ETV Bharat / state

Pandemic Crisis : লকডাউনে উঠেছে শাড়ি ব্যবসা, সংসার টানতে মেদিনীপুর শহরে টোটো চালান শ্বেতা

author img

By

Published : Oct 23, 2021, 10:29 PM IST

Pandemic Crisis, COVID-19
প্যানডেমিক পরিস্থিতিতে পেশা বদলে এখন টোটো চালান মেদিনীপুরের শ্বেতা

লকডাউনের জন্য পেশা বদল করতে হয়েছে বহু মানুষকে ৷ তেমনই একজন হলেন মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা শ্বেতা চৌধুরী ৷ ছিলেন শাড়ির ব্যবসায়ী ৷ ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন চালান টোটো ৷ এই শহরে মহিলা টোটোচালক তিনি একমাত্র ৷ তাঁর মতো অনেক মহিলাদের কাছেই তিনি হয়ে উঠেছেন অনুপ্রেরণা ৷

মেদিনীপুর, 23 অক্টোবর : লকডাউনের জেরে শাড়ির ব্যবসা লাটে উঠেছে ৷ তবে সংসার তো চালাতেই হবে ৷ তাই বাধ্য হয়েই পেশা বদল করলেন মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা শ্বেতা চৌধুরী । টোটো নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন শহরে ৷ যাত্রীদের পৌঁছে দিচ্ছেন গন্তব্যে ৷ স্ত্রীর কাজে গর্বিত স্বামী সুতনু চৌধুরী । বললেন, "সমাজের সব মহিলা ওকে দেখে উৎসাহ পাবেন ।"

মাধ্যমিক পাশ পুরুলিয়ায় ৷ বিবাহসূত্রে 23 বছর আগে এজেলায় আসেন শ্বেতা ৷ সংসার চালাতে আর্থিক অনটনের মুখোমুখি হয়ে স্বামীর সঙ্গে শাড়ি-জামা-কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন খাপ্রেল বাজারের বাসিন্দা শ্বেতা । বছর সাতেক তাঁর শাড়ির ব্যবসা ভালই চলেছে ৷ বাড়িতে স্বামী স্ত্রী ছাড়া আছে পোষা টিয়াপাখি, একটি কুকুর ও পায়রা । টেনেটুনে ভালই কেটে যাচ্ছিল সংসার ৷ কিন্তু সুখ স্থায়ী হল না ।

শ্বেতা জানান, মহাজনদের খপ্পরে পড়ে 14 লক্ষ টাকার লোকসান হয় ৷ তার উপর শুরু হয় লকডাউন ৷ একে একে বাড়ির সমস্ত জিনিস বিক্রি করা শুরু হয় সংসারের দুমুঠো খাবার জোগাড় করতে গিয়ে । বিভিন্ন সমাজসেবী সংগঠন এবং রাজনৈতিক দলের সাহায্যে কোনও ক্রমে চলতে থাকে । কিন্তু লকডাউনে বাড়তে থাকায় একটা সিদ্ধান্ত নিতেই হয় ৷ তখনই স্বামীর সঙ্গে আলোচনা করে টোটো কেনার সিদ্ধান্ত নেন ৷ গয়না বিক্রি করে 1 লক্ষ 15 হাজার টাকা জোগাড় করে কেনেন টোটোটি । তারপরই শুরু নতুন পথচলা ৷ অখন সারাদিনে 300 থেকে 600 টাকা রোজগার করেন শ্বেতা ।

শুরুতেই অবশ্য কাজটা সহজ ছিল না । শ্বেতা যখন টোটো চালাতে শুরু করতে যাচ্ছেন তখন নতুন করে মেদিনীপুর শহরে টোটো নামানোর অনুমতি ছিল না ৷ তবে শহরের বেশ কিছু মানুষের সহযোগিতায় তা সম্ভব হয় ৷

প্যানডেমিক পরিস্থিতিতে পেশা বদলে এখন টোটো চালান মেদিনীপুরের শ্বেতা

শ্বেতা বলেন, "কাপড়ের ব্যবসা ভালই চলছিল । কিন্তু লকডাউনের জন্য ছবিটা বদলে যায় ৷ গোদের ওপর বিষ ফোঁড়ার মতো, এক মহাজন প্রায় 14 লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় ৷ আমরা রাস্তায় এসে পড়ি । এই অবস্থায় সংসার চালাতে উপায় কিছু ছিল না । তাই বাধ্য হয়েই সোনাদানা বিক্রি করে এই টোটো কিনে ফেলি । প্রথম প্রথম লজ্জা লাগত ৷ কিন্তু পরে সব ঠিক হয়ে গিয়েছে । খেটে রোজগার করি ৷ তাই এটা লজ্জার ব্যাপার নয় । আমার মতো অন্যান্য মহিলারাও প্রয়োজন মতো এগিয়ে আসুক ৷ কোনও কাজই ছোট নয় ।"

স্ত্রীর কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন স্বামী সুতনু চৌধুরী । বলেন, "স্বাধীনভাবে আমার স্ত্রী খেটে রোজগার করে সম্মানের সঙ্গে ৷ আমি গর্বিত । ওর সঙ্গে সমস্ত কাজে সহযোগিতা করব ।"

কোভিডের জেরে বহু মানুষ জীবিকা পরিবর্তন করেছেন কেবলমাত্র সংসার চালানোর জন্য । লকডাউন প্রবল সমস্যায় ফেলেছে কত মানুষকে ৷ চরম আর্থিক সঙ্কটের মুখোমুখি হতে হয়েছে বহু লোককে ৷ সেক্ষেত্রে শ্বেতার এই মানসিকতা আরও অনেককেই উৎসাহ দেবে বলে মনে করছেন আমজনতা ।

আরও পড়ুন : Paschim Medinipur : করোনাকালে দোসর বন্যা, তবু চিরন্তন মাটির দিওয়ালি গড়ছে জঙ্গলমহলের কুমোরপাড়া

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.