ETV Bharat / state

6 মাস ধরে পেট-ব্যাথা, অস্ত্রোপচারে বেরোল গোটা একটা পেন

author img

By

Published : Jun 15, 2021, 12:14 PM IST

এই হাসপাতাল ওই হাসপাতাল ঘুরেও কোনও লাভ হয়নি ৷ হাজারো টেস্টের পরও চিকিৎসকরা ধরতে পারেননি সমস্যাটি কোথায় ৷ শেষে মেদিনীপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রপচার করে পেট থেকে পেন বার করলেন চিকিৎসকরা ৷

সুদীপ মঠ
সুদীপ মঠ

সবং ,15 জুন : দীর্ঘ ছ'মাস ধরে পেটে ব্যাথা ৷ পায়ুছিদ্র দিয়ে রক্ত ঝরছে সারাক্ষণ ৷ যন্ত্রণায় রীতিমতো কাহিল মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক ৷ হাজারো হাসপাতালের চক্কর কেটেও কোনও লাভ হয়নি ৷ রকমারি শারীরিক পরীক্ষা করিয়েও জানা যায়নি পেটে ব্যথার আসল কারণ ৷ অবশেষে মেদিনীপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে কোলোনোস্কপি করে জানা গেল পেটে একটা আস্ত পেন থাকার কারণেই এই বিপত্তি ৷ সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আপাতত সুস্থ আছে 19 বছরের সুদীপ মঠ ৷

মুকুন্দ মঠ ও শেফালি মঠের অভাবের সংসার ৷ সবংয়ের মুকুলবাবু পেশায় খেলনা ব্যবসায়ী ৷ লকডাউনের জেরে পাঁচ জনের সংসার চালাতে রীতিমতো হিমসিম খাচ্ছেন তিনি ৷ তার মধ্যে মেজো ছেলে ছোট থেকেই মানসিক ভারসাম্যহীন ৷ এরই মধ্যে হঠাৎ একদিন তার অস্বস্তি বুঝতে পেরে তাকে দেখতে গিয়ে লক্ষ্য করেন পায়ুছিদ্র দিয়ে রক্ত ঝরছে ৷ তড়িঘড়ি তাকে ডেবরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ কিন্তু সমস্যা বুঝতে না পেরে তাঁকে রেফার করা হয় মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ৷ সেখানে কিছুদিন ভর্তি থাকার পরও অবস্থার বিন্দুমাত্র উন্নতি হয়নি তার ৷ তারপর সেখান থেকে ভাল ট্রিটমেন্টের জন্য ভুবনেশ্বরের এইমসে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ কিন্তু লাভের লাভ কিছু হয়নি ৷ বরং তার শারীরিক অবস্থা ক্রমশ জটিল হতে থাকায় বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয় ৷

অস্ত্রোপচারে বেরোল গোটা একটা পেন, কী বলছেন আত্মীয় ও চিকিৎসকরা ?

ইতিমধ্যেই এই হাসপাতাল ওই হাসপাতাল ঘুরে পুঁজি প্রায় শেষ ৷ যদিও স্বাস্থ্যসাথীর কার্ডে চিকিৎসা চলছিল সুদীপের ৷ কিন্তু যাতায়াত বাবদ খরচা , ওষুধের খরচা , সংসার চালানোর খরচা ? সেগুলির দায়িত্ব তো মুকুন্দবাবুকেই নিতে হয়েছে ৷ তাহলে কী টাকার অভাবে ছেলের চিকিৎসা থমকে যাবে ? সেইসময় এক বন্ধু মারফৎ মেদিনীপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের ঠিকানা পান ৷

সেখানকার এক ডাক্তারকে বিষয়টি বললে, আশিস কুমার মণ্ডলের নেতৃত্বে একটি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয় ৷ সুদীপের ফের নানা রকম টেস্ট করা হয় ৷ তখন কোলোনোস্কপির মাধ্যমে জানা যায় , তার পেটে আড়াআড়িভাবে একটি পেন আটকে আছে ৷ উপরন্তু দীর্ঘ সময় ধরে তা থাকায় পেনটির আশেপাশে ইনফেকশনও তৈরি হয়েছে ৷ ঠিক হয় 4 জুন অস্ত্রপচার করা হবে ৷ সেইমতো স্ত্রী ও প্রসূতি বিভাগের রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আশিসকুমার মণ্ডল এর নেতৃত্বে দীপক দাস (এনেসথেসিস্ট) এবং ডাক্তার সুনন্দিতা বেরা সহ মোট 7 জনের টিম নিয়ে এই অস্ত্রপচার করা হয় ৷ টানা 5 ঘণ্টার সফল অস্ত্রপচারের পর সুস্থ হয়ে ওঠে সে ৷

চিকিৎসক দীপক দাস জানান , রোগী মানসিকভাবে ভারসাম্য হওয়ায় যথেষ্ট জটিল ছিল ৷ কিন্তু অপারেশন সফল হয়েছে ৷ এখন রোগী পুরোপুরি সুস্থ আছে ৷ সুদীপের বাবা মুকুন্দ মঠ বলেন, " দীর্ঘদিন পর স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারছি ৷ ছেলেকে আবার সুস্থ দেখতে পাব ৷ অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই ডাক্তারদের ৷ "

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.