ETV Bharat / international

নেপালে সময় আবার ওলির পক্ষে ?

author img

By

Published : Mar 11, 2021, 4:00 PM IST

সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল ওলির কি খারাপ সময় শেষ হয়ে গেল ? তার সরকার, যা তাঁর নিজেদের কমরেডদের থেকে অনাস্থা ভোটের মুখে পড়তে চলেছিল, তা কি সুরক্ষিত আছে ? তবে একটা বিষয় নিশ্চিত যে সাম্প্রতিক সময়গুলির তুলনায় ওলি এখন অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী এবং অনেক বেশি ক্ষমতাবান ।

KP Oli
KP Oli

কাঠমান্ডু : সময় মনে হয় নেপালের চাপে থাকা প্রধানমন্ত্রী কেপি ওলির পক্ষে যেতে শুরু করেছে । রবিবার সুপ্রিম কোর্ট এনসিপি (নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি) এর ঐকবদ্ধ অবস্থাকে খারিজ করে দিয়েছে । এর ফলে ওলির সমস্যা কিছুটা হলেও কমেছে । এনসিপি এর এই একতা তৈরি হয়েছিল 2018 সালের নির্বাচনের আগে । তখন ওলির নেতৃত্বাধীন সিপিএন ও প্রচণ্ডর নেতৃত্বাধীন মাওইস্ট-সেন্টার এক হয়েছিল । তাঁকে আরও খুশি দেখাচ্ছে । কারণ ? তিনি মনে করেন যে তিনি ইউএমএল এর ‘বৈধ অংশ’কে নেতৃত্ব দিচ্ছেন । আর মাধব নেপাল ইউএমএল এর বিক্ষুব্ধ অংশের নেতৃত্বে ফিরে গিয়েছেন ।

নেপালের ক্ষমতাসীন দল বিধ্বস্ত ও ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে । ওলি বিরোধী নতুন জোট ভেঙে প্রচণ্ড তাঁর পুরানো দল – মাওইস্ট সেন্টারে ফিরে গিয়েছেন । মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট ইউএমএল এবং মাওইস্ট সেন্টারের পুনরুত্থান ঘটানোর পর মাধব নেপাল তাঁর পুরনো বন্ধু প্রচণ্ডকে বিদায় জানিয়েছেন । 2017 সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে এনসিপি-কে এক ছাতার তলায় আনার পরিকল্পনা করেছিলেন ওলি ।

আর সেটা আশ্চর্যজনক ভাবে ভালো কাজ করেছিল । কারণ, দল সবচেয়ে বৃহৎ ও সবচেয়ে শক্তিশালী হয়েছিল । একদিকে যেমন উদ্বিগ্ন ভারত তাকিয়েছিল, তেমনই অন্যদিকে তাকিয়েছিল চিন । কারণ, হিমালয়ের দক্ষিণে অবশেষে ঐক্যবদ্ধ কমিউনিস্ট পার্টি তৈরি হয়েছিল ।

তিন মাসে আগে ওলি হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ভেঙে দেন । তার পরই নতুন এই ওলি বিরোধী সিপিএন সমীকরণ তৈরি হয় । ওলির এই পদক্ষেপ হঠাৎ এবং অপ্রত্যাশিত ভাবে হয়েছিল । এর ফলে প্রচণ্ড ও নেপাল সহ তাঁর দলের অনেক কমরেডই রেগে যান । ফেব্রুয়ারির 23 তারিখ সুপ্রিম কোর্ট সংসদ বহাল রাখার রায় দেন । নতুন নজির তৈরি করে ওলির মতো কেউ যদি সংসদ ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করেন, সেই জন্য ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রীদের উদ্দেশ্যে সতর্কবার্তা দেয় । তার পরই সমস্যা ঠিক হতে শুরু করে ।

এই সপ্তাহে পরিস্থিতি আবার বদল হতে শুরু করে । সুপ্রিম কোর্ট রবিবার তার নির্দেশে এনসিপি এর ঐক্যবদ্ধতা খারিজ করে দেওয়ার পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি 2017 সালের নির্বাচনের দিনগুলিতে ফিরে গিয়েছে, যখন ইউএমল ও মাওইস্ট সেন্টার আলাদা দু’টি রাজনৈতিক শক্তি ছিল । আদালতের রায়ের মানে হল ওলি, নেপাল, প্রচণ্ড এবং অন্যরা সহ সকলের উচিত সাম্প্রতিক সমস্যা অবশ্যই ভুলে যাওয়া এবং তাঁদের মধ্যে তৈরি হওয়া সমস্যা মিটিয়ে ফেলা । আদালতের রায়ের আরও একটা মানে হল সংসদীয় আসন বাঁচানোর জন্য বামপন্থীরা তাঁদের পুরনো দলেই স্থির থাকবেন এবং ওলির বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে ।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের ফলে এনসিপি ইতিহাসের পাতায় চলে গিয়েছে । সংসদের নিম্নকক্ষ হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভে ইউএমএল এখন সবচেয়ে বড় দল । তাদের আসন সংখ্যা 121 । দ্বিতীয় বৃহৎ দল হল নেপালি কংগ্রেস । তাদের আসন সংখ্যা 63 । 53 টি আসন নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে মাওইস্ট সেন্টার । বাবুরাম ভট্টরাইয়ের নেতৃত্বাধীন জনতা সমাজবাদী পার্টি (জেএসপি) রয়েছে চতুর্থ স্থানে । তাদের আসন সংখ্যা 34 । এছাড়া তিনটি ছোট দল ও একজন নির্দলের কাছে একটি করে আসন রয়েছে । নেপালের হাউজ অফ রিপ্রেজ়েন্টেটিভে মোট আসন সংখ্যা 275 ।

অনাস্থা ভোট যখন এগিয়ে আসছে, তখন ওলি, নেপাল ও প্রচণ্ড তাঁদের দলের ভিতরের শক্তি বৃদ্ধি করতে ব্যস্ত এবং তারা জুতসই শরিকেরও খোঁজ করছে । নেপালের রাজনীতিতে সব কিছুই খুব দ্রুতগতি হচ্ছে । কিন্তু শেষ পর্যন্ত কে জিতবে, তা বলা খুব কঠিন ।

আরও পড়ুন : ফের সবার নজর নেপালের দিকে

আর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল ওলির কি খারাপ সময় শেষ হয়ে গেল ? তার সরকার, যা তাঁর নিজেদের কমরেডদের থেকে অনাস্থা ভোটের মুখে পড়তে চলেছিল, তা কি সুরক্ষিত আছে ? তবে একটা বিষয় নিশ্চিত যে সাম্প্রতিক সময়গুলির তুলনায় ওলি এখন অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী এবং অনেক বেশি ক্ষমতাবান । কারণ, কয়েক সপ্তাহ আগে প্রচণ্ড ও মাধব নেপাল-সহ ওলির প্রাক্তন কমরেডরা তাঁর পদত্যাগের দাবি তুলেছিলেন । এই নিয়ে চলা বিক্ষোভ ওলির প্রশাসন সামলাতেও পারছিল না ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.