গঙ্গাসাগর, 15 জানুয়ারি: মকর সংক্রান্তির পুণ্য লগ্নে শনিবার ভোররাত থেকে গঙ্গাসাগর বেলাভূমিতে ভিড় করেছে লক্ষ লক্ষ মানুষ ৷ রবিবার সকাল থেকে গঙ্গাসাগরে চলছে ডুব ৷ মোক্ষলাভের আশায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গঙ্গাসাগরে ভিড় জমিয়েছে মানুষজন কার্যত গঙ্গাসাগর এখনও হয়ে উঠেছে মিনি ভারতে ৷ সাগরের জলে সার দিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে কয়েক জন ৷ সিক্ত বসন, হাত জোড় করে তাকিয়ে রয়েছেন জলের দিকে। একটু দূরে কোমর জলে দাঁড়িয়ে আরও কয়েকজন ৷ আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রার্থনা করছেন ৷ আলো ফুটতে না-ফুটতেই ক্রমশ ভিড় বাড়তে লাগল ৷ সবারই লক্ষ্য, সাগরসঙ্গমে ডুব দিয়ে পুণ্য অর্জন ৷
মকর সংক্রান্তির শাহী স্নানের তিথি শুরু হয়েছে শনিবার সন্ধে থেকে ৷ শাহী যোগ থাকবে রবিবার বিকেল পর্যন্ত ৷ মকর সংক্রান্তিতে তিল ধারণের জায়গা নেই গঙ্গাসাগর সমুদ্র সৈকতে ৷ গঙ্গাসাগরের স্নান ঘাট এক, দুই, তিন নম্বর... সব রাস্তাতেই পুণ্যার্থীর ঢল চলেছে সাগর স্নানে ৷ ভিড়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নজরদারির দায়িত্বে থাকা কর্মীদের গলার স্বর ৷ তাঁদের মুখে অবিরত শোনা গিয়েছে, 'আগে চলিয়ে, আগে চলিয়ে' নির্দেশ ৷ মেলা যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যেতে পারে তা নিশ্চিত করতে সমস্ত রকমের ব্যবস্থা নিয়ে রেখছে প্রশাসন। মেলা আয়োজনের দায়ভার বেশ কয়েকজন মন্ত্রীকে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি নিজেও প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে গিয়েছিসেন কয়েক দিন আগে ।
এদিকে, দেশবাসীকে মকর সংক্রান্তির শুভেচ্ছা জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । সামাজিক মাধ্যমে তিনি লেখেন, "প্রকৃতি এবং সংস্কৃতির মহাপর্ব মকর সংক্রান্তির শুভেচ্ছা । এই উৎসবে সকলের জীবন নতুন উদ্যোম নিয়ে আসুক । অলসতা দূর করুক।" মকর সংক্রান্তির শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী থেকে শুরু করে অনেকেই ।
আরও পড়ুন: এই মজাদার খাবারের সঙ্গে মকর সংক্রান্তি উদযাপন করুন
সকালের আলো ততক্ষণে ফুটে গিয়েছে ৷ ভিড়ও তখন দ্বিমুখী ৷ একদল সাগরস্নানে ছুটছেন ৷ অন্য দল স্নান সেরে কপিল মুনির মন্দিরের রাস্তা ধরেছেন ৷ পরনে ভেজা জামাকাপড় ৷ কারও কারও মাথায় পুঁটলি ৷ ক্রমশ ভিড় এমনই বেড়েছে যে স্নান সেরে 2 নম্বর রাস্তা ধরে মন্দিরে পুজো দিতেই কয়েক ঘণ্টা সময় লেগে গিয়েছে ৷ ভিড়ের চরিত্রও ছিল রঙিন ৷ একদিকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দেহাতি মানুষেরা, অন্য দিকে খোল, করতাল নিয়ে বিদেশি পুণ্যার্থীরা ৷ দুপুরে ভিড় সামান্য কমেছিল বটে ৷ শনিবার সন্ধেয় শাহী স্নানের যোগ শুরু হতেই ঢল নেমেছে মন্দির থেকে সাগরের মধ্যবর্তী তল্লাটে ৷
ভিড়ে অবশ্য বেগ পেতে হয়েছে পুণ্যার্থীদের ৷ মধ্যপ্রদেশ থেকে এ বছরই প্রথম গঙ্গাসাগর এসেছেন এক তীর্থযাত্রী ৷ তীর্থযাত্রীরা জানান, চারধাম ঘুরে এখানে এসেছি ৷ পুজো সেরে আজই বেরনোর কথা ৷ কিন্তু কখন যে বেরবো সেটাই বুঝতে পারছি না ৷ ভিড় সামলাতে গঙ্গাসাগরে তৎপর পুলিশ এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা। বিপদ ঠেকাতে সক্রিয় আছে উপকূলরক্ষী বাহিনীও। জলপথে স্পিড বোট এবং জলযান নিয়ে চলছে নিরন্তর নজরদারি ৷ প্রতি বছরের মতোই মেলা শেষ না-হওয়া পর্যন্ত নজরদারি চলবে ৷
গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে শনিবার বিকেলে জেলা প্রশাসনের সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পুলক রায়, অরূপ বিশ্বাস, সুজিত বসু, ইন্দ্রনীল সেনের মতো রাজ্যের মন্ত্রীরা। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, এ বছর ৩৯ লক্ষ পুণ্যার্থী সাগরে এসেছেন ৷ অতিমারি পর্ব পেরিয়ে এই ভিড় 'দেশের মিলন ভূমি' বলেই দাবি করেছেন রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা ৷ মকর সংক্রান্তিতে ইতিমধ্যে গঙ্গাসাগরে এসে পৌঁছেছে ৪০ লক্ষ মানুষ। সমুদ্র সৈকতে গুজিত হচ্ছে জয় কপিল মনি কি জয় ৷
আরও পড়ুন: পৌষ পার্বণের আগে ঢেঁকিতে পা, কালের নিয়মে ফিকে বাংলার ঐতিহ্য
