ETV Bharat / state

Holi Celebration at Old Age Home: বসন্তে রঙিন হয়ে ওঠে নিঃসঙ্গ জীবনও

author img

By

Published : Mar 7, 2023, 8:09 PM IST

নচিকেতার গান আজও প্রাসঙ্গিক! 50টা রঙিন বসন্ত পেরিয়ে আজ একাকী বৃদ্ধাশ্রমে পুরনো স্মৃতিচারণা পরিবার থেকে বঞ্চিত আবাসিকদের (Old Age Home in Paschim Medinipur) ৷

Holi Celebration at Old Age Home
হোলি নিয়ম করে রং আনে ওদের জীবনে

হোলি নিয়ম করে রং আনে ওদের জীবনে

সতকুই, 7 মার্চ: 50টা বসন্ত পেরিয়ে আসার পর আজ একান্তে বসন্তোৎসব পালন বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের। আর এই বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের দেখভাল করছেন 12 বছর বয়সে ঘর ছাড়া সোসাইটির সম্পাদক। তবে শুধু সুস্থ বৃদ্ধ-বৃদ্ধা নয় বরং শারীরিকও মানসিকভাবে রোগাক্রান্ত বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের ট্রিটমেন্ট সৎকার-সহ দেখভাল করছেন এই আশ্রমের সম্পাদক নিজেই ৷ তাই পেরিয়ে আসা বসন্ত নিয়ে কিছুটা আক্ষেপ এই বৃৃ্দ্ধাশ্রমের আবাসিকদের (Holi Celebration at Old Age Home)।

আজ বসন্ত উৎসবে মেতে উঠেছে রাজ্য ও জেলার মানুষ। এই বসন্ত উৎসব ঘিরে চারিদিকে সাজো সাজো রব। কচিকাঁচা থেকে কিশোর-কিশোরীরা এবং নতুন বিয়ে হওয়া দম্পতিরাও রীতিমতো বসন্ত উৎসবের রঙিন আবির মেখে রঙিন হয়ে উঠেছেন। তবে বসন্ত উৎসবের স্মৃতিচারণা এখনও একান্তভাবে করে চলেছে এককোণে পড়ে থাকা পারুল বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকরা। যারা একসময় তাঁদের বসন্ত উপভোগ করে এসেছেন ছেলেমেয়ে, স্বামী, পরিবার ও পরিজনদের সঙ্গে। এখন সেই বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকরা একাকী দিনাতিপাত করছেন এই আশ্রমের চার দেওয়াল, প্রকৃতি এবং অন্যান্য আবাসিকদের সঙ্গে।

এক্ষেত্রে মনে পড়ে যায় নচিকেতার সেই গান 'ছেলে আমার মস্ত মানুষ, মস্ত অফিসার, মস্ত ফ্ল্যাটে যায় না-দেখা এপার-ওপার' ৷ যেখানে 'মস্ত ফ্ল্যাট দামি দামি আসবাবপত্র, কেবলমাত্র কমদামি ছিলাম একমাত্র তাঁরাই' ৷ ঠিক সেই গান আজও প্রাসঙ্গিক ৷ আজও সেই গানের সারমর্ম বুঝতে পারেন এই বয়স পেরিয়ে আসা বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা। এরকমই কয়েকজন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা রয়েছেন যারা মানসিক দিক দিয়েও অক্ষম। যারা শারীরিক কারণে দুর্বল হয়ে এই আশ্রমে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের কথায় ফুটে উঠেছে নিদারুণ কষ্ট ও দুঃখ।

আরও পড়ুন: রং মাখালেই বিয়ে, জরিমানা! তাই জল খেলেই দোলের আনন্দ নেয় তুরতুরি গ্রাম

কারও ছেলে প্রফেসর তো কারও ছেলে ডাক্তার, কারও বা বড় ব্যবসায়ী। পরিবার-পরিজন নাতি-পুতিদের সঙ্গে বাড়িতে থাকার সামান্যতম ঠাঁই মেলেনি বৃদ্ধ বয়সের এই বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের। তাই মনের দুঃখে আশ্রয় নিয়েছেন আশ্রমে এই চার দেওয়ালে। আর স্মৃতিচারণা করছেন ফেলে আসা সেই 50টা বসন্তের। তবে এই বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা কেউই কখনও দোষ দিচ্ছেন না-নিজের ছেলে-মেয়েদের। কোথাও একটা মায়া, মমতার আঁচল দিয়ে এখনও বাঁচিয়ে রেখেছেন ছেলেদের এবং বৌমা ও পুত্রবধূদের। দোষ দিয়েছেন কেবলমাত্র নিজেদের অদৃষ্টের এবং নিজেদের কপালের।

উল্লেখক্রমে বলা যায় মেদিনীপুর জেলার খড়গপুরের এলাকায় রয়েছে এরকম একটি বৃদ্ধাশ্রম। যার নাম পারুল ওল্ডেজ সোসাইটি। এই আশ্রমে সবেমাত্র পথ চলা, যার বয়স তিন বছর। আশ্রমে শুধু বয়স্ক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা না, বরং যারা বিভিন্ন চিকিৎসাক্ষেত্রে অবহেলিত যাদের পরিবার-পরিজন থেকে দূরে ছুড়ে ফেলা হয়েছে তাঁদেরকে রেখে ট্রিটমেন্ট সঙ্গে মায়া মমতায় দু'বেলা খাবার দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে এখানকার আশ্রমের মানুষজন। এমনকী এই আশ্রমে মারা যাওয়ার পরও পরিবার যখন খোঁজ খবর নেয় না, তাঁদের শেষকৃত্য সম্পন্ন করে শ্রাদ্ধ-শান্তির কাজকর্ম করেন এই আশ্রমের মানুষজন। তাঁদের বক্তব্য অনুযায়ী 'সাত ভাই চম্পা' গল্পকে সার্থক করতে হবে। আর আশ্রয় দিতে হবে এসব নিরাশ্রয়ে থাকা মানুষজনদের।

আরও পড়ুন: Holi Celebration 2023: 'বিকল্প বসন্তোৎসবে' সোনাঝুরিতে মানুষের ঢল, চলছে জমিয়ে আবির খেলা

এদিন আবাসিকরা বলেন, "এক সময় এতগুলো বসন্ত পেরিয়েছি পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব পাড়া-প্রতিবেশীদের নিয়ে। খুশির বিন্দুমাত্র কমতি থাকত না। এই শেষ বয়সে পৌঁছে এসেছি তাই এখন মনে হয়েছে এই আবাসিক জীবনই শ্রেষ্ঠ। কষ্ট হয় দূরে থাকতে কিন্তু থাকতে তো হবেই।" আশ্রমের সম্পাদক ডঃ রঘু নন্দন হালদার বলেন, আমিও 12 বছর থেকে ঘরছাড়া। এরপর যুদ্ধ চলে, যে যুদ্ধটা শেষপর্যন্ত থেমেছে এখন এসে। তাই সাত ভাই চম্পার সেই গল্পটাকে সার্থক করতেই এই আশ্রমের দেখভাল করা। শুধু আবাসিকদের দেখভাল নয় সেই সঙ্গে তাঁদের শরীর সুস্থ, স্বাভাবিক এবং চিকিৎসাও করি আমি ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.