ETV Bharat / state

পরিবার পাশে আছে তাই কোরোনার বিরুদ্ধে লড়তে পারছি, বলছেন চিকিৎসক

author img

By

Published : Jul 1, 2020, 7:04 AM IST

Updated : Jul 1, 2020, 9:46 AM IST

চঞ্চল ভুঁইঞা । জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের চিকিৎসক । বর্তমানে জেলায় লালারসের নুমনা সংগ্রহের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন । ট্রুন্যাট ল্যাবে লালারসের নমুনা পরীক্ষাও করেন ।

চঞ্চল ভুঁইঞা
চঞ্চল ভুঁইঞা

জলপাইগুড়ি, 1 জুলাই : জেলায় লালারস সংগ্রহের দায়িত্ব তাঁর কাঁধে । প্রায়ই কোরোনা হাসপাতালেও যেতে হয় । প্রশিক্ষণ দেন নার্স ও ল্যাবে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের । পরিবার, মৃত্যুভয়, সমস্ত আশঙ্কাকে দূরে সরিয়ে রেখে PPE পরে রোজ যেন এক অভিনব জীবনযুদ্ধে নামা । মাঝেমধ্যেই মানসিক চাপ-অবসাদ ঘিরে ধরে । পরিবারের কথা ভেবে প্রথম প্রথম আতঙ্কেও ভুগতেন । কিন্তু লড়াই থেমে থাকেনি । সারাদিনের ক্লান্তি শেষে পরের দিন সকালে আবার কাজে নেমে পড়েন জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের চিকিৎসক চঞ্চল ভূঁইঞা । এখনও সমান উদ্যমে কাজ করে চলেছেন । তাঁর কথায়, "দায়িত্ব তো কাউকে নিতেই হবে । আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে । তা পালন করে যাচ্ছি ।"

রাজ্যেও কোরোনা সংক্রমণ বেড়ে চলায় জেলা স্বাস্থ্যবিভাগগুলি নড়েচড়ে বসে । একদিন চিকিৎসক চঞ্চল ভুঁইঞাকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয় । জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ও উত্তরবঙ্গের OSD ডাঃ সুশান্ত রায় এবং সদর হাসপাতালের সুপার ডাঃ গয়ারাম নস্কর তাঁকে লালারস পরীক্ষার দায়িত্ব দেন । জেলার সমস্ত ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের দপ্তরে ও কোয়ারানটিন সেন্টারের পরিযায়ী শ্রমিকদের লালারস সংগ্রহ করার জন্য ল্যাব টেকিনিশিয়ানদের ট্রেনিং দিতে শুরু করেন । শুরু হয় জেলায় লালারস সংগ্রহের কাজ । পাশাপাশি চলতে থাকে জেলার 100 জন নার্সিং স্টাফ ও 60 জন টেকনিশিয়ানের প্রশিক্ষণ । পরের দিকে জলপাইগুড়ি কোরোনা হাসপাতালে ট্রুনাট মেশিনে লালারস পরীক্ষাও শুরু করে দেন চঞ্চলবাবু ।

জলপাইগুড়িতে নমুনা পরীক্ষা ও সংগ্রহের দায়িত্বে রয়েছেন চঞ্চল ভুঁইঞা

তাঁর নেতৃত্বে জলপাইগুড়িতে এখনও পর্যন্ত প্রায় 9 হাজার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে । এবিষয়ে চঞ্চলবাবু বলেন, "কোরোনার আগে ও পরে কাজের পদ্ধতি অনেকটাই পালটে গেছে । প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও PPE কিট পরে লালারস সংগ্রহ করতে হয় তা আমার সবাই শিখে যাই । প্রথম কোরোনা সন্দেহে চিকিৎসাধীনদের নমুনা পরীক্ষা চলত । পরে কোয়ারানটিন সেন্টারগুলিতে লালারস সংগ্রহ করতে যাই । পরীক্ষা শুরু হয় । পজ়িটিভ কেস বের হতে শুরু করে । অনেক সময় SARI ও কোরোনা রোগীদের দ্বিতীয়-তৃতীয় বার পরীক্ষা করি । পরের দিকে ট্রুন্যাট ল্যাবেও লালারস পরীক্ষা শুরু হয় । হাসপাতালে 280 জন পজ়িটিভ রোগী ভরতি ছিল । এখনও পর্যন্ত 232 জনকে ছুটি দেওয়া গেছে ।

কখনও ভয় লাগেনি ? তিনি বলেন, "প্রথমে একটা আতঙ্ক ছিল । সরকারি গাইডলাইন আসার পর কীভাবে কাজ করতে হবে, মাস্ক পরতে হবে সেবিষয়ে পড়াশোনা শুরু করি । সামাজিক দূরত্ব মেনে কাজও শুরু হয় । ধীরে ধীরে আতঙ্ক কেটেছে । অবশ্য পরিবার পাশে রয়েছে বলেই এই কাজ করতে পারছি । মানসিক চাপও হয় । অবসাদ আসে । তবে বাড়িতে সকালে ও বিকেলে মেডিটেশন করি । আবার পরের দিন কাজে যোগ দিই ।"

কোরোনাকে জয় করা সম্ভব বলে চঞ্চলবাবুর আশা । বলেন, "এক-দু'মাসের মধ্যে কোরোনা যাবে না । হয়ত ধীরে ধীরে সবকিছু কমবে । এখন যাঁরা কোরোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন তাঁরা সবাই প্রায় উপসর্গহীন । ফলে কোরোনার ক্ষতিকারক প্রভাব আগের থেকে কমেছে । অন্ততপক্ষে আমাদের জেলায় নেই । তবে সাবধানে থাকলে, কোরোনাকে জয় করা যাবে ।"

Last Updated : Jul 1, 2020, 9:46 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.