ETV Bharat / state

আমফান সামলে 'অন্ধকার'-এ পূর্ব বর্ধমানের বিদ্যুৎবিভাগের অস্থায়ী কর্মীরা

author img

By

Published : Jun 21, 2020, 6:55 PM IST

Updated : Jul 6, 2020, 11:34 PM IST

ভিত্তিহীন কারণ দেখিয়ে ছাঁটাই করা হচ্ছে । এমনই অভিযোগ তুলছেন পূর্ব বর্ধমানের বিদ্যুৎবিভাগের অস্থায়ী কর্মীরা ।

ছবি
ছবি

বর্ধমান, 21 জুন : আমফানে বিধ্বস্ত হয়েছে রাজ্যের একাংশ । বিদ্যুৎ ও পানীয় জল না পেয়ে কলকাতায় নেমে এসেছিল অন্ধকার । সেই তুলনায় অনেকটাই ভালো জায়গায় ছিল পূর্ব বর্ধমান । টানা লোডশেডিং নিয়ে ভুগতে হয়নি জেলাবাসীকে । অথচ যেসব কর্মীর হাত ধরে চরম ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেয়েছিল বর্ধমানবাসী সেইসব অস্থায়ী কর্মীরাই আজ কাজ হারিয়ে, বেতন না পেয়ে অন্ধকারে । এমনই অভিযোগ উঠেছে । আশঙ্কায় ভুগতে শুরু করেছেন বিদ্যুৎবিভাগের কয়েক হাজার অস্থায়ী কর্মী ।

পূর্ব বর্ধমান জেলায় প্রায় 4 হাজার অস্থায়ী বিদ্যুৎকর্মী বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত । লো টেনশন, হাই টেনশন, মোবাইল ভ্যান কর্মীরা দিনরাত কাজ করে পরিষেবা দিয়ে চলেছেন । সাব স্টেশনের অপারেটর হেল্পাররা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন । যখন কোনও জায়গায় লোডশেডিং হয়, সেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কাজে যুক্ত থাকেন CFO কর্মীরা । ফলে ডকেট কল ও নতুন বিদ্যুতের কাজ সামাল দেওয়া সম্ভব হয় । এছাড়া বিদ্যুৎবিভাগের অফিস ও স্টোর আগলানোর মতো কাজের জন্যও অস্থায়ী পদে নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ করা হয় । শুধু তাই নয়, বিদ্যুৎবিভাগের অফিসে কোনও হামলার মতো ঘটনা ঘটলে সেই ঝামেলা সামাল দেওয়ার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয় নিরাপত্তারক্ষীদেরই । এছাড়া আছেন গাড়ির ড্রাইভার, মিটার রিডার, অস্থায়ী সাফাইকর্মী-সহ একাধিক বিভাগের অস্থায়ী কর্মীরা ।

অভিযোগ, বিভিন্ন বিভাগে জরুরি পরিষেবা দেওয়ার পরেও অস্থায়ী কর্মীদের নানা অজুহাতে ছাঁটাই করা হচ্ছে । কয়েকমাসের বেতন বকেয়া রাখা হচ্ছে । যেখানে সেখানে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে । অথচ স্থায়ী কর্মীদের নির্দিষ্ট সময় অন্তর পে কমিশন বসে । তাঁদের দেওয়া হয় উৎসাহ ভাতাও । আমফান ঘূর্ণিঝড়ে যখন রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় চলছিল টানা লোডশেডিং, সেই তুলনায় পূর্ব বর্ধমান জেলার মানুষকে টানা লোডশেডিংয়ের ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি । প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও পরিষেবা দিয়েছিলেন পূর্ব বর্ধমানের বিদ্যুৎ বিভাগের অস্থায়ী কর্মীরা । অথচ এই পরিস্থিতিতেও বেশ কিছু কর্মীকে নানা অজুহাতে কাজ থেকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ । বেশ কিছু কর্মীকে দেওয়া হয়নি চার থেকে পাঁচ মাসের বেতনও ।

কী বলছেন পূর্ব বর্ধমানের বিদ্যুৎবিভাগের অস্থায়ী কর্মীরা ?

এর আগেও তাঁরা একাধিক দাবি তুলে পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম , হুগলি, মুর্শিদাবাদ , বাঁকুড়া সহ একাধিক জেলা থেকে রাজ্য অস্থায়ী বিদ্যুৎ কর্মী সমন্বয় মঞ্চ গড়ে বধর্মানের জ়োনাল ম্যানেজারের অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন । কিন্তু লকডাউনের জেরে সেইসব বিষয় ধামাচাপা পড়ে যায় । এরমধ্যে আমফানের মধ্যেও তাঁরা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন । তারপরও তাঁদের অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি ।

রাজ্য অস্থায়ী বিদ্যুৎকর্মী সমন্বয় মঞ্চের দাবি,

  • স্থায়ী কর্মীদের মতো সমান কাজে সমান বেতন দিতে হবে ।
  • ন্যূনতম বেতন হতে হবে মাসিক 21,600 টাকা ।
  • বিদ্যুৎবণ্টন ক্ষেত্রে স্থায়ী কর্মীদের মতো অস্থায়ী কর্মীদের নিজস্ব বেতন কাঠামো চালু করতে হবে ।
  • 60 বছর বয়স পর্যন্ত কাজের নিশ্চয়তা এবং নিরাপত্তা দিতে হবে ।
  • বাজারদরের ভিত্তিতে বেতন বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চালু করতে হবে ।
  • ক্যাটেগরি ভিত্তিক সকল অস্থায়ী কর্মীদের সঠিক ভাতা দিতে হবে ।
  • স্থায়ী কর্মীদের মতো অস্থায়ী কর্মীদের উৎসাহ ভাতা চালু করতে হবে ।
  • সকল ড্রাইভারদের প্রভিডেন্ট ফান্ড ও ESI চালু করতে হবে ।
  • সকল কর্মীদের জাতীয় ছুটি ও অন্যান্য ছুটির দিন সবেতন ছুটি দিতে হবে ।
  • অতিরিক্ত কাজের বোঝা চাপিয়ে কর্মীদের মানসিক চাপ দেওয়া বন্ধ করতে হবে ।

বিদ্যুৎ বিভাগের অস্থায়ী কর্মীদের অভিযোগ, লকডাউনের পরিস্থিতির মধ্যেও নানা অজুহাতে কর্মীদের বেতন কাটা হয়েছে । লো টেনশন, হাই টেনশন লাইনের কর্মীদের ভিত্তিহীন অভিযোগে ছাঁটাই করা হয়েছে । উপযুক্ত সুরক্ষা ছাড়াই মিটার রিডারদের দিয়ে রিডিং করানো হচ্ছে ।

পূর্ব বর্ধমান বিদ্যুৎ বিভাগের এক অস্থায়ী কর্মী অঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায় বলেন , "ঘূর্ণিঝড় ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমরা দিনরাত এক করে পরিষেবা দিয়ে চলেছি । অথচ দেখা যাচ্ছে আমরাই বঞ্চিত । আমাদের অনেক কর্মীদের বসিয়ে দেওয়া হয়েছে । অনেকের বেতন কেটে নেওয়া হয়েছে । অনেকেই বেশ কয়েক মাস বেতন পাননি । ফলে আমরা আশঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি ।"

অন্য এক অস্থায়ী কর্মী সুফি আলম মুনসি বলেন, "আফফানের পরে জেলার কোথাও মানুষকে লোডশেডিংয়ের ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি । এটা শুধুমাত্র সম্ভব হয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের অস্থায়ী কর্মীদের জন্য । কেন্দ্রীয় সরকার তার যোজনা অনুযায়ী EPF এর 24% টাকা সরকারি কর্মীদের প্রদান করলেও বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা নিযুক্ত বিভিন্ন কম্পানি ও ঠিকাদার EPF-এর টাকা পাওনা টাকা অস্থায়ী কর্মীদের দিচ্ছে না । দিনরাত পরিশ্রম করার পরও নানা অজুহাতে কর্মীদের ছাঁটাই করা হচ্ছে । এভাবে চললে আমরা কোথায় যাব ।"

যোগাযোগ করা হয়েছিল আরও এক অস্থায়ী কর্মী সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে । তিনি বলেন, "প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে, যেকোনও পরিবেশে যেকোনও পরিস্থিতিতে চুক্তিভিত্তিক কর্মীরাই দিনরাত এক করে বিদ্যুৎ পরিষেবা ঠিক রাখার দায়িত্ব নিয়ে থাকে । অথচ নানা অজুহাতে বিভিন্ন বিভাগের কর্মীদের ছাঁটাই করে দেওয়া হচ্ছে । বিষয়টি নিয়ে আধিকারিকদের একাধিকবার বলা হলেও তারা কোন বিষয়ে চোখ কান দিচ্ছেন না ।"

যদিও বিষয়টি নিয়ে বিদ্যুৎবিভাগের জ়োনাল ম্যানেজার পার্থপ্রতিম দত্ত মুখ খুলতে চাননি ।

Last Updated : Jul 6, 2020, 11:34 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.