ETV Bharat / state

Women Empowerment : লকডাউনে পড়াশোনায় ইতি, ‘মাতৃযান’ চালিয়েই সংসারের হাল ধরেছেন চম্পা

author img

By

Published : Oct 30, 2021, 10:55 PM IST

20 year old Champa Bera from Pathar Pratima bears the expenditure of her family by driving ambulance for pregnant women
‘মাতৃযান’ চালিয়েই সংসারের হাল ধরেছেন চম্পা

চম্পার বাবা রবীন্দ্রনাথ বেরাই এত দিন অ্যাম্বুল্যান্স চালিয়ে সংসারের খরচ জোগাতেন । একার রোজগারেই তিন মেয়েকে বড় করেন । বিয়েও দেন দু’জনের ৷ কিন্তু নার্ভের সমস্যা নিয়ে তি-তিনটি অপারেশন হওয়ার পরেও, লকডাউনে ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি ৷

পাথরপ্রতিমা, 30 অক্টোবর: অভাবের সংসারে পড়াশোনা ছাড়তে হয়েছে মাঝপথেই । কিন্তু লকডাউনের কয়েক মাসে গোটা পাথরপ্রতিমার ভরসা হয়ে উঠেছেন চম্পা বেরা । খাতা-কলমের পরিবর্তে তাঁর হাতে এখন ‘মাতৃযান’ অ্যাম্বুল্যান্সের স্টিয়ারিং । আর তাতেই পাথরপ্রতিমায় প্রসূতিদের ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছেন বছর কুড়ির এই তরুণী ।

লক্ষ্মীজনার্দনপুর অঞ্চলের মহেশপুর গ্রামে বাড়ি চম্পার । বাড়ির ছোট মেয়ে তিনি । বড় দুই দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে আগেই । অভাবের সংসারে তা-ও পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন চম্পা । লকডাউন চলাকালীনই উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন । রায়দিঘি কলেজে প্রথম বর্ষে ভর্তিও হন । কিন্তু বাবার অসুস্থতা তাঁকে কলেজ ছাড়তে বাধ্য করে । বর্তমানে তিনিই পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য ।

আরও পড়ুন: Prashant Kishor: বিজেপি কোথাও যাচ্ছে না, সত্যিটা বুঝছেন না রাহুলই; মন্তব্য প্রশান্তর

চম্পার বাবা রবীন্দ্রনাথ বেরাই এত দিন অ্যাম্বুল্যান্স চালিয়ে সংসারের খরচ জোগাতেন । একার রোজগারেই তিন মেয়েকে বড় করেন । বিয়েও দেন দু’জনের ৷ কিন্তু নার্ভের সমস্যা নিয়ে তিন-তিনটি অপারেশন হওয়ার পরও, লকডাউনে ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি ৷ তাতে ডান পায়ের কর্মক্ষমতা যেমন চলে যায়, তেমনই চিকিৎসা করাতে গিয়ে জমানো টাকা তো খরচ হয়ে যায়ই, মাথায় চাপে প্রচুর টাকার ঋণও ৷

এমন পরিস্থিতিতে উপায় না দেখে চম্পাকেই সংসারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিতে হয় ৷ এমনি খেয়ালের বশে মেয়েকে অ্যাম্বুল্যান্স চালানো শিখিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথবাবু ৷ এই দুঃসময়ে বাবার শেখানো সেই বিদ্যাই শাপে বর হয় চম্পার ৷ ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, প্রত্যন্ত এলাকা থেকে অ্যাম্বুল্যান্স-এ চাপিয়ে প্রসূতিদের নিয়ে আসার কথা ছিল রবীন্দ্রনাথবাবুর ৷ তাঁর জায়গায় নিজে সেই কাজ হাতে তুলে নেন চম্পা ৷

লকডাউনে পড়াশোনায় ইতি, ‘মাতৃযান’ চালিয়েই সংসারের হাল ধরেছেন চম্পা

আরও পড়ুন: TMC-Congress: কংগ্রেসের রাজনীতি শুধু টুইটারেই, বিজেপিকে হারানোর গরজ নেই, কটাক্ষ তৃণমূলের

চম্পা বলেন, ‘‘অ্যাম্বুল্যান্স চালাত । আমাকেও শিখিয়েছিল । কিন্তু বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ে । তাতে কলেজের প্রথম বর্ষেই পড়াশোনায় ইতি টানতে হয় আমাকে । এখন আমাকেই দেখতে হচ্ছে সংসার । অ্যাম্বুল্যান্স চালিয়ে যা রোজগার হয়, তা থেকে বাবার ওষুধ চলে । সংসারের খরচও উঠে আসে । পরবর্তী কালে সরকার সাহায্য করলে ফের পড়াশোনা শুরু করব ।’’

শুরুতে মেয়ের সিদ্ধান্তে কিন্তু কিন্তু করলেও, চম্পার অদম্য জেদ এবং লড়াকু মানসিকতার কাছে হার মানেন রবীন্দ্রনাথবাবু এবং তাঁর স্ত্রী ৷ তাতে শুধু বাবার চিকিৎসার খরচই বইছেন না চম্পা, সংসারের হালও ধরেছেন ৷ তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ এলাকাবাসীও ৷ আশাকর্মীদের ফোন পেলেই অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে বেরিয়ে পড়েন চম্পা ৷ আবার অভাবী মানুষজনের ক্ষেত্রে বিনা ভাড়াতেই রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দেন ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.