নয়াদিল্লি, 7 মার্চ: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে মৃত্যু হয়েছে এক ভারতীয়ের ৷ তাঁকে ভুয়ো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে রাশিয়ার যুদ্ধে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ৷ যুদ্ধক্ষেত্রে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, বুধবার এই তথ্য দিয়েছে রাশিয়ায় ভারতীয় দূতাবাস ৷ মৃত মহম্মদ আসফান হায়দরবাদ এলাকার বাসিন্দা ৷ চাকরি দেওয়ার নাম তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করার অভিযোগ উঠেছে ৷ আসফানকে চাকরি দেওয়ার সময় জানানো হয়, তিনি রাশিয়া সরকারের কার্যালয়ে এক সহকারী হিসেবে কাজ করবেন ৷ পরে তাঁকে যুদ্ধে 'ভাড়াটে সৈন্য' হতে বাধ্য করা হয় ৷
এই প্রসঙ্গে ভারতীয় দূতাবাস সোশাল মিডিয়ায় জানিয়েছে, "আমরা এক ভারতীয় শ্রী মহম্মদ আসফানের মৃত্যুর খবর পেয়েছি ৷ আমরা রাশিয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি ৷ তাঁর দেহাবশেষ যাতে ভারতে আনা যায়, সেই উদ্দেশ্যে চেষ্টা চলছে ৷"
এর আগে জানা যায়, বহু ভারতীয় রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে নানা ধরনের কাজের জন্য আবেদন জানিয়েছে ৷ এই খবর সামনে আসতে বিদেশমন্ত্রকের তরফে আর্জি জানানো হয়, ভারতীয়রা যেন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে দূরত্ব বজায় রাখে ৷ এই বিষয়ে ভারতীয় দূতাবাস রাশিয়ার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছে ৷ বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল একটি বিবৃতি জারি করে লেখেন, "আমরা জানতে পেরেছি, কয়েকজন ভারতীয় নাগরিক রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে চাকরি করছেন ৷ ভারতীয় দূতাবাস এই বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছে ৷ ভারতীয়দের দ্রুত সেখান থেকে ছেড়ে দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে ৷" এর সঙ্গে আরও জানানো হয়, "আমরা সব ভারতীয়ের কাছে আর্জি জানাচ্ছি, সজাগ থাকুন এবং এই যুদ্ধ থেকে দূরে থাকুন ৷"
হায়দরাবাদের আরেক যুবক মহম্মদ সুফিয়ানকেও চাকরির লোভ দেখিয়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ৷ তাঁর পরিবার সুফিয়ানকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছে ৷ এমনকী তারা বিদেশমন্ত্রকের কাছেও আবেদন জানানো হয়েছে ৷
সুফিয়ানের ভাই ইমরান বলেন, "বাবা ব্লকস কোম্পানি নামের একটি কোম্পানি আমার ভাইকে নিয়ে গিয়েছিল ৷ দিল্লি, দুবাই এবং মুম্বইয়ে ওদের অফিস রয়েছে ৷ 2023 সালের 12 নভেম্বর প্রথম ব্যাচটি চলে যায় ৷ মোট 21 জন যুবককে নিয়ে গিয়েছিল ৷ আর প্রত্যেকের কাছ থেকে 3 লক্ষ টাকা করেও নেওয়া হয়েছে ৷ এরপর 13 নভেম্বর রাশিয়ায় আরেকটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয় তাঁদের ৷"
তিনি আরও জানিয়েছেন, এজেন্টরা যুবকদের বলত সেনাবাহিনীতে সহকারীর চাকরি পাইয়ে দেবে ৷ কিন্তু বাস্তবে তাদের সেনাবাহিনীতেই যোগ দিতে বাধ্য করা হয় ৷ রাশিয়া-ইউক্রেন আন্তর্জাতিক সীমান্তে তাদের মোতায়েন করা হয়৷ ওই যুবকদের কোনও সাহায্য করেনি কেউ ৷ আটকে থাকা যুবকদের ফিরিয়ে আনতে বিদেশ মন্ত্রকের কাছে আর্জি জানিয়েছেন সুফিয়ানের ভাই ৷
তিনি বলেন, "আমরা দূতাবাসের কাছে অনুরোধ করেছি ৷ কিন্তু একমাসেরও বেশি সময় কেটে গিয়েছে ৷ কোনও উত্তর আসেনি ৷ আমরা এমনকী বিদেশমন্ত্রককেও একাধিক চিঠি লিখেছি৷ কিন্তু তারও কোনও উত্তর পাইনি ৷ আমরা এমএডিএডি পোর্টাল থেকে বার্তা পেয়েছি ৷ তাতে জানানো হয়েছে, ভারত সরকার রাশিয়ার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং সেই উত্তর আসার অপেক্ষায় আছে ৷"
আরও পড়ুন: