ETV Bharat / state

Laccha-Semai Business : মূল্যবৃদ্ধির প্রকোপ লাচ্ছা-সিমাইয়ের ব্যবসায়, একলাফে দ্বিগুণ বাড়ল দাম

author img

By

Published : Apr 27, 2022, 10:41 PM IST

Loss in Laccha Semai Business in Kaliachak Due to Price Hike
Loss in Laccha Semai Business in Kaliachak Due to Price Hike

মূল্যবৃদ্ধির প্রকোপ এবার ঈদের লাচ্ছা-সিমাইয়ের ব্যবসায় (Loss in Laccha Semai Business in Kaliachak Due to Price Hike) ৷ মালদার কালিয়াচকে লাচ্ছা-সিমাইয়ের পাইকারি ও খুচরো বাজার রীতিমত আগুন ৷ গত তিন বছর করোনা সংক্রমণের জেরে ব্যবসা মন্দা গিয়েছে ৷ এবার সেই তালিকায় যোগ হয়েছে মূল্যবৃদ্ধি ৷

মালদা, 27 এপ্রিল : সপ্তাহ পেরোলেই খুশির ঈদ ৷ গত তিন বছর ঈদের সব রং শুষে নিয়েছিল করোনা ৷ সুজাপুর ঈদগাহে লক্ষাধিক মানুষকে একসঙ্গে নমাজ পাঠ করতে দেখা যায়নি ৷ তৃতীয় ঢেউয়ের পর করোনার সংক্রমণ বর্তমানে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে ৷ ফলে এবার খুশির ঈদ পালন যে দ্বিগুণ উৎসাহে হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না ৷ কিন্তু, ঈদ-উল-ফিতরে লাচ্ছা-সিমাইয়ের দোকানই এ বছর সেভাবে বসেনি ৷ কারণ, আকাশছোঁয়া দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি ৷ নিজেদের পেট চালাতেই এখন চোখে সর্ষেফুল দেখছেন লাচ্ছা-সিমাইয়ের ব্যবয়াসীরা ৷ তাই আগের তিন বছরের মতো এ বারেও কালিয়াচকে মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রায় কোটি টাকার লাচ্ছা-সিমাইয়ের ব্যবসা ৷ অথচ প্রতি বছর এই ব্যবসার উপর নির্ভর করে থাকেন কালিয়াচকের বহু মানুষ ৷ এই ব্যবসা থেকে আয় হওয়া অর্থেই অধিকাংশ মানুষের সারা বছর সংসার চলে ৷ তাই লাচ্ছা-সিমাইয়ের ব্যবসা সেভাবে না জমায়, উৎসবের আলোতেও তাঁদের মুখে অন্ধকার (Loss in Laccha Semai Business in Kaliachak Due to Price Hike) ৷

কথা হচ্ছিল কালিয়াচকের চৌরঙ্গি মোড়ে লাচ্ছা-সিমাইয়ের খুচরো ব্যবসায়ী সৈয়দ আলির সঙ্গে ৷ তিনি জানালেন, “করোনায় তিন বছর লাচ্ছার ব্যবসা বন্ধই ছিল ৷ এবার ব্যবসা শুরু হয়েছে বটে ৷ কিন্তু, লাচ্ছা-সিমাইয়ের দাম এত বেড়েছে যে মানুষ কিনতেই পারছে না ৷ 60 শতাংশ মানুষ দাম শুনেই চলে যাচ্ছে ৷ বাকিরাও প্রয়োজনের তুলনায় কম কিনছে ৷ মানুষের কাছে এখন টাকা নেই ৷ আগের তিনটি বছর করোনা মানুষের টাকা শেষ করে দিয়েছে ৷ আর এবার যে হারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, তাতে মানুষের পেট চালানোই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ এবার আমরা 150-160 টাকা কিলো দরে লাচ্ছা বিক্রি করছি ৷ আগে এর দাম ছিল 105-110 টাকা কিলো ৷ ডালডার দাম আগে ছিল 1650 টাকা (বনষ্পতি) ৷ এবার তার দাম 25550 টাকা ৷ ময়দার দাম 950 টাকা থেকে বেড়ে 1350 টাকা হয়েছে ৷ এখানে স্থানীয়ভাবে তৈরি লাচ্ছার সঙ্গে ভাগলপুর থেকে আসা স্পেশাল লাচ্ছাও বিক্রি হয় ৷ বাজারের অবস্থা ভাল নয় ৷”

মূল্যবৃদ্ধির প্রকোপ লাচ্ছা-সিমাইয়ের ব্যবসায়, একলাফে দ্বিগুণ বাড়ল দাম

সকাল সকাল বাড়ির জন্য লাচ্ছা কিনতে এসেছিলেন মহম্মদ আবু বক্কর ৷ তিনি টোটো চালান ৷ বললেন, “গত তিন বছর করোনা গিয়েছে ৷ আর এবার লাচ্ছা-সিমাইয়ের যা দাম বেড়েছে, তাতে হাত দেওয়াটাই মুশকিল হয়ে যাচ্ছে ৷ আগে আমরা 80-90 টাকা কিলো দরে লাচ্ছা কিনেছি ৷ এবার তার দাম হয়েছে 180-190 টাকা ৷ যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, তাতে সংসার চালানোই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ গ্যাস সিলিন্ডারের দাম হাজার টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে ৷ যে চালের বস্তার দাম 800 টাকা ছিল, সেটা এখন 1100-1500 টাকা ৷ আমরা দিনে 200-300 টাকা রোজগার করি ৷ কীভাবে চলব ? কীভাবে খাব ? পেট্রল-ডিজেলের দাম বেড়েই চলেছে ৷ পরিস্থিতি এমন যে বাইরে চা খাওয়ার পয়সাটুকুও থাকছে না ৷ দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধির জেরে সবকিছুই নষ্ট হয়ে গিয়েছে ।”

আরও পড়ুন : Pond filled Illegally : 1 বছরেই জলাশয় ভরাট, ঘুমিয়ে মালদা প্রশাসন

13 বছর ধরে ঈদের বাজারে লাচ্ছার পাইকারি ব্যবসা করেন কালিয়াচকের রবিউল ইসলাম ৷ তিনি বলেন, “আগের তুলনায় এ বার লাচ্ছার বাজার নেই বললেই চলে ৷ এর মূল কারণ রুশ-ইউক্রেনের যুদ্ধ । এই যুদ্ধ শুধু পেট্রোল-ডিজেল নয়, প্রতিটি জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে । এই পরিস্থিতিতে খদ্দেররা লাচ্ছা-সিমাইয়ে হাত দিতে চাইছেন না বললেই চলে ৷ লাচ্ছা-সিমাইয়ের উপকরণের দামও অনেক বেড়ে গিয়েছে ৷ রমজান মাসে লাচ্ছা-সিমাই খেয়েই মুসলমানরা দিন কাটান ৷ কিন্তু, এ বার তা হচ্ছে না ৷ এবা র ব্যবসা অসম্ভব মার খাবে ৷ প্রতি ঈদের আগে আমারই লাখ চারেক টাকার ব্যবসা হয় ৷ সব পাইকারদের ধরলে 25 লাখ টাকার ব্যবসা চলে ৷ এ বার সব মিলিয়ে পাঁচ লাখ টাকার ব্যবসা হবে কিনা সন্দেহ ।”

আরও পড়ুন : জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, খাঁড়ার ঘা উত্তরের পর্যটন শিল্পে

কালিয়াচকেই লাচ্ছা তৈরির কারখানা রয়েছে মহম্মদ ওলি শেখের ৷ ব্যবসার পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর গলাতেও রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ ৷ তিনি জানান, “অন্যান্য বছর প্রতি ঈদের মরশুমে প্রায় এক কোটি টাকার ব্যবসা হয় ৷ কিন্তু, এ বার পরিস্থিতি খুব খারাপ ৷ করোনার জন্য এমনিতেই মানুষের রোজগার কমে গিয়েছে ৷ তার উপর রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য পেট্রোপণ্যের দাম অনেকটা বেড়ে গিয়েছে ৷ তার প্রভাব পড়েছে বাজারে ৷ সব জিনিসের দামই আকাশ ছুঁয়েছে ৷ এই পরিস্থিতিতে পাইকাররা লাচ্ছা-সিমাই নিতে পারছেন না ৷ খুচরো বিক্রেতারা মাল বিক্রি করতে পারছেন না ৷ আমরা প্রতি কিলো লাচ্ছা-সিমাই 110 টাকা কিলো দরে বিক্রি করছি ৷ আগে 60-70 টাকা কিলো দরে বিক্রি করতাম ৷ 7-8 রকমের লাচ্ছা আমার কারখানায় তৈরি হয় ৷ তার বিভিন্ন রকম দাম ৷ এ বার আমাদের ব্যবসা তিনভাগই মার খাবে ৷’’

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.