ETV Bharat / state

শুধুই বিরোধিতা নাকি গঠনমূলক সমালোচনা ? কেমন হবে বিরোধীদের ভূমিকা

author img

By

Published : Jul 2, 2021, 8:49 PM IST

বিরোধী দল হওয়ার মানেটাই কি শুধুই প্রতিটি পদক্ষেপে সরকারের বিরোধিতা করা ? ওয়েলে নেমে প্রতিবাদ করা ? শুভেন্দু অধিকারী কি আজ এই ঝাঁঝালো মেজাজের বদলে সরকারের কাজের গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারতেন না ?

Suvendu Adhikari and Mamata Banerjee
ছবি

কলকাতা, 2 জুলাই : নতুন সরকার গঠনের পর বিধানসভায় প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিন । আর শুরুতেই ছন্দপতন । খেই হারাল বিধানসভা কক্ষ । রাজ্যপালের প্রারম্ভিক ভাষণে ভোট পরবর্তী হিংসার কোনও উল্লেখই নেই । অথচ দিনের পর দিন রাজভবন থেকে টুইট হয়েছে এই বিষয়ে । প্রশ্ন উঠেছে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে । আর এতেই বেজায় চটেছে বিরোধী শিবির ।

বিক্ষোভ । ওয়েলে নেমে প্রতিবাদ । আর এই সবের মধ্যে ভাষণ পুরোটা না পড়েই বিধানসভার অধিবেশন কক্ষ ত্যাগ করলেন রাজ্যপাল । দিনভর তপ্ত থাকল বিধানসভা । বিরোধী দলনেতা হিসেবে আজ শুভেন্দু অধিকারীর প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিন । আর প্রথম দিনেই কার্যত বুঝিয়ে দিলেন, আগামী দিনে তিনি বিধানসভায় যথেষ্ট চাপে ফেলতে চলেছেন সরকারের উপর । একের পর এক ঝাঁঝালো আক্রমণ যেন সেটাই বুঝিয়ে দিচ্ছিল ।

কিন্তু এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠছে, বিরোধী দলনেতার আজকের ভূমিকা নিয়ে । যেভাবে আজ তিনি রণং দেহি মূর্তি ধারণ করলেন, একটি সুষ্ঠু সংসদীয় রাজনীতিতে এটাই কি কাম্য ? বিরোধী দল হওয়ার মানেটাই কি শুধুই প্রতিটি পদক্ষেপে সরকারের বিরোধিতা করা ? ওয়েলে নেমে প্রতিবাদ করা ? শুভেন্দু কি আজ এই ঝাঁঝালো মেজাজের বদলে সরকারের কাজের গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারতেন না ?

কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানের সঙ্গে এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "রাজ্যপালের ভাষণের সময় বিজেপির বিরোধিতা... এটা কোনও নজিরবিহীন ঘটনা নয় । এর আগে বহু ঘটনা ঘটেছে । বিরোধিতাও হয়েছে বহুবার । তবে গত 10 বছরে আমরা শিষ্টাচার মেনে বিরোধিতা করেছি ।" তবে তিনি এটাও মনে করছেন, এই বিক্ষোভ রাজ্যপালের বিরুদ্ধে নয়, সরকারের বিরুদ্ধে । এই পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যপাল বেঁচে গেলেন, না সরকার বেঁচে গেল, সেটা আলাদা ঘটনা । সেটা বিতর্কিত বিষয় ।

আরও পড়ুন : গর্জন অনুযায়ী বর্ষণ নয়, বিজেপির চিৎকারে মুখ বন্ধ ধনকড়ের

তবে বিরোধীদের বিক্ষোভকে স্বাভাবিকই মনে করছেন মান্নান । বলেন, "ওই ভাষণে কিছুই তো নেই । রাজ্যে মহিলারা ধর্ষিতা হচ্ছে, হিংসায় খুন হয়েছে সেটাও নেই । উন্নয়নে কথা নেই । বেকার সমস্যার কথাও নেই । রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতি যা ভাষণ দেন সেটা সরকার পক্ষেরই । আর সেই কারণেই বিরোধীরা বিরোধিতা করেন ।"

সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী মনে করছেন, গতকাল যখন মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন, তখনই হয়ত তাঁরা আলাপ-আলোচনা করে ভাষণের বিষয়টি স্থির করেছেন । রাজ্যপাল শুরুর অনুচ্ছেদ আর শেষের অনুচ্ছেদ টুকু বলেছেন । তাতে সরকারের তরফে যে ভাষণ তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল, সেটাও পড়া হল । আবার যে কথাগুলি রাজ্যপাল বলতে চান না, সেগুলিও এড়িয়ে যাওয়া গেল । তবে আজ বিধানসভার ভিতরে বিরোধীদের বিক্ষোভ নিয়ে তিনি বিশেষ কিছু বলতে চাননি । তাঁরা যেহেতু এখন বিধানসভায় নেই, তাই বিষয়টি তাঁদের কাছে অজানা বলেই জানাচ্ছেন সুজনবাবু । তবে বিধানসভায় বিরোধীদের বিরোধিতা যেন কখনও শালীনতার সীমা লঙ্ঘন না করে, সেটাও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি । সুজনবাবুর কথায়, বিগত 10 বছর ধরে তাঁরা সুস্থ গণতন্ত্র ও গঠনমূলক সমালোচনা করেছেন ।

প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্রর সঙ্গে এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "রাজ্য সরকা যে বক্তৃতা রাজ্যপালের জন্য তৈরি করেছে, তাতে এমন কিছু নেই যা রাজ্যপালের জন্য আপত্তিজনক বলে মনে হতে পারে । এতে বোঝা যাচ্ছে রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্য সরাসরি সংঘাত চাইছে না । আবার বিজেপি বিধায়করাও ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগ তুলছেন । বিক্ষোভ করছেন । কিন্তু তাঁরা বিধানসভা অচল করে দেননি । এমন ঘটনা আগেও হয়েছে । বিধানসভা তো বিরোধীদেরও জায়গা । প্রত্যেকেই নিজেদের সীমা মেনে চলেছে । আগামী দিনগুলিতে বিজেপিকে কীভাবে দেখা যাবে, তা বোঝা যাবে শাসক দল বিরোধী পক্ষকে কতটা জায়গা ছাড়বে ।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.