ETV Bharat / state

অগ্রিম শোধ না করায় মেলেনি বাড়ি ফেরার অনুমতি, ভিনরাজ্যে মৃত্যু মালদার পরিযায়ী শ্রমিকের!

author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Nov 22, 2023, 2:57 PM IST

Migrant Worker Death
পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু

Migrant Worker Death: ঠিকাদারের কাছ থেকে অগ্রিম বা দাদন নিয়ে কাজে গিয়েছিলেন ভিনরাজ্যে ৷ সেই অগ্রিমের টাকা শোধ না হওয়ায় অসুস্থতার সত্ত্বেও বাড়ি ফেরার অনুমতি মেলেনি কোম্পানির তরফে ৷ ভিনরাজ্যেই মৃত্যু হল মালদার এক পরিযায়ী শ্রমিকের ৷ ক্ষতিপূরণের দাবি পরিবারের ৷

ভিনরাজ্যে মৃত্যু মালদার পরিযায়ী শ্রমিকের

মালদা, 22 নভেম্বর: নিজের জীবন দিয়ে 'দাদন' শব্দের মানে বোঝালেন মালদার এক পরিযায়ী শ্রমিক ৷ উত্তরাখণ্ডে কাজে যাবেন বলে ঠিকাদারের কাছ থেকে দাদন বা অগ্রিম টাকা নিয়েছিলেন তিনি ৷ কাজে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন ৷ কিন্তু দাদনের টাকা শোধ হয়নি ৷ তাই বারবার আর্জি জানালেও ঠিকাদার কিংবা কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তাঁকে বাড়ি ফেরার অনুমতি দেয়নি ৷ শেষ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে তাঁর ৷ বুধবার সকালে তাঁর কফিনবন্দি দেহ গ্রামে ফিরে এসেছে ৷ এই ঘটনায় ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছে গ্রামবাসীরা ৷

40 বছর বয়সি সুজন পাহাড়িয়ার বাড়ি পুরাতন মালদার যাত্রাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের বলদেওরা শিমুলডাঙা গ্রামে ৷ গ্রামটি পুরোপুরি আদিবাসী অধ্যুষিত ৷ বেশিরভাগ মানুষজন শ্রমিকের কাজ করেন ৷ তার মধ্যে অধিকাংশ ভিনরাজ্যে কাজে যান ৷ এক ঠিকাদারের কাছে দাদন অর্থাৎ অগ্রিম নিয়ে মাস তিনেক আগে উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনে কাজে যান সুজন ৷ দু'মাস কাজ করার পরেই ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি ৷ সেখানকার এক চিকিৎসকের কাছে যান ৷ তাঁর পরামর্শমতো ওষুধও খান ৷ কিন্তু সুস্থ হননি ৷ তাই তিনি ঠিকাদার ও কোম্পানির কর্তাদের কাছে আর্জি জানান, তাঁকে যেন বাড়ি ফিরতে দেওয়া হয় ৷ সুস্থ হওয়ার পর তিনি ফের কাজে যোগ দেবেন ৷ কিন্তু তখনও দাদনের টাকা পরিশোধ হয়নি বলে তাঁকে বাড়ি ফিরতে দেওয়া হয়নি ৷

দেরাদুনের গ্রামীণ এক চিকিৎসকের পরামর্শ মতোই তাঁকে ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছিল ৷ সুজনের শারীরিক পরিস্থিতি আরও জটিল হলে ঠিকাদারের তরফে তাঁর স্ত্রীকে বিষয়টি জানানো হয় ৷ স্বামীর অসুস্থতার খবর পেয়েই দেরাদুনের উদ্দেশ্যে রওনা দেন স্ত্রী মাইডি হেমব্রম ৷ গত পরশু তিনি সেখানে পৌঁছে পরিস্থিতি দেখে সঙ্গে সঙ্গে স্বামীকে স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে ভরতি করেন ৷ কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি ৷ মঙ্গলবার ভোরে মৃত্যু হয় সুজনের ৷ গতকালই অ্যাম্বুলেন্সে স্বামীর দেহ নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন মাইডি ৷ বুধবার সকালে গ্রামে ফিরে আসেন তিনি ৷

সুজনের এক আত্মীয় সুনীল পাহাড়িয়া বলেন, "মৃত সম্পর্কে আমার দাদা ৷ ঠিকাদারের অধীনে ও বাইরে কাজ করতে গিয়েছিল ৷ সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়ে ৷ খবর পেয়ে বউদি দুই ছেলে, এক মেয়েকে রেখে দেরদুন চলে যান ৷ দাদাকে সেখানকার হাসপাতালে ভরতি করেন ৷ যদিও পরদিন ভোরে দাদার মৃত্যু হয় ৷ আমি চাই, যে ঠিকাদার ও কোম্পানির অধীনে ও কাজ করছিল, তারা দাদার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিক ৷ নইলে তিনটি বাচ্চাকে নিয়ে বউদি অথৈ জলে পড়বে ৷"

যাত্রাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের প্রতিনিধি রঞ্জন লোহার বলেন, "দাদনে বাইরে কাজে গিয়ে সুজনের মৃত্যু হয়েছে ৷ ভিনরাজ্যে অসুস্থ হয়ে পড়লেও ঠিকাদার কিংবা কোম্পানি তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেনি ৷ বিনা চিকিৎসাতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে ৷ এর জন্য ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট কোম্পানি দায়ী ৷ সুজনের তিনটি ছোট ছোট বাচ্চা আছে ৷ ওঁ বাড়ির একমাত্র রোজগেরে সদস্য ছিল ৷ এই ঘটনায় আমি ঠিকাদার এবং ওই কোম্পানির কাছে সুজনের পরিবারের জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছি ৷"

আরও পড়ুন:

  1. সাড়ে চার হাজার টাকার জন্য ঠিকাদারকে 'খুন', কাঠগড়ায় পরিযায়ী শ্রমিক
  2. ভিন রাজ্যে মৃত্যু বাংলার শ্রমিকের, চলন্ত ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে আহত আরও এক
  3. ভিন রাজ্যে গিয়ে মৃত্যু পরিযায়ী শ্রমিকের! 'বাংলায় কাজ নেই', অভিযোগ পরিবারের
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.