্তিক বালিকারা বা মানুষরা কেউ সামাজিকভাবে ব্রাত্য নয় । উৎসব সবার ।"

দর্জিপাড়ার পুজো মণ্ডপ

এই ধরনের একটা পুজোয় অংশগ্রহণ করতে পেরে ওরা কী বলছে, এই প্রসঙ্গ উঠতেই সমিতবাবু বলেন, "ওদের অনুভূতি খুবই সুন্দর ছিল । দৃষ্টিহীন মেয়ে যারা ছিল তাদের অনেকেরই প্রায় চোখে জল এসে গেছে । বয়স্ক ঠাকুমা, কাকিমা তাদের এসে পায়ে প্রণাম করছেন, দক্ষিণা দিচ্ছেন, শাড়ি দিয়ে বরণ করছেন । তখন তাদের এটাই বক্তব্য, আমরা তো অন্ধ । অন্ধ মানে দয়া বা ভিক্ষা এই রকম একটা ধারণা আছে । একটা ব্যাপার থাকে যে, ও কী করবে । আর বাড়িতেও নিজের কাকিমা, মাসিমা, নিজের পরিজনও বলে, ও ঠাকুর দেখে কী করবে? ও তো অন্ধ-প্রতিবন্ধী, রাস্তায় নিয়ে বের হলে বিপদ । নিজের ঘরেই তারা ব্রাত্য । কিন্তু, আজ তারা এখানে পুজো মণ্ডপে সকলের মধ্যে মায়ের আশীর্বাদ পাচ্ছে, সকলের ভালোবাসা পেয়েছে এটা একটা বিরাট ব্যাপার ।"

প্রতিমারা আছে প্রতি মা'তেই, বলছে দর্জিপাড়া

দর্জিপাড়া সর্বজনীনের তরফে সুব্রত দেবপাল বলে, দর্জিপাড়া সর্বজনীন এবার 88তম বর্ষে পড়ল । গত আট বছর ধরে থিম পুজো করা হচ্ছে । এই বছর তাদের থিম 'স্বপ্নের উড়ান' । পরিবেশ সচেতনতার বার্তায় মানুষের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে এই থিমের মাধ্যমে । প্রতি বছরের মতো এই বছরও পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন সামগ্রী যেমন, বাঁশ, চট, কাগজ, ঝুড়ির মতোর জিনিস দিয়ে তৈরি করা হয়েছে পুজো মণ্ডপটি ।

দেখুন ভিডিয়ো
Intro:কলকাতা, 7 অক্টোবর: সাধারণত ব্রাহ্মণ বাড়ির কন‍্যাদের কুমারী পুজো করা হয়। সেই প্রথা ভেঙে এবার দুরারোগ্য ব্যাধি যেমন থ্যালাসেমিয়া, ক্যান্সারের মতো রোগে আক্রান্ত, দৃষ্টিশক্তিহীন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নয় জন বালিকাকে কুমারী পুজোর আসনে বসাল দর্জিপাড়া সার্বজনীন দুর্গোৎসব। সংবেদন নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে এই উদ‍্যোগ নেওয়ার মূল কারণ, মানুষকে বোঝানো যে এই ধরনের বালিকা বা মানুষকে সহানুভূতি নয়, সমানুভূতির সঙ্গে দেখুন।



Body:দর্জিপাড়া সর্বজনীনের মিডিয়া কনভেনার সন্দীপ বোস বলেন, "আমরা প্রায় গত এক বছর ধরে সংবেদনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। তাদের কার্যকলাপের সঙ্গে আমরা মানসিকভাবে একাত্ম হয়েছি। তাঁরাই প্রথম আমাদের প্রস্তাব দিয়েছিলেন এই রকমভাবে যদি একটা পুজো করা যায়। আমরা সঙ্গে সঙ্গে প্রস্তাবটাতে সম্মতি জানিয়েছিলাম। কারণ, আমরা মনে করি কোনও মানুষ শারীরিকভাবে অসুস্থ হতে পারে, কিন্তু সে কখনও পিছিয়ে পড়তে পারে না। যার জন্য আমরা তাদেরকে সহানুভূতি নয়, সমানুভূতি, এই বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেই নয় জন কুমারীকে আমরা পুজো দিয়েছি। এবং প্রথাগত যে জিনিসটা ছিল যে ব্রাহ্মণের মেয়ে না হলে কুমারী পুজো হবে না। এই জাত, ধর্ম, বর্ণের উপরে উঠে আজকে সমাজের প্রান্তিক স্তর থেকে আমরা সেই সমস্ত কুমারীদের তুলে এনেছি যারা দুরারোগ্য ব‍্যাধিতে আক্রান্ত, যারা দৃষ্টিশক্তিহীন, যারা শ্রবণ শক্তিহীন, যারা মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী, শারীরিক দিক থেকে প্রতিবন্ধী, এই রকম নয়জন কুমারীকে আমরা এখানে পুজো দিয়েছি আজকে।"

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সংবেদন যেখান থেকে এই নয়জন বালিকা আজ কুমারী পুজোর জন‍্যে এসেছিলেন তার সম্পাদক সমিত সাহা বলেন, "আমরা আজকে 9 জন কুমারীকে মা দুর্গার সামনে কুমারী পূজার আসনে নিয়ে এসেছি। যারা নানাভাবে জীবনের সঙ্গে সংগ্রাম করে চলেছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত, কেউ দৃষ্টিহীণতাকে জয় করে এগিয়ে চলেছে, কেউ অটিস্টিক মানসিক প্রতিবন্ধী, কেউবা ফুটপাতে থাকা প্রান্তিক বালিকা। এইরকম নয় জন বালিকা আজকে কুমারী পূজার আসনে বসেছেন। আমরা সাধারণত দেখি, কোনো বারোয়ারি দুর্গা পুজোর কুমারী পুজোতে হয়তো পাড়ার সম্ভ্রান্ত বাড়ির কুমারীরা এসে সেখানে পূজিতা হন। কিন্তু আমাদের এখানে আজ প্রথম এরকম একটা প্রান্তিক জায়গা থেকে বালিকাদের নিয়ে আসা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য তারা যাতে মায়ের আশীর্বাদে তাদের যে সমস্যা সেই সমস্যাকে কাটিয়ে তারা আগামী দিনে নারী শক্তির জাগরণে তারা জীবনযুদ্ধে এগিয়ে চলুক। এবং মানুষের মধ্যে একটা বার্তা যাক যে, এই প্রান্তিক বালিকা যারা আছেন বা মানুষ যারা আছেন তারা কেউ সামাজিকভাবে ব্রাত্য নয়। উৎসব সবার। সহানুভূতি বাদ দিয়ে তাদের প্রতি সমানুভূতির লক্ষ্য নিয়ে তাদের মধ্যে নারী শক্তির জাগরণ এবং মা দুর্গার আশীর্বাদে জীবনের যা কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে তাদের সেগুলোকে কাটিয়ে তারা জয়লাভ করুক। সাধারণভাবে এইরকম ব্রাত‍্য মানুষদেরকে ডেকে কেউ কুমারী পূজার আয়োজন করেছে বলে আমার অন্তত জানা নেই। আমরা প্রথম এইরকম একটা আয়োজন করলাম।"

এই ধরনের একটা পুজোয় অংশগ্রহণ করতে পেরে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এই বালিকাদের অনুভূতি নিয়ে সমিত সাহা বলেন, "তাদের অনুভূতি খুব সুন্দর ছিল। দৃষ্টিহীন মেয়ে যারা ছিল তাদের অনেকেরই প্রায় চোখে জল এসে গেছে। বয়স্ক ঠাকুমা কাকিমা তাদের এসে পায়ে প্রণাম করছেন, দক্ষিণা দিচ্ছেন, শাড়ি দিয়ে বরণ করছেন। তখন তাদের এটাই বক্তব্য, আমরা তো অন্ধ। অন্ধ মানে দয়া বা ভিক্ষা বা অনুকম্পা এই রকম একটা ধারণা। অথবা, একটা দূরছাই যে, ও কী করবে। আর বাড়িতেও নিজের কাকিমা, মাসিমা, নিজের পরিজনও বলে, ও ঠাকুর দেখে কী করবে? ও তো অন্ধ। বা প্রতিবন্ধী, রাস্তায় নিয়ে বের হলে বিপদ। নিজের ঘরেই তারা ব্রাত‍্য। কিন্তু, আজকে তারা এখানে পুজো মণ্ডপে সকলের মধ্যে মায়ের আশীর্বাদ পাচ্ছে, সকলের ভালোবাসাটা পেয়েছে এটা একটা বিরাট ব্যাপার।"

দর্জিপাড়া সর্বজনীনের মিডিয়া কনভেনার জানান, দর্জিপাড়া সর্বজনীন এবার 88তম বর্ষে পা দিল। তার মধ্যে গত 8 বছর ধরে থিম পুজো করা হচ্ছে। এই বছর তাদের থিম 'স্বপ্নের উড়ান'। পরিবেশ সচেতনতার বার্তায় মানুষের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে এই থিমের মাধ্যমে। প্রতি বছরের মতো এই বছরও পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন সামগ্রী যেমন, বাঁশ, চটা, কাগজ, ঝুড়ির মতোর জিনিস দিয়ে তৈরি করা হয়েছে পুজো মণ্ডপটি।


Conclusion:
Last Updated :Oct 7, 2019, 11:57 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details