আলিপুরদুয়ার, 9 অগাস্ট : তখন 2016 ৷ ওড়িশার কালাহান্ডির দানা মাঝি তাঁর স্ত্রীর মৃতদেহ নিজের কাঁধে চাপিয়ে সৎকারের জন্য প্রায় 10 কিলোমিটার পথ হেঁটে গোটা দেশে সারা ফেলে দিয়েছিলেন । বক্সা পাহাড়ে দানা মাঝির মতো ঘটনা রোজনামচায় পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ ।
বক্সা ৷ আলিপুরদুয়ারের দু্র্গম পাহাড়ি এলাকা ৷
ব্রিটিশ রাজত্বে এখানে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কারাবন্দী করে রাখা হত । ঐতিহাসিক বক্সা ফোর্ট ভারতের স্বাধীনতার স্মৃতি বহন করে চলছে । দেশের 72 তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে দাঁড়িয়ে বক্সা পাহাড়ের মানুষের বক্তব্য, ব্রিটিশ আমলে এখানে ছিল স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিক্ষার পরিষেবা ,উপার্জনের নানা পথ । তবে স্বাধীনতার পরই সব পরিষেবা উধাও হয়ে গিয়েছে, অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের ৷ এলাকার মানুষদের বক্তব্য, স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও তাঁরা দরবার করেছেন । তবে কোনও লাভ হয়নি ।
স্বাধীনতার পর থেকেই দুর্গম বক্সা পাহাড়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্র উঠে গেছে বললে ভুল হবে না, বলছেন স্থানীয়রা । 3000 আদিবাসী জনজাতির বসবাস দুর্গম বক্সা পাহাড়ে ৷ অভিযোগ, স্বাস্থ্য পরিষেবা বিন্দুমাত্র নেই এলাকায় । এই বক্সা পাহাড়ে রয়েছে 11টি দুর্গম জনবসতি । মোট জনসংখ্যা প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার ৷
বক্সা পাহাড়ের কোলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তাসিগাঁও ,অসলুম ,দাঁড়াগাঁও, চুনাভাটি, লেপচাখা, সদরবাজার, লাল বাংলো ,বক্সাফোর্টের মত গ্রাম । এখানে মিলেমিশে রয়েছে ডুকপা ,লেপচা, মেচ, রাভা, সাঁওতালসহ একাধিক আদিবাসী জনজাতি । বক্সা পাহাড়ের পাদদেশ সান্তলা বাড়ি থেকে বক্সা পাহাড়ের কোলে গড়ে ওঠা গ্রামগুলির দূরত্ব কোথাও বা পাঁচ কিলোমিটার কোথাও আবার 10 কিলোমিটার । দুর্গম এই চড়াই-উতরাই পেরিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে যাতায়াত করেন তাঁরা ।
অভিযোগ, পাহাড়ের এই গ্রামগুলোর কোথাও বিন্দুমাত্র স্বাস্থ্য পরিষেবা না থাকার ফলে বিপাকে পড়ছেন পাহাড়ের জনজাতিরা । অন্তঃসত্ত্বা থেকে শুরু করে শিশু, বৃদ্ধ মানুষজন কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে দুর্গম পথ বয়ে নিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই ৷ দীর্ঘ পথ পেরিয়ে পৌঁছতে হয় সান্তলা বাড়ি । সেখান থেকে 40 কিলোমিটার দূরে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে আসতে হয় স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য । অনেক ক্ষেত্রেই অন্তঃসত্ত্বা দুর্গম পথের ধকল সহ্য করতে না পেরে পথেই প্রসব করেন । কখনও সকলের চোখের সামনেই কার্যত বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েন । অভিযোগ, স্বাধীনতার পর থেকে এভাবেই চলছে স্বাধীন ভারতের বক্সা পাহাড়ের মানুষদের স্বাস্থ্য পরিষেবা ।