ETV Bharat / state

Durga Pujo 2021 : সিরাজউদৌল্লার আমলে প্রবর্তিত পুজোয় এখনও দেখা মেলে নীলকণ্ঠ পাখির

author img

By

Published : Oct 7, 2021, 7:42 PM IST

pujo
pujo

এবার 360 বছরে পা দিল মালদার দে বাড়ির দুর্গাপুজো ৷ বর্তমানে দে পরিবারের পাঁচ ভাই এই পুজো করে আসছেন । এখনও নাকি পুজোর চারদিন ঠাকুরদালানে নীলকণ্ঠ পাখি দেখতে পাওয়া যায় ।

মালদা, 7 অক্টোবর : বাংলায় তখন সিরাজউদ্দৌল্লার রাজত্ব । বর্ধমানের বৈচিগ্রামে চলছে মহামায়ার আরাধনা । মহাষ্টমী তিথিতে ঢাকের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে দূর থেকেও । হঠাৎ সেই আওয়াজ থেমে গেল । খানিক পরেই কামানের গর্জন । শুধু বৈঁচিগ্রাম নয়, আশেপাশের গ্রামের মানুষজনও বুঝে গেলেন, সন্ধিপুজোর সময় উপস্থিত । মহানবমী আগত প্রায় ।

আজ থেকে প্রায় 360 বছর আগে এভাবেই প্রসিদ্ধ ছিল বৈঁচিগ্রামের দে পরিবারের পুজো । যে পুজোয় চারদিন ধরে মায়ের কাঠামোয় উড়ে এসে বসত নীলকণ্ঠ পাখি । তার ডানায় যেন লেখা থাকত মায়ের উপস্থিতি । এখনও নাকি পুজোর চারদিন দে পরিবারের ঠাকুরদালানে তার দেখা মেলে ।

পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈচিগ্রামে এই পুজো শুরু হলেও সেখানে বেশিদিন জমিদারি ধরে রাখতে পারেননি দে পরিবারের পূর্বসূরীরা । ডাকাতদের আক্রমণে তাঁদের প্রাণ বাঁচানোই দায় হয়ে পড়েছিল । তাই তাঁরা সেখানকার জমিদারি বিক্রি করে চলে যান অধুনা বাংলাদেশের চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার মহারাজপুর গ্রামে । পরবর্তী সময়ে সেখানে আবার জমিদারি পত্তন করেন তাঁরা । এভাবেই চলেছে দীর্ঘদিন ।

আরও পড়ুন : Durga Pujo 2021 : মণ্ডপের পথে উমা, কন্যা বিদায়ের বিষাদ কুমোরটুলিতে

দেশভাগের সময় তাঁরা চলে আসেন মালদা জেলায় । কারণ, ভারতের মালদা আর বাংলাদেশের চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলা একেবারে পাশাপাশি । মালদায় এসে আর তাঁরা জমিদারি পত্তন করার সুযোগ পাননি । তবে তাতে পরিবারের দুর্গাপুজোয় কোনও ব্যাঘাত ঘটেনি । প্রাচীন জৌলুস হারিয়েছে বটে, কিন্তু এখনও নিরবিচ্ছিন্নভাবে এই পরিবারে মহামায়ার আরাধনা হয়ে আসছে । আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চারদিন বিশেষ পুজো হলেও এই পরিবারে বছরের প্রতিটি দিনই দুর্গার নিত্যপুজো হয়ে থাকে ।

বর্তমানে দে পরিবারের পাঁচ ভাই এই পুজো করে আসছেন । তাঁদের মধ্যে সবার বড় সত্যেন্দ্রনাথ দে । মালদা জেলা পরিষদের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী সত্যেনবাবু অসুস্থতার জন্য এখন কলকাতায় চিকিৎসাধীন । বাকি চার ভাই তাপসকুমার দে, রণেন্দ্রনাথ দে, সুদীপ্তকুমার দে ও পীযূষকান্তি দে । তাঁরাও এই মুহূর্তে বাইরে থাকায় তাঁদের অবর্তমানে পুজোর আয়োজন করছেন বোন কেয়া দে ।

বৈচিগ্রামে এই পুজোর প্রবর্তন করেছিলেন কাশীনাথ দে । তাঁর সপ্তম পুরুষ হলেন সত্যেনবাবুরা । এই পরিবারের পুজোয় অন্নভোগ কিংবা বলিপ্রথা নেই । ফল-মিষ্টি দিয়েই মায়ের পুজো হয় । এখনও নাকি পুজোর চারদিন ঠাকুরদালানে নীলকণ্ঠ পাখি দেখতে পাওয়া যায় । অন্তত তেমনটাই জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা ৷

আরও পড়ুন : Durga Puja 2021 : প্রজাদের মঙ্গল কামনায় দাঁতনের দাস মহাপাত্র বাড়িতে আজও হয় মহামারি পুজো

নিজেদের পারিবারিক পুজো সম্পর্কে কেয়াদেবী বলেন, "আমাদের বাড়ির পুজো এবার 360 বছরে পড়ল । বর্ধমানের বৈচিগ্রামে এই পুজো শুরু হওয়ার পর সেখান থেকে বাংলাদেশের মহারাজপুরে পুজো চলে যায় । কাশীনাথ দে এই পুজোর প্রবর্তন করেন । এই পুজো নিয়ে অনেক কাহিনী প্রচলিত রয়েছে । মহারাজপুর গ্রাম ছিল পদ্মা নদীর পাড়ে । একবার ইংরেজরা নৌকায় পণ্য নিয়ে পদ্মা নদী দিয়ে যাওয়ার সময় মহারাজপুর গ্রামের কাছে তাদের নৌকাডুবি হয় । সেখানকার গ্রামবাসীরা ইংরেজদের জানায়, দে বাড়ির মাকে মানত করলে পণ্য-সহ নৌকা ফের পদ্মায় ভেসে উঠবে । ইংরেজদের সেই মানতে ডুবে যাওয়া নৌকা নাকি সত্যিই ভেসে ওঠে । তখন ইংরেজরা আমাদের পরিবারের দুর্গা মাকে দর্শন করতে আসেন । তখন মাটির ঠাকুরঘরে মায়ের পুজো হত । ইংরেজরা মায়ের পাকা নাটমন্দির তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন । পূর্বপুরুষরা তাঁদের প্রস্তাবে প্রথমে নিমরাজি হলেও পরে রাজি হন । কারণ, মা তো সবার । এরপর ওই গ্রামে ইংরেজরাই মায়ের পাকা নাটমন্দির তৈরি করে । দেশভাগের সময় বাবারা বাংলাদেশ থেকে মালদায় চলে আসেন । মহারাজপুর থেকে আসার সময় তাঁরা সেখানেই মায়ের কাঠামো পদ্মায় বিসর্জন দিয়েছিলেন । দৈবক্রমে সেই কাঠামো উজানপানে মহানন্দায় ভেসে আমাদের বাড়ি সংলগ্ন ঘাটে এসে ঠেকে । 47 সালেই বাবারা সেই কাঠামো মহানন্দায় পান । মায়ের স্বপ্নাদেশে সেই কাঠামোতেই ফের পুজো শুরু হয় । তিন বছর বাবা-জ্যেঠুরা ওই কাঠামোয় পুজো করার পর তা পুরোনো হয়ে যাওয়ায় সেই কাঠামো ফের বিসর্জন দেন । মা এবার আমার বড় দাদাকে স্বপ্নাদেশ দেন । ফের নদীতে সেই কাঠামো পাওয়া যায় । কীভাবে তাঁর মন্দির তৈরি হবে, মা সেটাও দাদাকে স্বপ্নে জানান । সেই মতো বাড়িতে তাঁর মন্দির তৈরি হয় । এই মন্দিরে বছরের প্রতিটি দিন মায়ের নিত্যপুজো হয় । সন্ধিপুজোয় আগে কামান দাগা হলেও এখন আর সেই পাট নেই । এখন সেই সময় বাজি-পটকা পুড়িয়ে, ঘণ্টাধ্বনি দিয়ে সবাইকে সন্ধিপুজোর কথা জানানো হয় ।"
আরও পড়ুন : Durga Puja Special : মা দুর্গার নির্দেশেই 300 বছর আগে পুজো শুরু হয় মিত্র জমিদার বাড়িতে

এই বিষয়ে দে পরিবারের নিত্যপূজারি জগন্নাথ রায় বলেন, "1972 সাল থেকে আমি এই পরিবারে নিত্যপুজো করে আসছি । দুর্গা-সহ নারায়ণ ও শিবেরও প্রতিদিন পুজো হয় এখানে । মায়ের কাঠামো বছরভর মন্দিরের থানে থাকে । এই পুজোয় অন্নভোগ কিংবা বলিপ্রথা নেই । ফল-মিষ্টিতেই মায়ের পুজো হয় ৷"

দে পরিবারের দুর্গামূর্তি ঠাকুরদালানেই তৈরি হয় । পাঁচ বছর ধরে সেই মূর্তি বানিয়ে আসছেন মান্তু দাস । তিনি জানান, "আগে আমার জ্যেঠু এই প্রতিমা বানাতেন । এখানে সোয়া তিন হাতের মায়ের মূর্তি তৈরি হয় । দেবীকে বুলেনের সাজে সাজানো হয় । পঞ্চমী তিথিতে দেবী থানে ওঠেন ।"


আরও পড়ুন : Durga puja : এবছর দেবীর কোন বাহনে আগমন ও গমন? জেনে নিন কি প্রভাব পড়তে চলেছে মানব জীবনে

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.