ETV Bharat / state

মৃতদেহ সৎকারের পর লালারস সংগ্রহ ? সেলিমের দাবি নাকচ নবান্নের

author img

By

Published : Apr 21, 2020, 10:25 PM IST

Updated : Apr 21, 2020, 10:32 PM IST

মারা যাওয়ার পর তাঁর শেষকৃত্যও হয়ে গিয়েছিল ৷ তাহলে কীভাবে তাঁর লালারস সংগ্রহ করল মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ৷ প্রশ্ন তুললেন CPI(M) নেতা মহম্মদ সেলিম ৷

মহম্মদ সেলিম
মহম্মদ সেলিম

মালদা, 21 এপ্রিল : দেহ সৎকারের পর কোরোনা পরীক্ষার জন্য লালারস নেওয়া হল কীভাবে ? সম্প্রতি মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে উঠে আসা একটি তথ্যকে নিয়ে এভাবেই প্রশ্ন তুলেছেন CPI(M) নেতা মহম্মদ সেলিম ৷ যদিও বাম নেতার এই দাবিকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে নবান্ন ৷

সেলিম দাবি করেন, ওই ব্যক্তির শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার পরদিন নেওয়া হয় লালারস ৷ অভিযোগের পক্ষে তিনি প্রমাণও পেশ করেন ৷ তবে, সেলিমের এই অভিযোগ মিথ্যে বলে জানানো হয় নবান্নের তরফে ৷ রাজ্য সরকারের তরফে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়, মৃত্যুর আগেই ওই ব্যক্তির লালারস সংগ্রহ করা হয়েছিল ৷ উত্তরবঙ্গে থেকে সেই নমুনা SSKM হাসপাতালে এসে পৌঁছায় পরের দিন ৷ যেহেতু হাসপাতালের তরফে পরদিন নমুনা গ্রহণ করা হয়েছে, তাই রিপোর্টে সেই তারিখ রয়েছে ৷ এতে তথ্য গোপন করার কিছু নেই বলে জানায় নবান্ন ৷

প্রসঙ্গত, 12 এপ্রিল জ্বর ও শ্বাসকষ্টের কারণে মালদা মেডিকেলে ভরতি হন দক্ষিণ দিনাজপুরের তপনের বাসিন্দা এক ব্যক্তি ৷ তিনি পেশায় ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতেন ৷ পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে উত্তরপ্রদেশের গাজ়িয়াবাদে থাকতেন তিনি ৷ লকডাউনের মধ্যে সেখানেই তাঁর হঠাৎ জ্বর হয় ৷ সঙ্গে শ্বাসকষ্ট ৷ শুধু তাই নয়, তিনি ছিলেন AIDS আক্রান্তও ৷ সেখানে চিকিৎসার কোনও সুযোগ না পেয়ে স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে গাজ়িয়াবাদ থেকে বাড়ি ফিরে আসেন ওই ব্যক্তি ৷ কিন্তু, কোরোনা আতঙ্কে গ্রামবাসীরা বাড়িতে ঢুকতে দেননি তাঁকে ৷ তাঁদের প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় তপন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৷ তারপরই 12 এপ্রিল বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে রেফার করা হয় ৷ সেখানকার চিকিৎসকরা তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসা করেই কোরোনা সন্দেহ করেন ৷ সঙ্গে সঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয় মালদা মেডিকেলে ৷ ভরতি করা হয় মালদা হাসপাতালের জেনেরাল ওয়ার্ডে ৷

হাসপাতালের রেকর্ড অনুযায়ী, সেদিনই দুপুর 12টা 25মিনিটে মারা যান ওই ব্যক্তি ৷ মৃত্যুর কারণ হিসেবে দেখানো হয় সেপটিসিমিয়া ও কার্ডিয়ো রেসপিরেটরি ফেলিওর ৷ চিকিৎসক হিসেবে মৃত্যুর শংসাপত্রে স্বাক্ষর করেন অভিজিৎ সাহা ৷ কয়েক ঘণ্টা পর তাঁর দেহ পরিবারকে দিয়ে দেওয়া হয় ৷ ওইদিনই মালদার সাদুল্লাপুর মহাশ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় ৷ কিন্তু, তাঁর মৃত্যুতে হাসপাতালের জেনেরাল ওয়ার্ডে কোরোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ৷ খবর পৌঁছায় দক্ষিণ দিনাজপুরের তপনেও ৷ অনেকেই প্রশ্ন করেন, তাঁর লালারস পরীক্ষা করা হল না কেন ? যদিও মালদা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, মৃতের লালারস সংগ্রহ করা হয়েছে ৷ তা কলকাতায় পাঠানো হয়েছে ৷

এতদূর পর্যন্ত সব ঠিকই চলছিল ৷ বিতর্ক বাধে তাঁর লালারস পরীক্ষার রিপোর্ট মালদা হাসপাতালে পৌঁছাতেই ৷ রিপোর্টে দেখা যায়, ওই ব্যক্তির লালারস 13 এপ্রিল সংগ্রহ করা হয়েছে ৷ 14 এপ্রিল নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৷ রিপোর্ট নেগেটিভ ৷ কিন্তু, এক ব্যক্তির মৃতদেহ সৎকারের পর কীভাবে তাঁর লালারস সংগ্রহ করা হল, তা নিয়েই উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন ৷ পরিস্থিতি হাতের বাইরে দেখে এই বিষয়ে কথা বলা বন্ধ করে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও ৷ তবে, রাজ্য সরকার এভাবে অনেক কোরোনা সংক্রান্ত তথ্য গোপন করছে বলে অভিযোগ তোলেন মহম্মদ সেলিম ৷ বিষয়টি নিয়ে টুইটও করেন তিনি ৷ লেখেন, "মালদার এক শ্মশানের রিপোর্ট বলছে, 12 এপ্রিল এক ব্যক্তি মারা যান । ওইদিনই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় । তাঁর টেস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ আসে । তবে 13 এপ্রিল কীভাবে তার স্যাম্পল নেওয়া হল । যার রিপোর্ট এসেছে 14 তারিখ ।" ফেসবুকে ওই ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে একই পোস্ট করেন তিনি ৷

মহম্মদ সেলিমের করা টুইট
মহম্মদ সেলিমের করা টুইট

রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়, 11 এপ্রিল ওই ব্যক্তি মালদা মেডিকেলে ভরতি হয়েছিলেন ৷ স্বাস্থ্য দপ্তরের দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই ব্যক্তির TB ও AIDS ছিল ৷ 12 তারিখ তাঁর কার্ডিয়ো রেসপিরেটরি ফেলিওর হয় ৷ মৃত্যুর আগে তাঁর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা দেখে চিকিৎসকরা সোয়াবের পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন ৷ সেই মতো 12 এপ্রিল তাঁর নমুনা সংগ্রহ করা হয় ৷ IPGMER 13 এপ্রিল সেই স্যাম্পেল রিসিভ করে । 14 তারিখ জানা যায়, তাঁর রিপোর্ট নেগেটিভ । এদিকে, 12 তারিখে তাঁর মৃত্যু হলে স্ত্রীর হাতে দেহ হস্তান্তর করা হয় । একই সঙ্গে নবান্ন জানিয়েছে, ওই ব্যক্তির বাড়ি মালদায় নয় । তাঁর বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুরের তপনে ।

Last Updated : Apr 21, 2020, 10:32 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.