ETV Bharat / state

দুই রাজার সন্ধির নিদর্শন বাঁকুড়ার এক্তেশ্বর ধাম

author img

By

Published : Apr 25, 2021, 10:45 PM IST

Updated : Apr 27, 2021, 1:25 PM IST

দুই রাজার সন্ধির নিদর্শন বাঁকুড়ার এক্তেশ্বর ধাম
দুই রাজার সন্ধির নিদর্শন বাঁকুড়ার এক্তেশ্বর ধাম

দ্বারকেশ্বর নদের তীরে ভগবান শিবকে সাক্ষী রেখে নির্দেশিত হয় বিষ্ণুপুর ও কাশীপুরের রাজার রাজ্যের সীমানা । দুই ভূমের একতা রক্ষার সাক্ষী ছিলেন মহাদেব । সেই থেকে জায়গার নাম পড়ে 'এক্তেশ্বর'।

বাঁকুড়া, 25 এপ্রিল : আমাদের ইতিহাসের বইতে সবাই ছোট বেলায় পড়েছি বিভিন্ন সন্ধির কথা । রাজায় রাজায় যুদ্ধ । যুদ্ধে হেরে গিয়ে বা যুদ্ধ হওয়া আটকাতে বিভিন্ন উপঢৌকন, সোনাদানা ইত্যাদির বিনিময়ে ছিল সন্ধি স্থাপনের রীতি । আরেকটু বড় হয়ে জেনেছি, ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আর সিরাজের মধ্যে আলিনগরের সন্ধি, ইংরেজ-মারাঠার সলবাইের সন্ধি, পেশোয়া আর ইংরেজদের বেসিনের সন্ধি আরও কত কি ! আচ্ছা যদি বলি ইংরেজ সিরাজ এসবের বহু আগে বাঁকুড়ার বুকে হয়েছিল এক ঐতিহাসিক সন্ধি, কি চমকে যাওয়ার মতো ব্যাপার তো? হ্যাঁ, বাঁকুড়া শহরের দ্বারকেশ্বর নদ সাক্ষী আছে এক অনন্য সন্ধির । সেই গল্প ৷ উঁহু গল্প না, গল্প হলেও সত্যিটা তুলে ধরার চেষ্টা করব আমরা । ইতিহাসের চালিকা শক্তিই হল লোকশ্রুতি, এককথায় ইতিহাস গাড়ি হলেও লোকশ্রুত তার চাকা । ফলে এই ঘটনাটি অনেকটা লোকশ্রুতি নির্ভর ।

রাজ্যের পশ্চিম সীমানা (বর্তমানে বাঁকুড়া মেদিনীপুর রোড) বরাবর চলেছে সিন্দুক বোঝাই সারি সারি গরুর গাড়ি । রাজার আদেশ লুন্ঠিত হল সেসব সিন্দুক । কিন্তু এ কী? সিন্দুক খুলেই অবাক হলেন মল্লরাজ । এতে তো সারি সারি পুঁথি ! কোথায় সাত রাজার ধন? ভ্রম ভাঙালেন চৈতন্য দেবের প্রিয় পাত্র শ্রীনিবাস আচার্য্। চৈতন্য দেব আর ফিরবেন না নবদ্বীপ ধামে, মনস্থির করেছেন পুরীতে রয়ে যাবেন তিনি । তাই তাঁর আগ্রহে সমগ্র পুঁথি চলেছিল পুরীতে । কিন্তু মাঝপথে তা লুন্ঠন করেছেন মল্লরাজ । এই পুঁথিতে কী এমন সাত রাজার ধন আছে বুঝে উঠলেন না মল্লরাজ । এরপরই পুঁথি পড়ে শোনালেন শ্রীনিবাস আচার্য্ । সারা সভাগৃহ মাতোয়ারা হলো কৃষ্ণ প্রেমে । ধন্য ধন্য করে উঠলেন মল্লরাজ । বুঝলেন এই পুঁথিতে কী অমূল্য ধন আছে । শাক্ত মল্লরাজ নিলেন বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষা, বিষ্ণুপুরে প্রতিষ্ঠা হল রাসমঞ্চ । এই সূত্র ধরেই মল্লরাজ বীর হাম্বিরের সুযোগ্য পুত্র মল্লরাজ রঘুনাথ মল্লের রাজত্বে মল্লভূমে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য নিয়ে আসেন বড়ু চন্ডীদাস । এই সময় হঠাৎ করেই সামন্তভূম (ছাতনা) ত্যাগ করে মল্লরাজ রঘনুাথ মল্লের আশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতা গ্রহণ করেন বড়ুচন্ডীদাস ।

দুই রাজার সন্ধির নিদর্শন বাঁকুড়ার এক্তেশ্বর ধাম

এবার বুঝলেন কি অঘটনটাই না ঘটেছে । সামন্তভূম (ছাতনা) রাজ্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবী মা বাসুলী / বাসুলীর প্রধান পুরোহিত কিনা শেষে অন্য রাজ্যে আশ্রয় নিয়েছেন ! ক্ষোভে ফুঁসতে থাকে গোটা সামন্তভূম । এই ক্ষোভ ছাড়িয়ে যায় বৃহৎ মল্লভূমের সীমানা । যার ফলস্বরূপ দুই রাজ্যের সীমা নিয়ে বিরোধ বাধে, সৃষ্টি হয় এক ভয়ংকর অবস্থা । এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে উদ্যোগী হয় দুই রাজপরিবারই । দারিকেশী নদী বা বর্তমানের দ্বারকেশ্বর নদের তীরে ভগবান শিবকে সাক্ষী রেখে নির্দেশিত হয় দুই ভূমের সীমানা । দুই ভূমের একতা রক্ষার সাক্ষী ছিলেন ঈশ্বর । সেই থেকে জায়গার নাম পড়ে 'এক্তেশ্বর'। সামন্তভূমের সাথে মল্লভূমের সীমানা সংহাত এই বিরোধের নিস্পত্তি ঘটে এই 'এক্তেশ্বর' সন্ধির মধ্য দিয়ে । তবে জনশ্রুতি রয়েছে, রাজ্য সীমানা নিয়ে এই বিবাদের মীমাংসা করতে ধ্যানে বসেন স্বয়ং শিব । দুই সীমানার সংযোগ স্থলে একতার প্রতীক হিসেব মল্লরাজা রঘুনাথ মল্ল গড়ে তোলেন এই এক্তেশ্বর শিব মন্দির এবং প্রবর্তন করেন এক্তেশ্বরের গাজনের ।

আরও পড়ুন : বাঁকুড়ার খোয়াই আজও পর্যটকের অপেক্ষায়

তবে আচার্য্য যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধির মতে, ‘‘বেদে এক পদেশ্বরের উল্লেখ আছে যে নামটি অপভ্রংশ এক্তেশ্বরে এসে দাঁড়িয়েছে । এক্তেশ্বর মন্দিরে শিব একপদ মূর্তি নামে পূজিত হন । এই ধরনের শিবের মূর্তি অন্য কোথাও দেখা যায় না বলে এটি অত্যন্ত বিরল ।'’

Last Updated :Apr 27, 2021, 1:25 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.