ETV Bharat / state

অন্যের গণতান্ত্রিক অধিকারে হস্তক্ষেপ নয়, বললেন যাদবপুরের উপাচার্য

author img

By

Published : Sep 26, 2019, 10:27 PM IST

সুরঞ্জন দাস

কয়েকদিন আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ABVP-র নবীন বরণ উৎসবকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায় ৷ আসানসোলের BJP সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়কে হেনস্থা করা হয় ৷ ওই ঘটনার নাম না নিয়েই আজ বিদ্যাসাগরের দ্বিশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এক অনুষ্ঠানে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বলেন, নিজের গণতন্ত্রের অধিকার রক্ষা করতে গিয়ে কেউ যেন অন্যের গণতান্ত্রিক অধিকারে হস্তক্ষেপ না করে।

কলকাতা, 26 সেপ্টেম্বর : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিদ্যাসাগর সম্পর্কে বক্তৃতা রাখতে উঠেছিলেন ৷ সেখানে ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বলেন, নিজের গণতন্ত্রের অধিকার রক্ষা করতে গিয়ে কেউ যেন অন্যের গণতান্ত্রিক অধিকারে হস্তক্ষেপ না করে । পাশাপাশি বর্তমান সময়ে সমাজ একটি সাংস্কৃতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন বলেও মন্তব্য করেন তিনি ।

বক্তব্যের শুরুতেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বলেন, "আজকের দিন প্রতিজ্ঞা নেওয়ার দিন ৷ শপথ নেওয়ার দিন । যার 200 বছরের জন্মদিন আমরা পালন করছি তিনি যেসব কথাতে বিশ্বাস করতেন সেই সব কথাকে কাজে পরিণত করার দিন । সেটা যদি আমরা করতে পারি তাহলে আজকের অনুষ্ঠান সাফল্য লাভ করবে ৷ এবং তার সঙ্গে আমরা একটা সুস্থ পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতবর্ষ গড়ে তুলতে পারব ।"

উপাচার্য আরও বলেন, "আজ আমার শিক্ষক অমলেশ ত্রিপাঠীর একটা কথা বলতে চাই ৷ তিনি একটা সুন্দর বই লিখেছেন বিদ্যাসাগরের উপর ৷ বিদ্যাসাগরের সবথেকে ইউনিক ফিচার ছিল ট্র‍্যাডিশনাল মডার্নাইজ়েশন । উনি একদিকে মডার্নিটিকে গ্রহণ করেছেন অন্যদিকে উনি ট্রাডিশনকে (পরম্পরা) সরিয়ে রাখেননি । দুটোর মেলবন্ধন করার চেষ্টা করেছেন । উনি বুঝতে পেরেছিলেন যে পাশ্চাত্য আর এখনকার মেলবন্ধন ঘটাতে গিয়ে যাতে আমাদের পায়ের তলার সংস্কৃতির মাটিটা না ক্ষয়ে যায় । উনি বলেছিলেন, আমরা ঘরের দরজা জানালা খুলে রাখব যাতে হাওয়া আসে, আমাদের নতুন করে ভাবার সুযোগ করে দেয় । কিন্তু, এরকম হতে দেব না যাতে ওই হাওয়া এসে আমাদের ভিতটা নড়বড়ে করে দেয় । আজ সাংস্কৃতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়ে পড়েছি আমরা ।"

ভিডিয়োয় শুনুন বক্তব্য

কয়েকদিন আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ABVP-র নবীন বরণ উৎসবকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায় ৷ নাম না নিয়ে সেই ঘটনাকে উসকে দেন উপাচার্য । বলেন, "বিদ্যাসাগরের দিকে আমাদের বারে বারে ফিরে যেতে হবে । আমরা প্রশ্ন করব ৷ আমরা ডিবেট করব ৷ কিন্তু, ভারতবর্ষে কতগুলো মানবিক ধ্যান ধারণা আছে ৷ সিনিয়রদের শ্রদ্ধা করা ৷ আমাদের গণতান্ত্রিক রীতিনীতিকে মান্যতা দেওয়া । গণতন্ত্রের মানে এই নয় যে আমি আমার গণতান্ত্রিক অধিকারকে রক্ষা করার জন্য অন্যর গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ করব । বিদ্যাসাগর সেটাই আমাদের শিখিয়ে গেছেন ।"

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বলেছেন, রাজ্যের সব উপাচার্য এমন কী যাদবপুরের উপাচার্যও রাজনৈতিকভাবে নিয়োগ হয়েছেন । এই বিষয়ে আজ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "জানে কী? গানের সুর দেয়, সেই সুরে গান গায় । শিক্ষা নিয়ে এত ভাবছে কেন? এটা কি তাঁর ভাবার কথা? 'বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে'। আমি এই বিষয়ে কোনও বিতর্ক করতে চাই না । যে যা বলছে বলুক । সরকার তো উপাচার্যদের নিয়োগ করে না । তার জন্য সার্চ কমিটি আছে । আসল কথা এরা একটা ভয়ের রাজনীতি করছে । সব জায়গায় ভয় দেখিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে । রাজনৈতিক নেতাদের কেন্দ্রীয় সংস্থার ভয় দেখাচ্ছে । উপাচার্যরা যাতে ভয় পান তার শুরু করেছেন যিনি এসেছেন । আর তাঁর সুরেই সানাইয়ের পোঁর মতো কথা বলছে এইসব লোকেরা । সরকার কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিকে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা, তাঁর অভিজ্ঞতা না দেখে কোথাও উপাচার্য করেনি করবেও না ।"

শিলিগুড়িতে রাজ্যপাল বলেছিলেন, আচার্য ও উপাচার্যের মাঝখানে অন্য কারও থাকার দরকার নেই । সেই বিষয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "উনি অনেক কথাই বলছেন । উনি এটাকে হয়ত ভাবছেন বিচারসভা । আমরা শিক্ষা নিয়ে আছি ৷ বিচারসভায় নেই । কী থাকবে আর কী থাকবে না নির্বাচিত সরকার ঠিক করে ৷ আইন তৈরি হয় বিধানসভায় । সুতরাং, তিনি নিজে সেটা যেন ভালো করে মনে রাখেন । আমাদের কাছে নির্বাচিত এই সরকার সব ৷ যার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।"

Intro:কলকাতা, 26 সেপ্টেম্বর: আজ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিদ্যাসাগর সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে জল্পনা উস্কে দিলেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই উপাচার্য সুরঞ্জন দাশ। তিনি বিদ্যাসাগরের ধারণা বা মতাদর্শ মেনে চলার কথা বলতে গিয়ে এদিন বলেন, নিজের গণতন্ত্রের অধিকার রক্ষা করতে গিয়ে কেউ যেন অন্যের গণতান্ত্রিক অধিকারে হস্তক্ষেপ না করে। পাশাপাশি বর্তমান সময়ে সমাজ একটি সাংস্কৃতিক চ‍্যালেঞ্জের সম্মুখীন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।


Body:বক্তব্যের শুরুতেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য সুরঞ্জন দাশ বলেন, "আজকের দিন প্রতিজ্ঞা নেওয়ার দিন, শপথ নেওয়ার দিন। যার 200 বছরের জন্মদিন আমরা পালন করছি তিনি যেসব কথাতে বিশ্বাস করতেন সেই সব কথাকে কার্যে পরিণত করার দিন। সেটা যদি আমরা করতে পারি তাহলে আজকের অনুষ্ঠান সাফল্য লাভ করবে এবং তার সঙ্গে আমরা একটা সুস্থ পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতবর্ষ গড়ে তুলতে পারব।"

উপাচার্য বিদ‍্যাসাগরের সম্বন্ধে বলেন, "আজ অমলেশ ত্রিপাঠীর একটা কথা বলতে চাই, তিনি একটা সুন্দর বই লিখেছেন বিদ্যাসাগরের উপর, বিদ‍্যাসাগরের সবথেকে ইউনিক ফিচার ছিল ট্র‍্যাডিশনাল মডার্নাইজেশন‌। উনি একদিকে মডার্নিটিকে গ্রহণ করেছেন অন্যদিকে উনি ট্রাডিশনকে সরিয়ে রাখেননি। দুটোর মেলবন্ধন করার চেষ্টা করেছেন। উনি বুঝতে পেরেছিলেন যে পাশ্চাত্য আর এখনকার মেলবন্ধন ঘটাতে গিয়ে যাতে আমাদের পায়ের তলার সংস্কৃতিক মাটিটা না ক্ষয়ে যায়। উনি বলেছিলেন যে, আমরা ঘরের দরজা জানলা খুলে রাখব যাতে হাওয়া আসে, আমাদের নতুন করে ভাবার সুযোগ করে দেয়। কিন্তু, এরকম হতে দেব না যাতে ওই হাওয়া এসে আমাদের ভিতটা নড়বড়ে করে দেয়। আজ সাংস্কৃতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়ে পড়েছি আমরা।"

বক্তব্যের মধ্যে এখানেই তিনি যাদবপুর জল্পনাকে উস্কে দেন। সুরঞ্জন দাশ বলেন, "বিদ্যাসাগরের দিকে আমাদের বারে বারে ফিরে যেতে হবে। আমরা প্রশ্ন করব, আমরা ডিবেট করব, আমরা ডেলিবারেট করব। কিন্তু, সঙ্গে সঙ্গে আমরা ভারতবর্ষে কতগুলো মানবিক ধারণা আছে, আমাদের সিনিয়রদের শ্রদ্ধা করে আমাদের গণতান্ত্রিক রীতিনীতি সেটাকে মানতা দেওয়া। গণতন্ত্রের মানে এই না যে আমি আমার গণতান্ত্রিক অধিকারকে রক্ষা করার জন্য অন্যদের অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ করব। বিদ্যাসাগর সেটাই আমাদের শিখিয়ে গেছেন।"

অন্যদিকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বলেছেন, রাজ‍্যের সব উপাচার্য এমনকি যাদবপুরের উপাচার্যও রাজনৈতিকভাবে নিয়োগ হয়েছেন। এই বিষয়ে আজ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "জানে কী? গানের সুর দেয়, সেই সুরে গান গায়। শিক্ষা নিয়ে এতো ভাবছে কেন? এটা কি তাঁর ভাবার কথা? 'বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে'। আমি এই বিষয়ে কোন বিতর্ক করতে চাই না। যে যা বলছে বলুক। সরকার তো উপাচার্যদের নিয়োগ করে না। তার জন্য সার্চ কমিটি আছে। আসল কথা এর একটা ভয়ের রাজনীতি করছে। সব জায়গায় ভয় দেখিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। রাজনৈতিক নেতাদের কেন্দ্রীয় সংস্থার ভয় দেখাচ্ছে। উপাচার্যরা যাতে ভয় পায় তার শুরুয়াত করেছেন যাকে নিয়ে এসেছেন তিনি। আর তাঁর সুরেই সানাইয়ের পোঁর মতো কথা বলছে এইসব লোকেরা। সরকার কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিকে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা, তাঁর অভিজ্ঞতা না দেখে কোথাও উপাচার্য করেনি করবেও না।"

শিলিগুড়িতে রাজ‍্যপাল বলেছিলেন, আচার্য ও উপাচার্যের মধ‍্যিখানে অন‍্য কারোর থাকার দরকার নেই। হেই বিষয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "উনি অনেক কথাই বলছেন। উনি এটাকে হয়তো ভাবছেন বিচারসভা। আমরা শিক্ষা নিয়ে আছি বিচারসভায় নেই। কী থাকবে আর কী থাকবে না আমরা নির্বাচিত সরকার, আইন তৈরি হয় বিধানসভায়। সুতরাং, তিনি নিজে সেটা যেন ভাল করে মনে রাখেন। আমাদের কাছে একটাই প্রশাসন নির্বাচিত সরকার, যার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।"


Conclusion:
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.