মালদা, 17 মে: ভয়াবহ আগুনে পুড়ে খাক হয়ে গেল পাঁচটি বাড়ি ৷ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও একটি ৷ বুধবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের রতুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের মহাদেবপুর গ্রামের গুট্টিপাড়ায় ৷ বিষয়টি নজরে পড়তে আগুন নেভাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন এলাকার মানুষজন ৷ প্রায় দেড় ঘণ্টা পর চাঁচল দমকল বিভাগের একটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনে ৷ এই ঘটনার পর রতুয়ায় দমকল কেন্দ্র স্থাপনের দাবি আবারও জোরালো হয়েছে ৷ কীভাবে এই আগুন লাগল, তা খতিয়ে দেখছেন দমকল বিভাগের আধিকারিকরা ৷
এদিন সকাল 10টা নাগাদ আগুন লাগে ওই গ্রামের আম ব্যবসায়ী কালাম খানের বাড়ির সামনে রাখা আম প্যাকেজিং করার প্লাসটিক ক্যারেটে ৷ শুকনো আবহাওয়ায় সেই আগুন দ্রুত কালাম খান-সহ আশেপাশের বাড়িতেও ছড়িয়ে পড়ে ৷ পুড়ে ছাই হয়ে যায় পাশে থাকা সাদিকুল শেখের মুদির দোকান, বাড়ি, এমনকি বাড়ির সামনে রাখা একটি টোটোও ৷ ভস্মীভূত হয়ে যায় সাদিকুলের ভাই, পেশায় সিভিক ভলান্টিয়ার সারিফুল শেখের বাড়িও ৷ একই পরিস্থিতি নজরুল শেখ ও ভাদু শেখের বাড়ির ৷ অল্পবিস্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কারিমুল শেখের বাড়ি ৷ সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ 20 লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে গ্রামবাসীদের অনুমান ৷
এই বিষয়ে কালাম খান বলেন, "একটি মামলার কারণে আজ সকালে চাঁচল আদালতে চলে যাই ৷ সেখানে খবর পাই, বাড়িতে আগুন লেগেছে ৷ সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি ফিরে এসে দেখি, সব কিছুই পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে ৷ আমের মরশুম শেষে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার কথা ছিল ৷ জামাইকে মোটরবাইক-সহ কয়েকটি জিনিস কিনে দেওয়ার জন্য ক'দিন আগে ব্যাংক থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা তুলে এনে বাড়িতে রেখেছিলাম ৷ হবু জামাইকে আগামিকাল বা পরশু আসতে বলেছিলাম ৷ সেই টাকাও ছাই হয়ে গিয়েছে ৷ বাড়ির সামনে প্রায় তিন হাজার আম প্যাকিংয়ের ক্যারেট ছিল ৷ সেসব সমেত বাড়ির সবকিছুই আগুনে নষ্ট হয়ে গিয়েছে ৷ ঘুরে দাঁড়াতে সরকারি সহযোগিতা চাইছি ৷"
সাদিকুল শেখের কথায়, "কালামের বাড়ির সামনে প্লাসটিকের ক্যারেটেই প্রথমে আগুন লাগে ৷ সেখান থেকে আগুন আমার বাড়িতে লেগে যায় ৷ আমার মুদিখানার দোকান, একটি টোটো, সোনার গয়না, ব্যাংকের পাসবই, আধার-ভোটার কার্ড, 70-80 হাজার টাকা-সহ বাড়ির সব পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে ৷ আমবাগানে স্প্রে করার মেশিন দিয়ে আগুন প্রথমে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে ৷ দেড় ঘণ্টা পর দমকল এসে আগুন পুরোপুরি নেভায় ৷ যদি রতুয়ায় কোনও দমকলকেন্দ্র থাকত, তবে আজ আমার বাড়িটা হয়ত বেঁচে যেত ৷"
এই ঘটনার পর রতুয়ায় দমকল কেন্দ্রের দাবি তুলেছেন পাশের রুকুন্দিপুর গ্রামের বিষ্ণু সরকার ৷ তিনি বলেন,"আগুন লাগার খবর পেয়ে আমরা এই গ্রামে ছুটে আসি ৷ আগুন নেভানোর কাজে হাত লাগাই ৷ এলাকার পুকুরে পাম্প মেশিন লাগিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে ৷ আজ দমকলের ইঞ্জিন দ্রুত গ্রামে আসতে পারলে এত ক্ষতি হত না ৷ তাই রাজ্য সরকার তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আমাদের আর্জি, রতুয়ায় একটি দমকলকেন্দ্র স্থাপন করা হোক ৷"
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে রতুয়া 1 নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য শুভম সরকার বলেন, "আগুনে 5-6টি বাড়ির সব পুড়ে গিয়েছে ৷ পরিবারগুলির টাকাপয়সা, এমনকি নথিপত্র একটাও অক্ষত নেই ৷ আগুন লাগার প্রকৃত কারণ এখনও জানা যায়নি ৷ বিষয়টি ইতিমধ্যে স্থানীয় বিধায়ক ও বিডিওকে জানিয়েছি ৷ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে যথাযথ সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে ৷"
আরও পড়ুন : স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যা সাজা! পনেরো বছর পর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড স্বামীর
