ETV Bharat / sukhibhava

দাঁতকে উপেক্ষা করবেন না: বরং তা নিয়ে গর্বিত হোন

author img

By

Published : Mar 21, 2021, 8:18 AM IST

দাঁতকে উপেক্ষা করবেন না
দাঁতকে উপেক্ষা করবেন না

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বলছে, বহু দেশে মুখের রোগ একটা বড় সমস্যা, যা সারাজীবন ধরে মানুষকে ভোগান্তির মধ্যে ফেলে । তাঁরা যন্ত্রণা, অস্বস্তি, বিকৃতি এমনকী মৃত্যুরও শিকার হন । বিশ্ব জুড়ে প্রায় 3.5 বিলিয়ন মানুষ মুখের রোগে ভুগছেন । 530 মিলিয়নেরও বেশি শিশু তাদের দুধের দাঁতে ক্ষয়ের সমস্যায় ভোগে । তাই আজ ওরাল হেলথ ডে-তে আমরা এ নিয়ে আরও জেনে নেব ।

প্রতি বছর 20 মার্চ এফডিআই ওয়ার্ল্ড ডেন্টাল ফেডারেশনের উদ্যোগে ওয়ার্ল্ড ওরাল হেলথ ডে (ডব্লিউওএইচডি) পালন করা হয় । যাতে মুখের নানান রোগ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে বিশ্বজুড়ে সচেতনতা বাড়ে । বিশ্বজুড়ে ওরাল হাইজিনের গুরুত্ব নিয়ে প্রচার চালানো হয়, এবং এবছরের থিম হল, “মুখ নিয়ে গর্বিত হোন”।

মুখের স্বাস্থ্য-

সার্বিক স্বাস্থ্যের মতোই মুখের স্বাস্থ্যও গুরুত্বপূর্ণ । হু বলছে, “মুখের স্বাস্থ্য হল এমন একটা অবস্থা, যাতে ক্রনিক যন্ত্রণা, মুখের মধ্যে ও গলায় ক্যান্সার, সংক্রমণ, ঘা, মাড়ির রোগ, দাঁতের ক্ষয়, দাঁত পড়ার মতো সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা যায় । এইসব সমস্যা মানুষের কামড়ানো, চিবানো, হাসি, কথা বলার ক্ষমতা এবং মানসিকভাবে ভালো থাকাকে বিপর্যস্ত করে তোলে ।”

সার্বিক স্বাস্থ্যের ওপর মুখের স্বাস্থ্যের প্রভাব-

ইন্ডিয়ান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ)-এর মতে, মুখের স্বাস্থ্যের বড়সড় প্রভাব গোটা শরীরের ওপর পড়ে, যার মধ্যে রয়েছে:

  • হৃদরোগ : মাড়ির রোগ যাঁদের আছে, তাঁদের প্রাণঘাতী হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি দ্বিগুণ । একইরকম ভাবে, যাঁদের আগে থেকেই হৃদরোগ আছে, তাঁদের মুখের ব্যাপারেও সাবধান হতে হবে ।
  • স্ট্রোক : একটা গবেষণায় দেখা গেছে যে মুখের মধ্যে সংক্রমণ স্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়ায় ।
  • ডায়াবিটিস : মুখের সংক্রমণ ডায়াবিটিসকে ত্বরান্বিত করে । যাঁদের ডায়াবিটিস আছে, তাঁদের মাড়ির রোগের সম্ভাবনা বেশি দেখা যায় ।
  • শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা : মুখের মধ্যে যাঁদের সংক্রমণ রয়েছে, তাঁরা নিউমোনিয়ার মতো গুরুতর অসুখে পড়তে পারেন ।
  • সন্তানধারণ : সময়ের আগেই প্রসব এবং শিশুর আকার ছোট হওয়ার পিছনে থাকে অন্তঃসত্ত্বার মাড়ির সমস্যা । যে জৈব তরল থেকে প্রসবযন্ত্রণা তৈরি হয়, তা অনেক সময় মাড়িতে থাকা ব্যাকটিরিয়ারাই ত্বরান্বিত করে ।

মুখের কয়েকটি সমস্যা -

1.দাঁতে ব্যাথা

2.দাঁতে গর্ত

3.ছোপধরা বা হলদে দাঁত

4.সংবেদনশীলতা

5.ফেটে যাওয়া অথবা ভাঙা দাঁত

6.দাঁতে ক্ষয়

7.জিঞ্জিভাইটিস (মাড়ির রোগ)

8.মুখের ক্যান্সার

9.মুখে ঘা

10.নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ

কী করা যেতে পারে

মুখের যত্ন না নিলে কী কী বিপত্তি হতে পারে সেটা জানার পর, আসুন দেখি বিভিন্ন বয়সের মানুষের জন্য আইডিএ কী পরামর্শ দিচ্ছে :

1. সদ্যোজাত

আপনার সদ্যোজাতকে একবছরে বা প্রথম দাঁত ওঠার সময় ডেন্টিস্টের কাছে নিয়ে যান ।

গজ বা নরম সূতির কাপড় দিয়ে শিশুর মাড়ি পরিষ্কার রাখুন ।

নরম ব্রিসলের টুথব্রাশ এবং এক ফোঁটা পেস্ট দিয়ে খাওয়ানোর পর এবং শোয়ার আগে আপনার সন্তানের দাঁত মেজে দিন ।

দাঁত ফ্লস করুন । যখন দুটো দুধের দাঁত পাশাপাশি উঠবে, তাদের দিনে অন্তত একবার ফ্লস করা উচিত (ঘুমোতে যাওয়ার আগে হলে ভাল) ।

শিশুর বোতল থেকে খাওয়ার অভ্যাস ছাড়ান । আপনার চিকিৎসককে জিজ্ঞেস করুন যে স্তন্যপান কখন বন্ধ করবেন । যদি শিশু প্রথম থেকেই বোতলে খায়, তাহলে এক বছরের মধ্যে তা ছাড়িয়ে দিন ।

2. শিশু

নিয়মিত দাঁতের চেক আপ করান । ছ’মাস অন্তর হলে ভাল ।

শিশুকে শেখান কীভাবে ব্রাশ ও ফ্লস করতে হয় ।

দাঁতের ক্ষয় আটকাতে সিল্যান্ট ব্যবহার করবেন কিনা, সেটা আপনার ডেন্টিস্টকে জিজ্ঞাসা করুন ।

ফ্লুওরাইড ব্যবহারের দিকে লক্ষ্য রাখুন । আপনার এলাকার জলে ফ্লুওরাইড আছে কিনা দেখুন । না থাকলে, ডেন্টিস্টের কাছে ফ্লুওরাইড চিকিৎসার ব্যাপারে জানতে চান । মনে রাখবেন, অতিরিক্ত ফ্লুওরাইড থেকে ডেন্টাল ফ্লুওরোসিস হতে পারে ।

মাউথওয়াশের ব্যাপারেও ডেন্টিস্টের থেকে জানুন ।

কুকি, আলুর চিপস আর আইসক্রিমের বদলে স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরি করুন ।

অর্থোডোন্টিক পরীক্ষার দিন ধার্য করুন । অনেক চিকিৎসকই মনে করেন যে সাত বছর বয়সে শিশুর সম্পূর্ণ অর্থোডন্টিক পরীক্ষা করানো উচিত ।

আরও পড়ুন : বিশ্ব নিদ্রা দিবস: নিয়মিত ঘুম, স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যৎ

3. টিনএজার

ছ’মাস অন্তর দাঁত পরীক্ষা ও পরিষ্কার করাতে হবে ।

প্রত্যেক দিন ব্রাশ ও ফ্লস করতে হবে ।

সোডা বা এনার্জি ড্রিঙ্কের বদলে পর্যাপ্ত ফ্লুওরাইড-যুক্ত জল খেতে হবে ।

সুষম খাবার খেতে হবে ।

ডেন্টিস্টের কাছে মাউথগার্ডের ব্যাপারে জানতে চান ।

যদি খেলাধূলো করেন, তাহলে আঘাত থেকে দাঁতকে বাঁচানো গুরুত্বপূর্ণ ।

4. প্রাপ্তবয়স্ক

নিয়মিত দাঁতের ডাক্তার দেখান ।

রোজ ব্রাশ ও ফ্লস করুন, এমনকী ক্লান্ত থাকলেও ।

ফাস্ট ফুড কমিয়ে সুষম খাবার খান ।

নিয়মিত ব্যায়াম করুন । এটা আপনার দাঁতের পক্ষে ভালো । গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা ব্যায়াম ও সঠিক খাওয়াদাওয়ার মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা বেছে নিয়েছেন, তাঁদের পেরিওডন্টাইটিস (মাড়ির অসুখ) হওয়ার সম্ভাবনা 40 শতাংশ পর্যন্ত কমে যায় ।

5. প্রবীণ

নিয়মিত ডেন্টিস্টের কাছে যান । পেশাদারদের সাহায্য নিন ।

একটা সময়ে কথা বলা বা খাবার সময় দাঁত নড়তে পারে । আপনাকে এই অস্বস্তি সহ্য করতে হবে না, কিন্তু ওষুধের দোকানে গিয়ে চটজলদি সমাধান খোঁজার বদলে ডেন্টিস্টের সাহায্য নিন ।

প্রয়োজন হলে ইলেকট্রিক টুথব্রাশ ব্যবহার করুন ।

পড়ে যাওয়া দাঁতের জায়গায় ডেন্টাল ইমপ্লান্ট ব্যবহারের কথা ভাবুন ।

সুতরাং, মাড়ি পরিষ্কার করার পাশাপাশি দাঁত মাজাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত দাঁতের ডাক্তার দেখান এবং স্বাস্থ্যকর খাওয়া দাওয়া করুন। যদি ঝকঝকে সুস্থ দাঁত আর শক্তিশালী মাড়ি চান, তাহলে মিষ্টিজাতীয় খাবার ও ধূমপান এড়িয়ে চলুন এবং স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নিন ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.