ETV Bharat / state

সংসার চালাতে দেওয়ালি পুতুল গড়েন কুমোরপাড়ার তুলসী

author img

By

Published : Oct 18, 2019, 1:01 AM IST

Updated : Oct 19, 2019, 5:21 PM IST

দেওয়ালি পুতুল তৈরিতে ব্যস্ত তুলসী দাস

দেওয়ালি পুতুল গড়ে সংসার চালাচ্ছেন মেদিনীপুর শহরের কুমোরপাড়ার তুলসী দাস ৷ প্রায় 80 বছর আগে দাস পরিবার শুরু করেছিল দেওয়ালি পুতুল গড়া ৷ সেই ট্রাডিশন চালিয়ে যাচ্ছেন পরিবারের বধূ তুলসী ।

মেদিনীপুর, 17 অক্টোবর : দেওয়ালি পুতুল ৷ নাম শুনেছেন ? দীপাবলির মরশুমে কিন্তু এই পুতুলের চাহিদা যথেষ্ট ৷ রাজ্যের অনেক জায়গায় কালীপুজোর সময় দেওয়ালি পুতুল পুজোর প্রচলন রয়েছে । মেদিনীপুর শহরের কুমোরপাড়ার দাস পরিবার দীর্ঘদিন ধরে দেওয়ালি পুতুল গড়ছেন ।

প্রায় 80 বছর আগে দাস পরিবার শুরু করেছিল দেওয়ালি পুতুল গড়া ৷ পরবর্তীতে একটা সময় পরিবারের সদস্যরা পুতুল গড়া বন্ধ করে দেন । দাস পরিবারে বিয়ে হয়েছে তুলসীর । তিনি বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি এসে দেখেন, স্বামীর একার রোজগারের টাকায় সংসার চলছে না । নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা ৷ তখন তিনি দেওয়ালি পুতুল গড়া শুরু করেন । পরিবারের বন্ধ হয়ে যাওয়া ট্রাডিশন ফের নতুন করে প্রাণ পায় তুলসীর হাতে। সংসারের কাজ সামলে দেওয়ালি পুতুল গড়তে শুরু করেন তিনি ৷ এখন দেওয়ালি পুতুল গড়ে তিনি যা রোজগার করেন, তার জেরে সংসারে কিছুটা শ্রী ফিরেছে ।

তুলসী গড়েন থিম ভিত্তিক দেওয়ালি পুতুল । থিমের মধ্যে রয়েছে কালিয়া দমন ,গজলক্ষ্মী ,মৎস্যকন্যা ,সীতাহরণ, দেবী দুর্গা ,শিবাজি ,নরসিংহ ,কার্তিক ইত্যাদি । এক হাত থেকে শুরু করে দশ হাত দীর্ঘ দেওয়ালি পুতুল গড়েন তিনি । এ ছাড়া রয়েছে 1 প্রদীপ থেকে 28 প্রদীপের দেওয়ালি পুতুল ৷ কলকাতার পাশাপাশি তুলসীর তৈরি দেওয়ালি পুতুলের অন্য রাজ্যেও বাজার রয়েছে । এবার তুলসী 5000 দেওয়ালি পুতুল গড়ার অর্ডার পেয়েছেন ৷ তাই নাওয়া-খাওয়া ভুলে তিনি এখন ব্যস্ত পুতুল তৈরিতে ।

তবে তুলসী জানান, বর্তমানে চাহিদা কমেছে দেওয়ালি পুতুলের ৷ তাই ব্যবসাতেও সমস্যা হচ্ছে ৷ জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভ হচ্ছে কম ৷ বিশেষ করে রংয়ের দাম, মাটির দাম যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে পুতুল তৈরির খরচ অনেকটাই বেড়ে গেছে । ফলে পুতুলের দামও বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন তুলসী ৷ পুতুল পিছু চার থেকে দশ টাকা দাম বাড়িয়েছেন তিনি ৷

দেখুন ভিডিয়ো

তুলসী জানান, যখন তিনি পুতুল গড়ার কাজ শুরু করেন, তখন সংসার চলছিল কোনওমতে ৷ স্বামীর সামান্য উপার্জনে সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন ৷ তাই বাধ্য হয়েই সংসার সামলানোর পাশাপাশি পুতুল গড়ার কাজে হাত লাগান ৷ সেই থেকে শুরু তাঁর মাটির পুতুল তৈরির কাজ ৷ দুই বাচ্চার দেখাশোনা, পড়াশুনা এবং দেখভালের পাশাপাশি তাদের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করতে তিনি শ্বশুরবাড়ির বন্ধ হয়ে যাওয়া এই পেশাকে বেছে নেন ৷

তুলসীর মেয়ে ক্লাস ইলেভেনের ছাত্রী উপাসনা দাসও এখন মায়ের সঙ্গে পুতুল তৈরিতে হাত লাগায় ৷ উপাসনা বলে, " পড়াশোনার পাশাপাশি পুতুল তৈরিতে মা'কে যতটা সাহায্য করা সম্ভব করি ৷ "

Intro:
ডিজিটাল যুগে সংসার চালাতে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া দেওয়ালি পুতুল গড়ে নিজেদের জীবন-জীবিকা সামলাচ্ছেন কুমোর পাড়ার গৃহবধূ তুলসীদাস, মা ও মেয়ে মিলে এই মাটির পুতুল গড়ে সংসার সামলানোর পাশাপাশি নিজেদের পড়াশুনো চালিয়ে যাচ্ছে কুমোর পাড়ার দাস পরিবার l


Body:ডিজিটাল যুগে সংসার চালাতে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া দেওয়ালি পুতুল গড়ে নিজেদের জীবন-জীবিকা সামলাচ্ছেন কুমোর পাড়ার গৃহবধূ তুলসীদাস, মা ও মেয়ে মিলে এই মাটির পুতুল গড়ে সংসার সামলানোর পাশাপাশি নিজেদের পড়াশুনো চালিয়ে যাচ্ছে কুমোর পাড়ার দাস পরিবার l

কথায় আছে যে রাঁধে , সে চুলও বাঁধে আর সেই আপ্তবাক্য কে নিজেদের জীবনের জীবনাদর্শ করে দীর্ঘ 80 বছর ধরে পূর্বপুরুষের গড়া মাটির পুতুল আজও গড়ে চলছেন কুমোর পাড়ার তুলসীদাস l মেদিনীপুর শহরের কোতয়ালী থানার অন্তর্গত এই কুমোরপাড়া মাটির ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত l কুমোর পাড়ায় পূর্ব পুরুষের তৈরি করা দেওয়ালি পুতুল আজ পুতুল করেছেন তুলসীদাস ও তার মেয়ে উপাসনা দাস l তুলসী দেবী বিয়ে হয়ে আসার পর থেকে দেখেন স্বামী এলআইসি এজেন্ট যা টাকা রোজগার করে তাদের সংসার চলে না, নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা l এমত অবস্থায় পূর্বপুরুষ ধরে চলে আসা দেওয়ালি পুতুল কীভাবে তৈরি করছে লোকে , সেগুলো তিনি লক্ষ্য করেন আর যেই না ভাবা অমনি সংসারের কাজ শেষে দেওয়ালি পুতুল গড়তে কাজে নামেন তুলসী দেবী l সেই থেকে তার পুতুল গড়ার কাজ শুরু l প্রতি বছর এই পুজোর কটা দিন তিনি শুধু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করেন কবে আসবে এবং এর দেওয়ালি পুতুল গড়ে তিনি যা রোজগার করবেন তা পুরো সারা বছর ধরে তার সংসার চলবে l দীর্ঘ 80 বছর ধরে তার পূর্বপুরুষের দেওয়ালি পুতুল আজ তিনি গড়ে চলেছেন স্বমহিমায 20 বছর ধরে l এবারও তার দেওয়ালি পুতুল নজর কাড়ছে ,এবারে রয়েছে কালিয়া দমন ,গজলক্ষী ,মৎস্যকন্যা ,সীতাহরণ, দেবী দুর্গা ,শিবাজী ,নরসিংহ ,কার্তিক সহ নানা থিমের দেওয়ালি পুতুল l শহরের পাশাপাশি জেলায় এবং জেলার পাশাপাশি বিভিন্ন রাজ্যে তিনি এই পুতুল রপ্তানি করেন l তার এই দেওয়ালি পুতুল কলকাতার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছে কয়েকদিন আগেই l লোকে তাকে ফোনে ফোনে যোগাযোগ করে অর্ডার দেন l এবারে তিনি অর্ডার পেয়েছিলেন 5000 দেওয়ালি পুতুল গড়ার ,তাই নাওয়া, খাওয়া ভুলে তিনি এখন ব্যস্ত সেই দেওয়ালি পুতুল গড়ার l এই দেওয়ালি পুতুল বর্তমানে ডিজিটাল যুগে কিছুটা হল চাহিদা কমায় তার ব্যবসার ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা হচ্ছে, এবারে সমস্যা হয়েছে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় l বিশেষ করে রং এর দাম ,মাটির দাম যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে সেখানে তার পুতুল গড়ার ক্ষেত্রে অনেক ঘাটতি দেখা দিয়েছে l তিনি এবারে পুতুলের দাম বৃদ্ধি করেছেন পুতুল প্রতি চার থেকে দশ টাকা l তার পুতুলে রয়েছে এক হাত থেকে শুরু করে দশ হাত, এক প্রদীপ থেকে 28 প্রদীপ l প্রতিবছর এই থিমের দেওয়ালি পুতুল করে তিনি তাক লাগিয়ে দেন l এলাকায় তাই তার নামডাক রয়েছে l শহর থেকে জেলা ,জেলা থেকে রাজ্যে l

এদিন তার বক্তব্য জানতে গিয়ে তিনি জানান যখন তিনি এই পুতুল গড়ার কাজ শুরু করেছেন তখন সংসার চলছিল না কোনোমতেই, স্বামীর ওই কটা টাকা তার কিছুতেই সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন , কাজে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছিল l তাই বাধ্য হয়ে সংসার সামলানোর পাশাপাশি পুতুল গড়ার কাজে তিনি হাত লাগান আর সেই থেকে শুরু তার মাটির পুতুল তৈরির কাজ l একে একে সংসার সামলেছেন, বাচ্চা হয়েছে, দুটো বাচ্চার দেখাশোনা
পড়াশুনা এবং দেখভালের পাশাপাশি তাদের ভবিষ্যৎ কে সুনিশ্চিত করার জন্য তুলসী দেবী আজও দেওয়ালি পুতুল গড়েন সংসার সামলে l তুলসী দেবীর পাশাপাশি একাদশ শ্রেণির ছাত্রী উপাসনা দাস মায়ের সাথে হাত, লাগান মাকে যতটা পারে সাহায্য করা যায় l সেই ইচ্ছের তাগিদে পড়াশুনার পর মায়ের সাথে হাত লাগান উপাসনা l উপাসনার বক্তব্য ছিল মায়ের এই কষ্ট যদি কোথাও নিরাময় করতে পারি তাহলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করব, এবং যতটা পারবো সাহায্য করে যাবো মা কে l


Conclusion:

ডিজিটাল যুগে সংসার চালাতে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া দেওয়ালি পুতুল গড়ে নিজেদের জীবন-জীবিকা সামলাচ্ছেন কুমোর পাড়ার গৃহবধূ তুলসীদাস, মা ও মেয়ে মিলে এই মাটির পুতুল গড়ে সংসার সামলানোর পাশাপাশি নিজেদের পড়াশুনো চালিয়ে যাচ্ছে কুমোর পাড়ার দাস পরিবার l
Last Updated :Oct 19, 2019, 5:21 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.