মেদিনীপুর, 3 জানুয়ারি : এক- দু'বছর নয় ৷ দেখতে দেখতে কেটে গেছে 39 বছর ৷ আজও ঠিক প্রথম দিনের মতোই কর্মতৎপর তিনি ৷ একজন হিন্দু হয়েও যেভাবে এতগুলো বছর মুসলিম ধর্মস্থান আগলে রেখেছেন, তা শুনলে অবাক হতে হয় ৷ শুধুই কী নিরাপত্তা দেওয়া, প্রতিমাসে এবং বছরের একটি দিন এলাকার শিশুদের মুখে দু'মুঠো অন্ন প্রসাদ হিসেবে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেন ৷ কিন্তু এ কাজের জন্য অন্যের কাছে হাত পাততে গররাজি চমত সেতুয়া ৷
সালটা 1980 ৷ মেদিনীপুর শহরের কোতোয়ালি থানার অন্তর্গত বেড়বল্লভপুরের একটি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় সুফি চাঁদসা বাবার মৃত্যু হয়। পরে ওই এলাকায় তাঁকে সমাধিস্থ করা হয় । মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের একাংশ মনে করতেন চাঁদসা বাবা আল্লার প্রেরিত দূত । পরে লোকজনের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নিয়ে এই সমাধিস্থানের উপর একটি মাজার তৈরি করে এক হিন্দু পরিবার। আর এই হিন্দু পরিবারের নেতৃত্বেই শুরু হয় ধর্মপ্রচার । বিগত 39 বছর ধরে সেই মাজারের নিরাপত্তায় সদা তৎপর ওই পরিবারের সদস্য চমত সেতুয়া । ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে মাজারটি । আর্থিক সাহায্য নিয়েই বছরে একবার এবং সপ্তাহে বৃহস্পতিবার করে এলাকার লোকজনকে খাওয়ানো শুরু করেন চমত । যেখানে কোনও ধর্ম বিভাজন নেই । এক আসনে বসে প্রসাদ খান হিন্দু -মুসলমান সকলে । প্রতি সপ্তাহে উভয় সম্প্রদায়ের প্রায় 300-400 ছেলেমেয়ে মাজারে খেতে আসে। সুফি চাঁদসা বাবার মৃত্যু বার্ষিকীর দিন ভিড় আরও বাড়ে । সংখ্যাটা পৌঁছায় লাখে।
প্রসাদে থাকে পোলাও, বেগুন ভাজা, সাদা ভাত, ডাল, তিন রকমের তরকারি, চাটনি ও পায়েস । এটা সাপ্তাহিক । আর বার্ষিকীর আয়োজনে থাকে আরও অনেককিছু যুক্ত হয় প্রসাদের থালায়। তবে, এই প্রসাদের জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে আর্থিক সাহায্য চান চমত। এভাবেই কেটে গেছে 39 বছর । কেন করেন এতবছর ধরে এই কাজ ? চমতের কথায়, উদ্দেশ্য একটাই । মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি রক্ষা করা ।
তবে একটা চিন্তা প্রায়শই ঘুরপাক খায় চমতের মাথায় । দিনের পর দিন যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, তাতে আগামীদিনে এতজনকে প্রসাদ খাওয়ানো প্রায় অসম্ভব । এবিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তাঁর আক্ষেপ, সাহায্যের জন্য কলকাতা থেকে দিল্লি সব জায়গায় গেছেন তিনি, কিন্তু কোনও লাভ হয়নি । কোনও সাহায্য পাননি তিনি । কেউ এগিয়ে আসেনি । বারবার যাবতীয় কাগজপত্র দেখিয়েছেন । পরিবর্তে পেয়েছেন আশ্বাস । আপাতত অনিশ্চয়তায় মাঝেই মাজার আগলে চমত।