Sarat Chandra Chattopadhyay : 146 বছরের জন্মবার্ষিকী জৌলুসহীন, অবহেলায় শরৎচন্দ্রের দেবানন্দপুরের জন্মভিটে

author img

By

Published : Sep 17, 2021, 8:45 PM IST

Updated : Sep 18, 2021, 8:08 AM IST

অবহেলায় শরৎচন্দ্রের দেবানন্দপুরের জন্মভিটে

প্যারি পন্ডিতের পাঠশালা,বিশালাক্ষী মন্দির,গড়ের জঙ্গল, সরস্বতী নদীর বাঁশের ব্রিজ, দত্ত মুন্সীদের পূজার মন্ডপ, হেদুয়া পুকুর ৷ একাধিক জায়গার নাম তাঁর সাহিত্যের মধ্যে পাওয়া যায় । দেবানন্দপুরে এগুলো এখনও রয়েছে ৷ তবে অবহেলায় ৷ দেওয়ালের পলেস্তারা খসে ইট বেরিয়ে এসেছে ৷ জায়গায় জায়গায় আগাছা আর জঙ্গল ৷ প্রতিশ্রুতি মিললেও কোনও উন্নয়ন হয়নি বলে অভিযোগ ৷

দেবানন্দপুর, 17 সেপ্টেম্বর : হুগলির ছোটো গ্রাম দেবানন্দপুর ৷ এখানেই 15 সেপ্টেম্বর (31শে ভাদ্র) জন্মগ্রহণ করেন কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ৷ বাল্যজীবন থেকে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাগ্রহণ এখান থেকেই ৷ তবে একটা সময় দেবানন্দপুর থেকে দেউলটিতে চলে যান ৷ স্থানীয়দের কথায়, তাঁকে দেবানন্দপুর থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন ৷ পরে দেবানন্দপুরে ফিরে আসতে চাইলেও পারেননি ৷ কারণ তিনি তো মানুষের জন্য লিখতেন ৷ সেই সময়ের সমাজ তা মেনে নেয়নি ৷ আজও তাঁর জন্মদিন পালন করা হয় ৷ তবে আগের মতো আর সেই জৌলুস নেই ৷ তাঁর বসতবাড়ির অবস্থাও জীর্ণ ৷ দীর্ঘদিন সংস্কার হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের ৷ দেবানন্দপুরের এই জন্মভিটেকে রাজ্য সরকার পর্যটন বিভাগের আওতায় আনলেও এখনও পর্যন্ত কোনও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ ৷ শরৎচন্দ্রের স্মৃতি বিজরিত জন্মভিটে এখন একপ্রকার অবহেলায় পড়ে রয়েছে ৷

প্যারি পন্ডিতের পাঠশালা,বিশালাক্ষী মন্দির,গড়ের জঙ্গল, সরস্বতী নদীর বাঁশের ব্রিজ, দত্ত মুন্সীদের পূজার মন্ডপ, হেদুয়া পুকুর ৷ একাধিক জায়গার নাম তাঁর সাহিত্যের মধ্যে পাওয়া যায় । দেবানন্দপুরে এগুলো এখনও রয়েছে ৷ তবে অবহেলায় ৷ যেমন প্যারি পন্ডিতের পাঠশালা ৷ এখানকার দেওয়ালের পলেস্তারা খসে ইট বেরিয়ে এসেছে ৷ বসতবাড়ি ও বৈঠকখানার জানলার-দরজা ভেঙে যাচ্ছে । জায়গায় জায়গায় আগাছা আর জঙ্গল ৷ সেইসঙ্গে লাইব্রেরির মধ্যে কয়েকটি স্ট্যাচুতে সবিস্তারে শরৎচন্দ্রের জীবনী মডেলের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে । তবে সেগুলো দীর্ঘদিনের পুরানো ৷ ধুলো পড়েছে ৷ শুধুমাত্র কিছু রাস্তা সংস্কার ছাড়া ও দুএকটা লাইট লাগানো ছাড়া এখানে কোনও উন্নয়ন হয়নি বলে দাবি স্থানীয়দের ৷

মন্দিরের দেওয়ালের পলেস্তারা খসে ইট বেরিয়ে গিয়েছে
মন্দিরের দেওয়ালের পলেস্তারা খসে ইট বেরিয়ে গিয়েছে

স্থানীয়দের বেশ কয়েকটি দাবি রয়েছে ৷ যেমন- সাহিত্যিকের জন্মভিটে সৌন্দর্যায়ন করে সংগ্রহশালা করুক রাজ্য সরকার । দেবানন্দপুরে তৈরি করা হোক দূর দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের জন্য আবাসন । সাহিত্য প্রেমীদের জন্য ব্যান্ডেল থেকে দেবানন্দপুরে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা হোক । যেমনভাবে দেউলটিকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে, তেমন এই জন্মভিটেকেও পর্যটনের ব্যবস্থা করুক সরকার । তবে শোনা যায়, সরকারি তরফে 11 কোটি টাকার একটা প্রকল্পের ঘোষণা করা হয়েছিল । যদিও তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি ৷ কেন শরৎচন্দ্রের দেবানন্দপুর এখনও বঞ্চিত, প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয়রা ।

আরও পড়ুন, Rash Behari Bose : বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর জন্মভিটে সুবলদহ গ্রাম আজও অবহেলায়

এই বিষয়ে মধুসূদন চক্রবর্তী বলেন, "আমাদের দুর্ভাগ্য 146 বছর জন্মদিনের পালনের পরও শরৎচন্দ্রের জন্মভিটে অবহেলিত । বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে শরৎ অনুরাগী মানুষ এই দেবানন্দপুরে আসেন । ইচ্ছা থাকলেও এখানে কোনও থাকার ব্যবস্থা নেই । এই সরকারের 11 বছরেও শরৎচন্দ্র জন্মভিটেতে কোনও ইট গাঁথা হয়নি । দেউলটিকে যেভাবে তুলে ধরা হচ্ছে, দেবানন্দপুরের তুলনায় ততটা তা উল্লেখযোগ্য নয় । শরৎচন্দ্র এখান থেকে বিতাড়িত হওয়ার পরই দেউলটি গিয়েছিলেন । পরে ফিরেও এসেছিলেন । কিন্তু, তৎকালীন সময়ে দেবানন্দপুরের সমাজব্যবস্থা তাঁকে মেনে নেয়নি । তিনি মানুষের হয়ে লিখেছেন ৷ সেই কারণে তাকে মেনে নিতে পারেনি সেই সময়ের শাসকরা । দেবানন্দপুরের সার্বিক উন্নতি হোক । আমরা চাই পর্যটকদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করুক সরকার । শরৎচন্দ্রের জন্মভিটেতে শুধু রং করা ছাড়া আর কিছুই করা হয়নি । ব্যান্ডেল থেকে দেবানন্দপুর যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ ৷ তার ব্যবস্থা করুক। সেইসঙ্গে সেভাবে কোনও শৌচাগার নেই ৷ সেই দিকে নজর দেওয়া হোক ।

দরজা ও জানালাগুলো ভেঙে পড়ছে
দরজা ও জানালাগুলো ভেঙে পড়ছে

আরও পড়ুন,Independence Special : ক্ষমতার পালাবদল থেকে স্বাধীনতা লাভ, বহু ইতিহাসের সাক্ষী আজমেঢ় দুর্গ

প্রতিবছর, আজকের দিনটা দেবানন্দপুরে সরকারি খরচে কিছু অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয় ৷ তবে আগের মতো আর জৌলুস নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা ৷ আর করোনা আবহে তো আরও বন্ধ রয়েছে অনুষ্ঠান ৷ শরৎ স্মৃতি পাঠাগারের গ্রন্থাগারিক দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, "করোনা পরিস্থিতির কারণেই শরৎচন্দ্রের জন্মদিনের অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে । দেবানন্দপুর শরৎচন্দ্রের জন্মস্থান । দেউলটিকে যেভাবে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে, সেটা দেবানন্দপুরকে দেওয়া হচ্ছে না ৷ এই পাঠাগারের গ্রন্থাগারিক হিসেবে এটাই আমার আক্ষেপ ৷ কয়েক কোটি টাকার প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছিল ৷ কেন জানি না কিছু হল না । ভবিষ্যতে এই জন্মভিটে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে যেন গড়ে তোলা হয়, সেটাই আবেদন রাজ্য সরকারের কাছে । কারণ, দেবানন্দপুর অনেকটাই বঞ্চিত । সাধারণ মানুষের কাছে আরও প্রচারের আলোয় আসুক শরৎচন্দ্রের এই জন্মভিটে । এটাই চাওয়া ৷"

আরও পড়ুন, Independence Special : ব্রিটিশদের চোখে চোখ রেখে লড়েছিলেন রামগড়ের রানি অবন্তী বাঈ

দেবানন্দপুর পাঠাগারের গ্রন্থাগারিক ও স্থানীয় মানুষ একরাশ ক্ষোভের কথা তুলে ধরেছেন । তবে স্থানীয় চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদার সমস্ত অভিযোগ খণ্ডন করে বলেন, বর্তমানে আমরা এখনও প্যানডেমিকের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি । সবক্ষেত্রেই আর্থিক সমস্যা রয়েছে । আমাদের মাথায় আছে দেবানন্দপুরকে পর্যটনের আওতায় আনা । তার জন্য সময় লাগবে । অপেক্ষা করতে হবে । রাজ্য সরকার যথেষ্ট তৎপর রয়েছে ৷ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতিতে পর্যটনের ব্যবস্থা করা হবে । তবে একটু অপেক্ষা করতে হবে ৷

প্রতি বছরই প্রতিশ্রুতি মিলেছে ৷ কিন্তু প্রতিশ্রুতি কবে পূরণ হবে তা জানা নেই ৷ তবুও এই দেবানন্দপুরকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠবে সেই আশাতেই বুক বাঁধছেন দেবানন্দপুরবাসী ।

Last Updated :Sep 18, 2021, 8:08 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.