সংক্রমণের ভয়ে নেই খদ্দের, মাথায় হাত ফুচকা বিক্রেতাদের

author img

By

Published : Jul 25, 2020, 1:48 AM IST

Coochbehar news
ধুঁকছে কোচবিহারের ফুচকা ব্যবসা ()

কয়েক পুরুষ ধরে ফুচকা বিক্রি করে আসছেন ওঁরা । কিন্তু এখন কোরোনার ভয়ে ফুচকা খেতে আসছেন না মানুষ । শিকেয় উঠেছে কোচবিহারের ফুচকা ব্যবসা ।

কোচবিহার, 25 জুলাই : দই ফুচকা । ফুচকা চাট । জল ফুচকা । আরও কত কী ! নামগুলি শুনলেই যেন জিভে জল আসে । কিন্তু লকডাউনের শুরু থেকেই বন্ধ ফুচকা বিক্রি । আর এর জেরেই বিপাকে পড়েছেন কোচবিহার জেলার পাঁচ মহকুমার অন্তত হাজার দু'য়েক ফুচকা বিক্রেতা । ব্যবসা বন্ধ থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা । তাঁদের বক্তব্য রেশনের মাধ্যমে চাল, ডাল কিংবা আটা দিলেও তাতে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে । তাই তাঁদের বিষয়ে বিবেচনা করুক সরকার ।

কোচবিহার জেলার পাঁচটি মহকুমা মিলিয়ে অন্তত হাজার দুয়েক ফুচকা বিক্রেতা রয়েছেন । দুপুরের পর থেকেই বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের সামনে, গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে, পার্কের সামনে ফুচকা নিয়ে হাজির হন তাঁরা । সাধারণ জল ফুচকার পাশাপাশি দই ফুচকা, চাটনি ফুচকা । আরও না জানি কত রকমারি ফুচকা । দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত চলত ব্যবসা । কিন্তু এখন কোরোনার জেরে ব্যবসা শিকেয় উঠেছে ।

কোচবিহার শহরের দেবীবাড়ি লিচুতলা এলাকায় রয়েছে প্রায় 50 টি পরিবারের বসবাস । হিন্দিভাষী এই পরিবারগুলি কয়েকপুরুষ ধরেই ফুচকা বিক্রি করে আসছে কোচবিহার শহরে । কিন্তু গত মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে বন্ধ ফুচকার বিক্রি । লকডাউন শুরু হতেই মাথায় হাত ফুচকা বিক্রেতাদের । কয়েকপুরুষ ধরে চলা তাঁদের এই ফুচকার ব্যবসা আজ সংকটের মুখে । ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ফুচকা বিক্রেতারা ।

সংক্রমণের ভয়ে দেখা নেই খদ্দেরের

রেশনের মাধ্যমে চাল, ডাল, আটা মিলছে ঠিকই । কিন্তু তাতে কি আর সংসার চলে । মাস তিনেক ব্যবসা বন্ধ থাকার পর আংশিক শিথিল হয় লকডাউন । একটু আশার আলো দেখেছিল ওরা তখন । ফুচকার গাড়ি নিয়ে আগে যে যেখানে বসতেন, তেমনই গিয়ে বসতে শুরু করেছিলেন । কিন্তু সংক্রমণের ভয়ে ফুচকা খেতে আসতে সাহস করেননি কেউই । ছিল পুলিশি কড়াকড়িও । পসরা সাজিয়ে বসলেও কোনও লাভের মুখ দেখতে পাননি তাঁরা । অধিকাংশ ফুচকা বিক্রেতার ঘরে পড়ে রয়েছে দেড় দু'হাজার ফুচকা ।

Coochbehar news
ঠেলাগুলিতে আগে থাকত ফুচকা ভরতি

কোচবিহারের দেবীবাড়ি লিচুতলার ফুচকাবিক্রেতারা এখন মুখিয়ে আছে, ফের কবে স্বাভাবিক হবে পরিস্থিতি । ফের কবে আসবে বিয়ে বাড়ির অর্ডার । রাস্তার ধারে পড়ে রয়েছে ঠেলাগাড়িগুলি । এই ঠেলাগুলিতে করেই ফুচকার বাক্স নিয়ে যান ওঁরা । আজ সেই ঠেলাগাড়িটা তো আছে, কিন্তু ফুচকা ভরতি বাক্সটা আর নেই ঘরে ।

এলাকারই এক প্রবীণ ফুচকা বিক্রেতা রামদেব মাহাতকে প্রশ্ন করায় তিনি বলেন, "ফুচকা বিক্রি বন্ধ । নুন-ভাত খেয়েই আছি এখন ।"

Coochbehar news
চিন্তায় কোচবিহারের ফুচকা বিক্রেতারা

অন্য এক ফুচকা বিক্রেতা বীরেন্দ্র দাস বলেন, "লকডাউনে ব্যবসা বন্ধ । রেশনে যা দিচ্ছে তা দিয়ে চলছে না ।" মাঝে লকডাউন শিথিল হলে ছিল না ফুচকাপ্রেমীদের ভিড় । শিবকুমার সাওয়ের কথায়, "মাঝখানে লকডাউন উঠলে ফুচকার গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলাম । কিন্তু বিক্রি সেভাবে হয়নি । বাড়িতেই পড়ে রয়েছে ওগুলো ।" আর কতদিন এভাবে থাকতে হবে সেই চিন্তাই এখন কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে ফুচকা বিক্রেতাদের ।

এই নিয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল কোচবিহার পৌরসভার প্রশাসক ভূষন সিংয়ের সঙ্গেও । তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, "ওনাদের যদি কোনও সাহায্য দরকার হয়, অবশ্যই করা হবে । "

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.