ETV Bharat / state

ঠিক কেন বাতিল হল নিয়োগ প্রক্রিয়া ? কারণ খুঁজে দেখল ইটিভি ভারত - HC VERDICT ON SSC SCAM

Illegalities that Calcutta HC pointed out while scrapping 2016 SSC Panel: কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি শব্বর রশিদির রায়ে বাতিল হয়েছে 2016 সালের স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ প্যানেল । দীর্ঘ 282 পাতার রায়ের পরতে পরতে রয়েছে বিভিন্ন সংস্থার গাফিলতি এবং বেনিয়মের বিবরণ। ঠিক কী কী কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ বাতিল করল হাইকোর্ট ? আসুন দেখে নেওয়া যাক।

author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Apr 22, 2024, 6:07 PM IST

Updated : Apr 23, 2024, 2:59 PM IST

কলকাতা হাইকোর্ট , Calcutta High Court
কেন বাতিল হল এসএসসির প্যানেল, জানাল হাইকোর্ট

কলকাতা, 22 এপ্রিল: আজ কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে প্রায় 26 হাজার চাকরি গিয়েছে । স্বভাবতই এমন ঐতিহাসিক রায় ঘিরে সব মহলে চাঞ্চল্য পড়ে গিয়েছে ৷ 282 পাতার এই রায়ের পরতে পরতে আছে আরও বিস্ফোরক তথ্য ৷ বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, নির্ধারিত আসন সংখ্যার চেয়ে বেশি নিয়োগ থেকে শুরু করে প্যানেলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও চাকরি দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। রায়ের একটি অংশে (335) বলা আছে ঠিক কোন কোন বেনিয়ম হওয়ায় 2016 সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করেছে হাইকোর্ট ৷ এখানে মোট 17টি পয়েন্ট আছে ৷ রায়ের কপিতে উঠে এসেছে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জন কুমার বাগের কমিটির রিপোর্টের কথাও ৷

ঠিক কী কী কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল হল -

1. ওএমআর শিট স্ক্যান ও মূল্যায়নের জন্য নাইসা নামে একটি এজেন্সিকে নিয়োগ করেছিল এসএসসি ৷ আদালত মনে করে যে প্রক্রিয়ায় টেন্ডার দেওয়া হয়েছিল তা ভারতীয় সংবিধানের 14 এবং 16 নং ধারাকে লঙ্ঘন করেছে ৷

2. এসএসসির নিয়োগ করা সংস্থা নাইসা আবার সেই ওএমআর স্ক্যান করার জন্য ডাটা স্ক্যানটেক নামে অন্য একটি এজেন্সিকে নিয়োগ করে ৷ এই বিষয়টিকেও বেনিয়ম হিসবেই দেখেছেন দুই বিচারপতি ।

3. এসএসসির দাবি তাদের অফিস চত্বরের মধ্যে ওএমআর শিট স্ক্যান করা হয়েছিল ৷ এর জন্য নাইকা বা ডাটা স্ক্যানটেক নামে কোনও এজেন্সি নিয়োগ করা হয়নি ৷

4. এসএসসি আসল ওএমআর শিট নষ্ট করে দিয়ে স্ক্যান করা শিটগুলি সার্ভারে সংরক্ষণ করেছে ৷

5. সিবিআই কোনও ওএমআর শিটের স্ক্যানের ছবি এসএসসির সার্ভারে খুঁজে পায়নি ৷

6. স্ক্যানের ছবি সার্ভারে সংরক্ষণ করার আগেই ওএমআর শিটগুলি নষ্ট করে ফেলা হয়েছিল ৷

7. 2018 থেকে 2023 সাল পর্যন্ত আরটিআই আবেদনকারীদের যে ওএমআর শিট এসএসসি দেখিয়েছিল তার কিছুই এসএসসির ডাটাবেস সার্ভারে খুঁজে পায়নি সিবিআই ৷ যদিও এসএসসির দাবি, সবই তাদের ডাটাবেস ছিল ৷

8. যত শিক্ষক নিয়োগের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল তার চেয়ে বেশি নিয়োগ করা হয় ৷ এটাকেই দুর্নীতির অন্যতম বড় দিক হিসেবে চিহ্নিত করেছে সিবিআই।

9. দুই বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, প্যানেলে নাম নেই এমন ব্যক্তিদেরও নিয়োগ করা হয়েছে ৷

10. সাদা ওএমআর শিট জমা দিয়েছে এমন ব্যক্তিকে নিয়োগ করা হয়েছে ৷

11. প্যানেলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও নিয়োগ করা হয়েছে ৷

12. মেধাতালিকার উপরের দিকে নাম আছে এমন প্রার্থীদের ছেড়ে নীচে ব়্যাঙ্ক করা চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৷

13. মেধাতালিকায় নাম থাকা প্রার্থীরা কে কত নম্বর পেয়েছেন তা প্রকাশ করা হয়নি ৷

14. প্যানেলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কাউন্সেলিং হয় ৷

15. অবৈধভাবে যাঁরা সুবিধা পেয়েছেন তাঁদের সকলকে এখনও চিহ্নিত করা যায়নি ৷ এটা এসএসসি, দফতর ও রাজ্যের পক্ষে চিহ্নিত করা একপ্রকার অসম্ভব ৷

16. এই বেআইনি নিয়োগ মিটমাট করার জন্য সুপারনিউমেরারি পদে নিয়োগের জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন ৷

17. চারটি শ্রেণিতে নিয়ন্ত্রিত নিয়োগ বিধিগুলি কখনও অক্ষরে অক্ষরে মানা হয়নি ৷

রায়ের কপিতে আরও কয়েকটি বিষয় বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তাতে এই রায় দুই বিচারপতি কেন দিলেন সেই প্রেক্ষিতটা বোঝানো হয়েছে। সেখানে বিচারপতি বাগ কমিটির পেশ করা রিপোর্টের কথা বলা আছে। স্কুল সার্ভিস কমিশনের এই দুর্নীতির সঙ্গে শিক্ষা দফতরের যে যোগাযোগ আছে সে কথা প্রথম তুলে ধরা হয়েছিল এই রিপোর্টে । এর পাশাপাশি সিবিআই থেকে শুরু করে এসএসসির রিপোর্ট এবং হলফনামাকেও রায়ের ভিত্তি হিসেবে দেখেছে কলকাতা হাইকোর্ট।

আরও পড়ুন :

  1. বাতিল 2016 এসএসসি'র সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়া, একনজরে নির্দেশনামায় কী বলল হাইকোর্ট
  2. 'রায়কে চ্যালেঞ্জ করছি', চাকরি বাতিল হওয়া 26 হাজার শিক্ষকের পাশে মমতা
  3. 25,753 জনের নিয়োগ বাতিল, হাইকোর্টের রায়ে অখুশি এসএসসি যাচ্ছে শীর্ষ আদালতে

কলকাতা, 22 এপ্রিল: আজ কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে প্রায় 26 হাজার চাকরি গিয়েছে । স্বভাবতই এমন ঐতিহাসিক রায় ঘিরে সব মহলে চাঞ্চল্য পড়ে গিয়েছে ৷ 282 পাতার এই রায়ের পরতে পরতে আছে আরও বিস্ফোরক তথ্য ৷ বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, নির্ধারিত আসন সংখ্যার চেয়ে বেশি নিয়োগ থেকে শুরু করে প্যানেলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও চাকরি দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। রায়ের একটি অংশে (335) বলা আছে ঠিক কোন কোন বেনিয়ম হওয়ায় 2016 সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করেছে হাইকোর্ট ৷ এখানে মোট 17টি পয়েন্ট আছে ৷ রায়ের কপিতে উঠে এসেছে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জন কুমার বাগের কমিটির রিপোর্টের কথাও ৷

ঠিক কী কী কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল হল -

1. ওএমআর শিট স্ক্যান ও মূল্যায়নের জন্য নাইসা নামে একটি এজেন্সিকে নিয়োগ করেছিল এসএসসি ৷ আদালত মনে করে যে প্রক্রিয়ায় টেন্ডার দেওয়া হয়েছিল তা ভারতীয় সংবিধানের 14 এবং 16 নং ধারাকে লঙ্ঘন করেছে ৷

2. এসএসসির নিয়োগ করা সংস্থা নাইসা আবার সেই ওএমআর স্ক্যান করার জন্য ডাটা স্ক্যানটেক নামে অন্য একটি এজেন্সিকে নিয়োগ করে ৷ এই বিষয়টিকেও বেনিয়ম হিসবেই দেখেছেন দুই বিচারপতি ।

3. এসএসসির দাবি তাদের অফিস চত্বরের মধ্যে ওএমআর শিট স্ক্যান করা হয়েছিল ৷ এর জন্য নাইকা বা ডাটা স্ক্যানটেক নামে কোনও এজেন্সি নিয়োগ করা হয়নি ৷

4. এসএসসি আসল ওএমআর শিট নষ্ট করে দিয়ে স্ক্যান করা শিটগুলি সার্ভারে সংরক্ষণ করেছে ৷

5. সিবিআই কোনও ওএমআর শিটের স্ক্যানের ছবি এসএসসির সার্ভারে খুঁজে পায়নি ৷

6. স্ক্যানের ছবি সার্ভারে সংরক্ষণ করার আগেই ওএমআর শিটগুলি নষ্ট করে ফেলা হয়েছিল ৷

7. 2018 থেকে 2023 সাল পর্যন্ত আরটিআই আবেদনকারীদের যে ওএমআর শিট এসএসসি দেখিয়েছিল তার কিছুই এসএসসির ডাটাবেস সার্ভারে খুঁজে পায়নি সিবিআই ৷ যদিও এসএসসির দাবি, সবই তাদের ডাটাবেস ছিল ৷

8. যত শিক্ষক নিয়োগের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল তার চেয়ে বেশি নিয়োগ করা হয় ৷ এটাকেই দুর্নীতির অন্যতম বড় দিক হিসেবে চিহ্নিত করেছে সিবিআই।

9. দুই বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, প্যানেলে নাম নেই এমন ব্যক্তিদেরও নিয়োগ করা হয়েছে ৷

10. সাদা ওএমআর শিট জমা দিয়েছে এমন ব্যক্তিকে নিয়োগ করা হয়েছে ৷

11. প্যানেলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও নিয়োগ করা হয়েছে ৷

12. মেধাতালিকার উপরের দিকে নাম আছে এমন প্রার্থীদের ছেড়ে নীচে ব়্যাঙ্ক করা চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৷

13. মেধাতালিকায় নাম থাকা প্রার্থীরা কে কত নম্বর পেয়েছেন তা প্রকাশ করা হয়নি ৷

14. প্যানেলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কাউন্সেলিং হয় ৷

15. অবৈধভাবে যাঁরা সুবিধা পেয়েছেন তাঁদের সকলকে এখনও চিহ্নিত করা যায়নি ৷ এটা এসএসসি, দফতর ও রাজ্যের পক্ষে চিহ্নিত করা একপ্রকার অসম্ভব ৷

16. এই বেআইনি নিয়োগ মিটমাট করার জন্য সুপারনিউমেরারি পদে নিয়োগের জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন ৷

17. চারটি শ্রেণিতে নিয়ন্ত্রিত নিয়োগ বিধিগুলি কখনও অক্ষরে অক্ষরে মানা হয়নি ৷

রায়ের কপিতে আরও কয়েকটি বিষয় বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তাতে এই রায় দুই বিচারপতি কেন দিলেন সেই প্রেক্ষিতটা বোঝানো হয়েছে। সেখানে বিচারপতি বাগ কমিটির পেশ করা রিপোর্টের কথা বলা আছে। স্কুল সার্ভিস কমিশনের এই দুর্নীতির সঙ্গে শিক্ষা দফতরের যে যোগাযোগ আছে সে কথা প্রথম তুলে ধরা হয়েছিল এই রিপোর্টে । এর পাশাপাশি সিবিআই থেকে শুরু করে এসএসসির রিপোর্ট এবং হলফনামাকেও রায়ের ভিত্তি হিসেবে দেখেছে কলকাতা হাইকোর্ট।

আরও পড়ুন :

  1. বাতিল 2016 এসএসসি'র সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়া, একনজরে নির্দেশনামায় কী বলল হাইকোর্ট
  2. 'রায়কে চ্যালেঞ্জ করছি', চাকরি বাতিল হওয়া 26 হাজার শিক্ষকের পাশে মমতা
  3. 25,753 জনের নিয়োগ বাতিল, হাইকোর্টের রায়ে অখুশি এসএসসি যাচ্ছে শীর্ষ আদালতে
Last Updated : Apr 23, 2024, 2:59 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.