ETV Bharat / state

Tant Industry Crisis: শূন্য ঘর, গঙ্গারামপুরের তাঁতশিল্পীদের হাতে এখন টোটোর স্টিয়ারিং

author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Aug 25, 2023, 3:55 PM IST

ETV Bharat
ধুঁকছে তাঁতশিল্প

পুজো আসছে ৷ তবে গঙ্গারামপুরের তাঁতশিল্পীদের কেউ টোটো চালাচ্ছেন ৷ কেউ ঘর ছেড়ে বিদেশে গিয়েছেন কাজের খোঁজে ৷ খালি তাঁতঘরের রোদ্দুরে ধুলো ভাসছে ৷ এদিক ওদিক ছড়িয়ে শাড়ি ৷ সংকটে দক্ষিণ দিনাজপুরের তাঁতশিল্প ৷

গঙ্গারামপুরের তাঁতশিল্পীদের কেউ টোটো চালাচ্ছেন

গঙ্গারামপুর, 25 অগস্ট: দুর্গাপুজো আর দু'মাসেরও কম সময় বাকি ৷ এদিকে তাঁতঘরে শব্দ নেই, নেই কারিগর ৷ হ্যাঁ এমন দশা দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের তাঁতশিল্পের ৷ 2017 সালের তাঁত সেনসাস অনুযায়ী, তখন দক্ষিণ দিনাজপুরে 12 হাজার তাঁতশিল্পী ছিলেন ৷ তাঁদের অধিকাংশই গঙ্গারামপুর ও তপনের ৷ এখন মাত্র 5 বছরের মধ্যে 70 শতাংশ শিল্পীই তাঁত গুটিয়ে ফেলেছেন ৷ তাই জেলার তাঁতশিল্প এখন ধ্বংসের মুখে ৷ বহু তাঁতি তাঁত ছেড়ে টোটো ধরেছেন ৷ অনেকে বিদেশে চলে যাচ্ছেন ৷ সেখানেই নাকি এখন তাঁতিদের কদর ৷

তাঁতিদের অভিযোগ, এই শিল্পের মূল কাঁচামাল সুতো ৷ তার জোগান জেলায় নেই ৷ তাঁতে বোনা হ্যান্ডলুম শাড়ি বা অন্য পোশাকের দাম পাওয়া যাচ্ছে না ৷ অথচ মানুষ অনেক বেশি দাম দিয়ে পাওয়ারলুমের শাড়ি, জামাকাপড় কিনছে ৷ রাজ্য সরকার তাঁতশিল্পীদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেও তা যথেষ্ট নয় ৷ সুতোয় বোনা, তাঁতশিল্পীদের তৈরি পোশাক বিক্রিরও যথাযথ ব্যবস্থা সরকারের তরফে করা হয়নি ৷ অথচ হ্যান্ডলুমের চাহিদা দেশে তো বটেই, রয়েছে বিদেশেও ৷ এদিকে এখন পেট চালানোই দায় ৷ তাই তাঁতশিল্পীরা অন্য পেশা বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন ৷

আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর তৈরি ব্যাংক থেকে সুতো কিনলে তবেই হবে তাঁত শিল্পের উন্নয়ন, জানালেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ

রাজ্যে তো বটেই, দেশের বিভিন্ন অংশে সুনাম ছিল গঙ্গারামপুরের তাঁতের শাড়ির ৷ এক দশক আগেও এমন সময়ে নাওয়া-খাওয়ার সময় পেতেন না গঙ্গারামপুরের তাঁতশিল্পীরা ৷ পুজোর কয়েক মাস আগে থাকতেই পাইকারদের বরাত আসত ৷ সময়মতো শাড়ি তৈরি না হলে পাইকাররা শিল্পীদের বাড়িতে এসে তাগাদা দিত ৷

এখন সেসব সোনালি দিন অতীত ৷ পড়ন্ত ব্যবসায় সংসার চালাতে না পেরে একসময়ের নামী তাঁতিরা এখন টোটো চালাচ্ছেন ৷ কেউ আবার পরিযায়ী শ্রমিক ৷ এই শিল্পের সেদিন ফিরিয়ে আনতে 2019 সালে হ্যান্ডলুম দফতরের উদ্যোগে গঙ্গারামপুরের ঠেঙ্গাপাড়ায় কমনফেসিলিটি সেন্টার এবং তন্তুজ শোরুমের উদ্বোধন হয় ৷ সরকারি স্বীকৃত সংস্থাটি বর্তমানে মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছে ৷ শোরুম বন্ধ ৷ এদিকে পাশে উত্তর দিনাজপুরে তৈরি হচ্ছে টেক্সটাইল পার্ক ৷ তাহলে সরকারি সাহায্য থেকে কেন ব্রাত্য এখানকার তাঁতশিল্প ৷ প্রশ্ন গঙ্গারামপুর জুড়ে ?

প্রশাসন সূত্রে খবর, জেলা হ্যান্ডলুম দফতরের অধীনে তিনটি কোঅপারেটিভ, তিনটি ক্লাস্টার কমন ফেসিলিটি সেন্টার, স্বনির্ভর গোষ্ঠী, রেজিস্টার্ড তাঁতি থাকলেও সব মিলিয়ে এখন দক্ষিণ দিনাজপুরে শ'খানেক তাঁতশিল্পী কাজ করছেন ৷ গঙ্গারামপুর ও তপনের তাঁতিপাড়ার প্রতিটি বাড়িতে তাঁত থাকলেও বহুদিন ধরে সেসব বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে ৷ তাঁতিদের দাবি, সরকার এই মৃতপ্রায় শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করুক ৷ গঙ্গারামপুরে ফিরে আসুক শরতের ব্যস্ত সময়, তাঁতের শব্দ ৷

আরও পড়ুন: বাংলার হারিয়ে যাওয়া তাঁত শিল্পকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে চান নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ

গঙ্গারামপুরের এক তাঁতশিল্পী আশিস দাস বলেন, "একটা সময় বিভিন্ন ডিজাইনের হ্যান্ডলুমে শাড়ি তৈরি করেছি ৷ পুজোর সময় সময় পেতাম না ৷ কিন্তু এখন মেশিনে তৈরি শাড়ির চাহিদাই বেশি ৷ হ্যান্ডলুমে শাড়ি তৈরি করার খরচ ও খাটুনি, দুটোই বেশি ৷ সারাদিন টানা খাটলে একটি শাড়ি তৈরি করা যায় ৷ কিন্তু সেই শাড়ি বিক্রি করে 200 টাকাও রোজগার হচ্ছে না ৷" তিনি আরও জানান, এলাকার ঠেঙ্গাপাড়ায় সরকারি ইয়ার্ন ব্যাংক রয়েছে ৷ সেখান থেকে তাঁতিদের নির্ধারিত মূল্যে সুতো দেওয়ার কথা ৷ শুধুমাত্র সেই সুতো দিয়ে শাড়ি তৈরি করলেই সেসব তন্তুজ কিনবে ৷ এই শিল্পে কাঁচামালের ভীষণ সমস্যা ৷ উৎপাদিত শাড়ি বিক্রির জায়গা নেই ৷ এভাবে সংসার চালানো যাচ্ছে না ৷ তাই তাঁত বন্ধ করে তিনি টোটো কিনেছেন ৷ সারাদিন টোটো চালালে কম-বেশি 500 টাকা রোজগার হয়ে যায় ৷

গঙ্গারামপুর হ্যান্ডলুম দফতরের আধিকারিক দেবব্রত লাহা বলেন, "জেলায় প্রায় 12 হাজার তাঁতি আছেন ৷ তবে আমরা দেখেছি, বেশিরভাগ তাঁতি তাঁত গুটিয়ে রেখেছেন ৷ আমাদের দফতরের অধীনে তিনটি ক্লাস্টার ও তিনটি কোঅপারেটিভ কোনওরকমে চলছে ৷ কয়েকজন তাঁতি তন্তুজ থেকে কাজ পাচ্ছেন ৷ তবে সবাই নয় ৷" তাঁর গলাতেও একই কথা ৷ যেসব তাঁতিরা কাজ পাচ্ছেন না, তাঁরা অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন ৷ তাঁতিরা সরকারি নির্ধারিত মূল্যে সুতো চায় ৷ উৎপাদিত শাড়ি বিক্রির বাজার চায় ৷ আধিকারিক দাবি করলেন, "পেশা বদলে নেওয়া তাঁতিদের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে আমরা দফতরের তরফে সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি ৷"

আরও পড়ুন: নিত্যনতুন ডিজাইনের অভাব, বাজার হারাচ্ছে ধনেখালির তাঁতশিল্প

ধুলোর উপর ধুলো জমেছে তাঁত বোনার মেশিনগুলিতে ৷ রোদে, জলে শুকিয়ে জীর্ণ ঘরে অবহেলায় পড়ে রয়েছে ৷ সূর্যের আলো এসে পড়েছে তার উপর ৷ তাঁত বোনার কারিগর কোথায় ? মানুষ ছাড়া শূন্য তাঁতঘর খাঁখাঁ করছে ৷ তাঁতিদের উঠানে ফিরবে কি সেই সোনালি রোদ্দুর ?

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.