ETV Bharat / state

Nazrul Islam: সামজিক বয়কট উপেক্ষা করে সফল ভাওয়াইয়া শিল্পী এএসআই নজরুল ইসলাম

author img

By

Published : Apr 4, 2023, 8:02 PM IST

কোচবিহারের নাটাবাড়ির বাসিন্দা রাজ্য সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর এএসআই নজরুল ইসলাম ৷ তবে, এটা তাঁর একমাত্র পরিচয় নয় ৷ তাঁর আরও একটি পরিচয় হল, তিনি একজন ভাওয়াইয়া শিল্পী ৷ যে গানের জন্য তাঁকে 4 বছর সামাজিকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছিল ৷ কিন্তু, ভাওয়াইয়া গানের সঙ্গ তিনি ছাড়েননি ৷

Bhawaiya Artist ASI Nazrul Islam ETV BHARAT
Bhawaiya Artist ASI Nazrul Islam

ভাওয়াইয়া শিল্পী এএসআই নজরুল ইসলাম

জলপাইগুড়ি, 4 এপ্রিল: ভাওয়াইয়া গান গাইতেন বলে সমাজ থেকে আলাদা করে দেওয়া হয়েছিল ৷ পুরো পরিবারকেই একঘরে করে রাখা হয়েছিল ৷ কিন্তু, তাতেও দমে থাকেননি রাজ্য সশস্ত্র বাহিনীর এএসআই নজরুল ইসলাম ৷ এখনও তিনি ভাওয়াইয়া গানের চর্চা করেন কোচবিহারের নাটাবাড়ির বাসিন্দা 57 বছরের নজরুল ৷ বাংলাদেশের চঞ্চল চৌধুরীর সাদা সাদা কালা কালা গান গেয়ে বিখ্যাত হয়ে উঠেছেন তিনি ৷ উত্তরবঙ্গের মাটির এই গান গেয়ে তাঁর খ্যাতি বর্তমানে উত্তরবঙ্গের পাশাপাশি অসমেও ৷ তাঁকে গানে উৎসাহ দিয়ে চলেছেন সহকর্মী এবং পুলিশের আধিকারিকরা ৷

নজরুল ইসলাম জানান, পুলিশ কর্মীদের বাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন জেলায় কাজ করতে হয় ৷ ফলে সকলের মানসিক অবস্থা ভালো থাকে না ৷ বাড়ি ছেড়ে, বাবা-মা, স্ত্রী এবং সন্তানদের ছেড়ে ভিন জেলায় থাকতে হয় তাঁদের ৷ তাই সহকর্মীদের একটু আনন্দ দিতে সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর জেল ব্যারাকে গান করেন তিনি ৷ জানিয়েছেন, তাঁকে এবং পুরো পরিবারকে সামাজিকভাবে বয়কট করা হয়েছিল ৷ কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানে তাঁদের অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হত না ৷ কিন্তু, তিনি থেমে যাননি ৷ টানা 4 বছর সামাজিকভাবে বহিষ্কার থাকার পর, লোকজনকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিল তাঁর পরিবার ৷

পুলিশের চাকরিতে বাইরে থাকতেন ৷ সেই সময় তাঁর বাবা সমাজের কাছে ভাওয়াইয়া গানের গুরুত্ব এবং এর কদর বোঝান ৷ ধীরে ধীরে মানুষ তাঁর গান শুনতে শুরু করেন বলে জানিয়েছেন নজরুল ইসলাম ৷ সম্প্রতি বাংলাদেশের শিল্পী চঞ্চল চৌধুরীর ‘সাদা সাদা কালা কালা’ গানটি গেয়েছেন নজরুল ৷ আর তারপরেই তাঁর জনপ্রিয়তা অনেকটাই বেড়েছে ৷ তাঁর 12 নম্বর ব্যাটেলিয়ানের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ডান্ট ডিএসপি উদয় ছেত্রীর অনুরোধে গানটি গেয়েছিলেন ৷ সেই গানের ভিডিয়ো ভাইরাল হতেই পুলিশ মহলেও জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তিনি ৷

বাংলাদেশের গায়ক তথা অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী সম্প্রতি চিলাপাতয় এসেছিলেন ৷ সেখানে তাঁর সঙ্গে পরিচয়ও হয়েছে নজরুল ইসলামের ৷ জানিয়েছেন, ভাওয়াইয়ার পাশাপাশি, পল্লিগীতিও গেয়ে থাকেন তিনি ৷ রাজ্যের সশস্ত্র পুলিশের 12 নম্বর ব্যাটেলিয়ানের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ডেন্ট ডিএসপি উদয় ছেত্রী জানিয়েছেন, নজরুল ইসলামের গান গাওয়ার বিষয়টি তাঁর ভালো লাগে ৷ হাজারো কর্মব্যস্ততার মধ্যেও নজরুলের গান-বাজনার প্রতি এই আগ্রহ তাঁকে প্রভাবিত করেছে ৷ আর তাঁর গানে ব্যারাকের অন্যান্য পুলিশকর্মীদের মনোরঞ্জনও হয় ৷ কাজে নতুন করে উৎসাহ পান তাঁরা ৷

নজরুল ইসলামের সঙ্গে অনুষ্ঠান করা বাঁশিবাদক দীপঙ্কর ডাকুয়া জানিয়েছেন, একজন পুলিশ কর্মী হয়ে নজরুল ইসলাম যেভাবে ভাওয়াইয়া গানের জন্য সময় বের করেন, তা তিনি কল্পনাও করতে পারেন না ৷ নজরুল ইসলাম ভাওয়াইয়া গানের জন্য পাগল বলে উল্লেখ করেন তিনি ৷ আর সামাজিক বয়কটের পরেও যেভাবে তিনি ভাওয়াইয়া গানের সঙ্গ ছাড়েননি, তারও প্রশংসা করেন দীপঙ্করবাবু ৷

আরও পড়ুন: ক্ষুধা মিটিয়ে শিল্পীসত্তা বাঁচিয়ে রাখাই দায় ভাওয়াইয়া শিল্পীদের

কোচবিহারের নাটাবাড়ির জায়গির চিলাখানা গ্রামে বাড়ি ছিল নজরুল ইসলামের ৷ 1966 সালে জন্ম তাঁর ৷ কোচবিহার নিউটাউন পাড়ার বাসিন্দা সুভাষ দাসের কাছে 1978 সালে প্রথম গান শেখা শুরু করেন ৷ এরই মাঝে 1982 সালে পরিবার-সহ তাঁকে সমাজ ব্রাত্য করে ৷ বলা হয়েছিল মুসলিম হয়ে গান গাওয়া চলবে না ৷ এমন অবস্থাতে নজরুল ইসলামের বাবা অবতার উদ্দিন আহমেদ এবং তাঁর মা রোকেয়া বেগমো নজরুলের গানের বিরোধিতা করেছিলেন ৷ তাই গান গাওয়াটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাঁর কাছে ৷ কিন্তু, হাল ছেড়ে দেননি তিনি ৷ পড়াশোনার মাঝেই গান চালিয়ে গিয়েছিলেন ৷

নাটাবাড়ি হাইস্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর তুফানগঞ্জ কলেজ থেকে স্নাতক হন নজরুল ইসলাম ৷ কলেজ পাশ করে মাত্র 22 বছর বয়সে পুলিশের চাকরিতে যোগ দেন ৷ 1988 সালে প্রথম পোস্টিং পান অভিভক্ত পশ্চিম দিনাজপুর জেলায় ৷ আর এই চাকরি পেয়ে গান-বাজনা চালিয়ে যাওয়ার জেদ আরও বেশি করে চেপে বসে নজরুলের ৷ ‘মনের আয়না’ নামে তাঁর ভাওয়াইয়া গানের প্রথম অ্যালবাম প্রকাশ পায় 2007 সালে ৷ এরপর একে একে মনের ময়না, রসের রসিয়া অ্যালবাম বের করেন নজরুল ইসলাম ৷ ইতিমধ্যে, তিনি 45টি ভাওয়াইয়া গান তৈরি করে ফেলেছেন ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.