ETV Bharat / state

নদী ভাঙন-আমফান দুর্নীতি ইস্যু করেও লাভ হল না, সুন্দরবনে ধরাশায়ী গেরুয়া শিবির

author img

By

Published : May 3, 2021, 10:26 PM IST

একুশের বিধানসভা নির্বাচনে সুন্দরবনে ধরাশায়ী হল গেরুয়া শিবির ৷ নদী বাঁধ ভাঙন বা আমফান দুর্নীতি নির্বাচনী প্রচারের ইস্যু করেও লাভ হল না কোনও ৷ কাকদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা, সাগর ও রায়দিঘি বিধানসভার বাসিন্দারা ভরসা রেখেছেন সেই তৃণমূলেই ৷ এবং সেই ভরসার প্রতিচ্ছবি পাওয়া গিয়েছে তৃণমূল প্রার্থীদের এক থেকে দেড় লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জয়ে ৷ তৃণমূলের তরফে দাবি করা হয়েছে, উন্নয়নমূলক প্রকল্পের জন্য এই ফলাফল পাওয়া গিয়েছে ৷ তবে অভিজ্ঞরা বলছেন, শুধু উন্নয়নমূলক প্রকল্প নয়, এমনিতেও জেলায় তৃণমূলের সংগঠন বেশ মজবুত ৷

সুন্দরবনে ধরাশায়ী গেরুয়া শিবির
সুন্দরবনে ধরাশায়ী গেরুয়া শিবির

কাকদ্বীপ, 3 মে : নদী বাঁধের ভাঙন ও আমফান দুর্নীতিকে হাতিয়ার করে লাগাতার প্রচারে ঝাঁঝ বাড়িয়েও বিশেষ সুবিধা করতে পারল না বিরোধীরা । বিধানসভা নির্বাচনে আবারও সুন্দরবন জুড়ে ফুটল জোড়াফুল । জেলার অন্য বিধানসভা কেন্দ্রগুলির মতোই ব্যাপক মার্জিনে জয়লাভ করেছে সুন্দরবনের রায়দিঘি, কাকদ্বীপ, সাগর ও পাথরপ্রতিমার তৃণমূল প্রার্থীরা । তৃণমূলের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজগুলি দেখেই প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ বিপুল ভোটে জিতিয়েছেন প্রার্থীদের । এবারের লড়াইয়ে তৃণমূলের মূল প্রতিপক্ষ ছিল বিজেপি । কিন্তু নীচুতলায় সংগঠনের অবস্থা মজবুত না হওয়ায় বিজেপি লড়াই থেকে ছিটকে পড়েছে বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ।

আমপান ঘূর্ণিঝড়ের সময় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল সুন্দরবনজুড়ে । ভেঙে পড়েছিল একের পর এক বাড়ি । কয়েক কিলোমিটার নদী ও সমুদ্র বাঁধ ভেঙে জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল গ্রামের পর গ্রাম । তবে পরিস্থিতির মোকাবিলায় রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার আর্থিক ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করে । বিজেপির দাবি, এই ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে ব্যাপক হারে দুর্নীতি করেছে তৃণমূল । আর এবারের ভোটের আগে আমপান দুর্নীতি নিয়ে প্রচারে নেমে পড়ে বিজেপি, সিপিএম-সহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি । আমপান দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়ে 'ডবল ইঞ্জিন' সরকার গড়ার গড়ার লক্ষ্যে সুন্দরবনে বারংবার প্রচারে আসেন বিজেপি হেভিওয়েট নেতারা । কে ছিল না সেই তালিকায় ! কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ, রাজনাথ সিং, যোগী আদিত্যনাথ, স্মৃতি ইরানি থেকে শুরু করে একের পর এক নেতারা সভা ও রোড-শো করেছেন সুন্দরবনে । আর সেই সভাগুলি থেকে সুন্দরবনের জন্য একাধিক উন্নয়নের আশ্বাস দেওয়ার পাশাপাশি আমপান দুর্নীতি নিয়ে তৃণমূল সরকারকে তীব্র আক্রমণে বিঁধতে দেখা গিয়েছিল বিজেপি নেতাদের ।

কিন্তু আশ্বাস বাক্যে চিঁড়ে ভেজেনি সুন্দরবনের কাকদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা, সাগর ও রায়দিঘি বিধানসভার বাসিন্দাদের । বরং তাঁরা ভরসা রেখেছেন এলাকার দীর্ঘদিনের বিধায়ক এবং পরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিদের উপর । কাকদ্বীপ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে 1 লক্ষ 13 হাজার 444 ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন পরপর দু'বারের তৃণমূল বিধায়ক মন্টুরাম পাখিরা । পাথরপ্রতিমা থেকে 1 লক্ষ 19 হাজার 590 ভোটে জয়ী হয়েছেন দু'বারের বিধায়ক সমীর জানা । সাগর থেকে 1 লক্ষ 27 হাজার 861 ভোটে জয়ী হয়েছেন দু'বারের বিধায়ক বঙ্কিম হাজরা । তবে আগে কখনও ভোটে না দাঁড়ালেও রায়দিঘির মানুষের কাছে পরিচিত মুখ তৃণমূল নেতা চিকিৎসক অলক জলদাতা । প্রথমবার ভোটে দাঁড়িয়েই 1 লক্ষ 15 হাজার 707 ভোটে জয়যুক্ত হয়েছেন তিনি । তবে রায়দিঘিতে বড় ফ্যাক্টর ছিলেন বর্ষীয়ান বাম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় । আমপানের সময় বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনদের প্রশংসা পেয়েছিলেন তিনি । তিনি এবার ভোট পেয়েছেন 36 হাজার 931 ৷ তাঁকেই হারিয়ে এবার রায়দিঘি থেকে জয়ী অলক ।

জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র তথা কাকদ্বীপের জয়ী তৃণমূল প্রার্থী মন্টুরাম পাখিরা বলেন, "মুখ্যমন্ত্রীর সামাজিক উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলির সুবিধা পেয়েছেন মানুষ । বিপদ-আপদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই ছিলেন মানুষের পাশে । তাই সুন্দরবনের মানুষ আবারও তৃণমূলের উপর ভরসা রেখেছেন ।"

তবে এই জয় শুধুই সামাজিক প্রকল্পের কল্যাণে হয়েছে তা মানতে নারাজ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ । তাঁদের মতে, জেলায় তৃণমূলের সংগঠন অনেকটাই মজবুত। সে তুলনায় বিজেপির নীচুতলার সাংগঠনের অবস্থা ভঙ্গুর । তার উপর সুন্দরবনের মহিলা ও সংখ্যালঘু ভোট এককাট্টা হয়ে তৃণমূলের দিকে যাওয়াতেই জয়ী হয়েছে জোড়াফুল শিবির ।

আরও পড়ুন: "দলত্যাগীরা তৃণমূলে ফিরতে চাইলে স্বাগত", হ্যাট্রিকের পর মমতা

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.