ETV Bharat / state

Water Crisis in Cultivation: ভরা শ্রাবণেও বৃষ্টির ঘাটতি, মাথায় হাত ধান ও পাট চাষিদের

author img

By

Published : Aug 3, 2023, 8:41 PM IST

Etv Bharat
বর্ষাকালে বৃষ্টির ঘাটতি

ভরা বর্ষাকালেও সেভাবে বৃষ্টির দেখা নেই ৷ আবহাওয়া অফিসও বলছে বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে রাজ্যে ৷ তাতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন মালদার ধান ও পাটচাষিরা ৷

বৃষ্টির ঘাটতিতে আমন ধান ও পাঠ চাষে ক্ষতির আশঙ্কা চাষিদের

মালদা, 3 অগস্ট: ভরা শ্রাবণ ৷ অথচ এখনও সেভাবে বৃষ্টির দেখা নেই ৷ আলিপুর আবহাওয়া অফিসও জানাচ্ছে বৃষ্টির ঘাটতির কথা ৷ এমতাবস্থায় জলের অভাবে চরম সমস্যায় পড়েছেন জেলার আমন ধান ও পাটচাষিরা ৷ জমি থেকে পাট কেটে নিলেও জলের অভাবে তা পচাতে পারছেন না ৷ বিশেষ করে জেলার বরিন্দ এলাকা হিসাবে পরিচিত চারটি ব্লকে সমস্যা সবচেয়ে বেশি ৷ আমন ধানের চারা বীজতলাতেই শুকিয়ে যাচ্ছে ৷ জমির ফাটল আরও চওড়া হচ্ছে ৷ এই পরিস্থিতিতে এখন আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া উপায় নেই চাষিদের ৷

আষাঢ় মাস শুরু হলেই সাধারণত আমনচাষিদের ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায় ৷ ততদিনে তৈরি হয়ে যায় ধানের বীজতলাও ৷ বৃষ্টি নামলেই শুরু হয় ধান রোয়ার কাজ ৷ কিন্তু এবার আবহাওয়া প্রতিকূল ৷ এল নিনোর প্রভাবে বর্ষায় ঘাটতি দেশজুড়ে ৷ তার প্রভাব পড়েছে এই জেলাতেও ৷ বিশেষ করে চরম সমস্যায় পড়েছেন বরিন্দ এলাকার চারটি ব্লকের কৃষকরা ৷ ব্লকগুলি হল পুরাতন মালদা, হবিবপুর, বামনগোলা এবং গাজোল ৷ ব্লকগুলিতে জলসেচের ব্যবস্থা বলতে একমাত্র সাবমার্সিবল পাম্প ৷ সব জায়গায় আবার সেই পাম্প বসানো যায় না ৷ কারণ, জলস্তর মাটির অনেক গভীরে ৷ অতটা নীচে পাইপ পৌঁছয় না ৷ ফলে চাষিদের বৃষ্টির জলের উপরেই নির্ভর করতে হয় ৷ জলের অভাবে এখন জমি ফেটে চৌচির ৷ তাই বীজতলায় চারা তৈরি হয়ে গেলেও চাষিরা তা রুইতে পারছেন না ৷

Malda Cultivation
বর্ষাকালে বৃষ্টির অভাবে চাষের জমির অবস্থা

এই বিষয়ে কবিরাজ হেমব্রম নামে এক আমনচাষি বলেন, "তেমন বৃষ্টি এখনও নেই ৷ সব জমি শুকিয়ে গিয়েছে ৷ সাবমার্সিবলের জলে কোনওরকমে ধান রুইছি ৷ এছাড়া উপায় যে নেই ! বৃষ্টি হলে পুরো জমিতে ধান লাগাতাম ৷ সাবমার্সিবলের জলে সামান্য কিছু জমিতে ধান রুইছি ৷ সাবমার্সিবলের জলও সব জায়গায় পাওয়া যায় না ৷ যেখানে পাওয়া যায়, সেখানেও ভালো জল ওঠে না ৷ বৃষ্টির অভাবে এবার শুধু ধান নয়, লঙ্কা ও পাট-সহ অনেক ফসলের ক্ষতি হয়েছে ৷ অবস্থা খুব খারাপ ৷"

আরেক চাষি অনিল হেমব্রমের কথায়, "এবার একেবারেই বৃষ্টি নেই ৷ কেউ ধান লাগাতে পারছে না ৷ পাট পচানোর জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না ৷ নদীর জলও শুকিয়ে গিয়েছে ৷ মানুষ বড্ড বেকায়দায় ৷ খুব ক্ষতি হয়ে গেল ৷ আমাদের মতো চাষিরা মরে গেল ৷ ধান চাষ করতে না-পেরে মানুষ পেটের দায়ে ভিনরাজ্যে কাজে চলে যাচ্ছে ৷ অন্যান্যবার এই সময় ভালো বৃষ্টি হয় ৷ এবার বৃষ্টিই নেই ৷ এভাবে আর কয়েকটা দিন চললে জমি এবার পতিত থেকে যাবে ৷ চাষ হবে না ৷"

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে খবর, বছরের এই সময় পর্যন্ত মালদা জেলায় গড়ে 612.1 মিলিমিটার বৃষ্টি হয় ৷ কিন্তু এবার সেই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 473.2 মিলিমিটার ৷ অর্থাৎ বৃষ্টির ঘাটতি 22.7 শতাংশ ৷ জেলার এক লাখ 48 হাজার 300 হেক্টর জমিতে আমনের চাষ হয় ৷ কিন্তু জলের অভাবে এখনও পর্যন্ত মাত্র 29 হাজার 269 হেক্টর জমিতে ধানের চারা রোয়া হয়েছে ৷

জেলা কৃষি দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর দিব্যেন্দু মজুমদার বলেন, "মালদার বরিন্দ এলাকার আমন চাষ বৃষ্টির উপরেই নির্ভরশীল ৷ আমি নিজেও ওই এলাকায় গিয়ে দেখেছি, সাবমার্সিবলের জলে ধান রোয়া হলেও পরে জলের অভাবে চারা শুকিয়ে যাচ্ছে ৷ তবে অগস্টে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে ৷ গত কয়েক বছর ধরে আমরা অগস্টে বৃষ্টি লক্ষ্য করেছি ৷ তবে আমরা দ্বিতীয় পরিকল্পনাও করে রেখেছি ৷ জলের অভাবে চাষিরা আমন চাষ না করতে পারলে তাদের কালো কলাইয়ের বীজ বিনামূল্যে দেওয়া হবে ৷ রবি মরশুমেও বিভিন্ন ডাল, শস্য এবং সরষের বীজ তাদের দেওয়া হবে ৷ এছাড়াও আমরা প্রত্যেক চাষিকে বাংলা কৃষি বিমার যোজনায় নিজেদের নাম তোলানোর জন্য আবেদন জানাচ্ছি ৷ সেক্ষেত্রে তাঁরা আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাবেন ৷ গত বছরও পুরাতন মালদা, হবিবপুর ও বামনগোলা ব্লকের বেশ কিছু কৃষক এই বিমা প্রকল্পে আর্থিক সাহায্য পেয়েছেন ৷"

আরও পড়ুন : জলের অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে পাট গাছ, ক্ষতির মুখে চাষিরা

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.