ETV Bharat / state

Corona Effect in Teachers Life : করোনায় বন্ধ-স্কুল, বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় বেসরকারি শিক্ষকরা

author img

By

Published : Jan 14, 2022, 2:55 PM IST

malda teachers change occupation
করোনা কেড়েছে বই-খাতা-স্কুল, বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় শিক্ষকরা

করোনা সংক্রমণের কারণে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ স্কুল, বন্ধ বেতন ৷ বাধ্য হয়ে তাই অন্য পথে বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকরা (Corona Effect in Teachers Life)

মালদা, 14 জানুয়ারি : যাঁরা ছিলেন মানুষ গড়ার কারিগর, যাঁদের হাতে থাকত বই-খাতা, চক-ডাস্টার, সেই শিক্ষকদেরর হাত থেকে সে সব কেড়ে নিয়েছে করোনা । পেট চালাতে তাই শিক্ষকরা বেছে নিচ্ছেন অন্য পথ (malda teachers change occupation) ৷ কেউ বিক্রি করছেন ডালপুরি বা মোমো, কেউ আবার টোটো চালাচ্ছেন, অন্যের জমিতে শাক-সবজি চাষ করে বাজারে গিয়ে বিক্রি করছেন । এভাবেই দিন কাটছে মালদার বেসরকারি স্কুলগুলির শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ।

করোনা আবহে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা । অনলাইন ব্যবস্থায় পঠনপাঠন চালু থাকলেও সেই শিক্ষা সমস্ত স্তরের ছাত্রছাত্রীদের কাছে পৌঁছোয়নি । তবে ঘটনা হল, করোনা আবহে সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতনে কোনও কোপ পড়েনি । কিন্তু সরকারি নির্দেশে স্কুলে পঠনপাঠন বন্ধের গেড়োয় চূড়ান্ত সমস্যায় পড়েছেন বেসরকারি বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা । তাঁদের রোজগার একরকম বন্ধ হয়ে গিয়েছে । অনেক পড়ুয়াই নতুন করে স্কুলে ভর্তি হচ্ছে না , ফলে অনেক স্কুল বন্ধ হওয়ার মুখে । এই পরিস্থিতিতে পেট চালাতে বিকল্প পেশা বেছে নেওয়া ছাড়া অন্য কোনও পথ নেই এই শিক্ষকদের । এই পরিস্থিতিতে দ্রুত বেসরকারি স্কুলগুলি চালু করতে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানাচ্ছেন প্রায় কর্মহীন এই শিক্ষকরা ।

বাবলু পাসোয়ান । দু’বছর আগেও ছিলেন শিক্ষক । প্রতিদিন সকালে স্কুলে যেতেন, বাচ্চাদের পড়াতেন । স্কুলে পড়ুয়াও ছিল প্রায় দু'শো । তাদের মাসিক মাইনেতেই বাবলুবাবু-সহ স্কুলের 10 জন শিক্ষক, 4-5 জন অশিক্ষক কর্মীর বেতন হত । এভাবে বাবা-মা, স্ত্রী-পুত্র নিয়ে সংসার বেশ ভালই চলে যেত বাবলু পাসোয়ানের । কিন্তু করোনা সংক্রমণের আবির্ভাবে বন্ধ হয়ে যায় স্কুল ৷ বেকার হয়ে পড়েন বাবলুবাবু । তবে তখনও বাবা বেঁচে । তাঁর উপার্জনে সংসার কোনওভাবে চলছিল । কিন্তু এরমধ্যেই প্রয়াত হন বাবলুবাবুর বাবা । মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে তাঁর । পেট চালাতে শেষ পর্যন্ত ডালপুরি-মোমোর দোকান খুলতে হয়েছে তাঁকে । এখন তিনি শহরের জগন্নাথ কলোনির দোকানে ডালপুরি ভাজেন, খদ্দেরদের খাবার দিয়ে এঁটো প্লেট-গ্লাস নিজেই মাজেন । এনিয়ে প্রশ্ন করতেই কান্না চেপে রাখতে পারেননি এই শিক্ষক । কান্নায় প্রায় বন্ধ হয়ে আসা গলায় তিনি বলেন, “করোনার প্রকোপে দু’বছর ধরে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমস্ত কর্মী চরম সমস্যায় । আমরা শিক্ষা নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলাম, তা পুরোপুরি শেষ হয়ে গিয়েছে । আমি গ্রামীণ এলাকার স্কুলে পড়াতাম । এখন ডালপুরি বিক্রি করছি । অনেকে টোটো চালাচ্ছেন, কেউ আবার কৃষিকাজ করতে বাধ্য হয়েছেন । বাবা মারা যাওয়ার পর এই দোকান করে কোনওভাবে পেট চালাচ্ছি । এখন সব খোলা । মেলা-খেলা সব হচ্ছে । শুধু স্কুল কেন বন্ধ তা আমরা বুঝতে পারছি না । এনিয়ে কারও কোনও নজর নেই। তাহলে শিক্ষা জগতকে বেছে নিয়ে আমরা অন্যায় করেছিলাম?”

করোনা কেড়েছে বই-খাতা-স্কুল, বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় শিক্ষকরা

আরও পড়ুন : বেতন দিচ্ছে না বেসরকারি সংস্থা, বিক্ষোভ বৃত্তিমূলক বিষয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের

মালদা জেলায় প্রায় ২০ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন । প্রায় ২২ মাস ধরে তাঁদের কোনও রোজগার নেই । সরকারি অনুদানও কেউ পাচ্ছেন না । তাই শিক্ষকতা ছেড়ে অধিকাংশই বিকল্প পেশায় যেতে হয়েছেন । এপ্রসঙ্গে ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর আনএইডেড স্কুল অর্গানাইজেশনের রাজ্য যুগ্ম সম্পাদক দেবাশিস দেবশর্মা বলেন, “এই রাজ্যে প্রায় ২৫ হাজার আনএইডেড স্কুল রয়েছে । এই স্কুলগুলিতে শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন প্রায় 3 লাখ 75 হাজার । এই স্কুলগুলি কোনও দানে চলে না । পড়ুয়াদের কাছ থেকে প্রতি মাসে যে সামান্য পরিমাণ মাইনে নেওয়া হয়, তার উপরেই স্কুলগুলি চলে । শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন হয় । করোনায় স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পড়ুয়ারা আর স্কুলে যায় না । ফলে অভিভাবকদেরও টিউশন ফি দেওয়ার প্রশ্ন নেই । এতেই শিক্ষকদের বেতন বন্ধ হয়ে গিয়েছে । আমরা কোনও কোনও জায়গায় কোচিং বা কাউন্সেলিং সেন্টার চালিয়ে শিক্ষকদের বেতন দিয়েছি । কিন্তু এটা বেশিদিন সম্ভব নয় । মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দাবি রেখেছি, যখন সবকিছু খোলা থাকছে, তখন বেসরকারি স্কুলগুলিও খোলার অনুমতি দেওয়া হোক । ক্লাব ও পুরোহিতদের মতো এই শিক্ষকদেরও প্রতি মাসে ন্যূনতম অনুদান দেওয়া হোক । "

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.