ETV Bharat / international

কোভিড–19 :  গবেষণায় সাফল্য এলেও প্রতিষেধক এখনই নয়

author img

By

Published : May 7, 2020, 12:31 AM IST

Updated : May 7, 2020, 4:52 PM IST

ইজরায়েলে যে 16,000 মানুষ কোরোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তার মধ্যে 10,000–এরও বেশি মানুষ সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছেন । এখনও পর্যন্ত সক্রিয়ভাবে আক্রান্ত অন্তত 5000 জনের মধ্যে 70 শতাংশই রয়েছে ICU–তে । আর মৃত্যুর সংখ্যাও তুলনামূলকভাবে খুবই কম ।

কোভিড–19
কোভিড–19

কোরোনা ভাইরাস মোকাবিলায় অ্যান্টিবডি তৈরির পরীক্ষা ‘নির্ণায়ক স্তরে’ রয়েছে ইজ়রায়েল । যেখানে ‘তাৎপর্যপূর্ণ সাফল্য’ও মিলেছে বলে দেশের রাষ্ট্রদূতের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে । যদিও তিনি একথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, এই মুহূর্তে গবেষণা ঠিক কোন স্তরে রয়েছে তা নির্দিষ্ট করে বলা এবং পরবর্তীকালে এটি কোভিড-19-এর মোকাবিলায় ব্যবহার করা যাবে কি না, তা বলা মুশকিল ।

রাষ্ট্রদূত ড. রন মালকা বলেছেন, "সরকারি স্তরে আমরা যোগাযোগ রাখছি এবং দু’পক্ষ থেকেই (ভারত এবং ইজরায়েল)বিজ্ঞানী এবং পেশাদার কর্মীদের এ কাজে নিয়োজিত করছি । যৌথভাবে কোনও উদ্যোগ নিতে পারেন বা প্রতিষেধক বা অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারেন কিনা তা দেখছি । নির্দিষ্ট অ্যান্টিবডি এমন কিছু হতে পারে যা পরবর্তীকালে প্রতিষেধক হিসাবে কাজে লাগানো যেতে পারে । বর্তমানে এটি কোনও প্রতিষেধক নয় বরং এক ধরনের ওষুধ যার ব্যবহারে ভাইরাসের মৃত্যু হবে ।"

রাষ্ট্রদূত জোর দিয়ে বলেছেন, এই প্যানডেমিকের মোকাবিলা খুঁজতে ভারত এবং ইজরায়েল অন্তত 50টি পরামর্শকৃত বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে একজোট হচ্ছে । তালিকায় রয়েছে একযোগে কম দামি ইনকিউবেটর থেকে শুরু করে অন্যান্য সরঞ্জাম ও যন্ত্র তৈরি করার বিষয়টিও । AI থেকে শুরু করে তথ্য বিশ্লেষণ নিয়ে ভারতের সঙ্গে উত্তম অনুশীলন বজায় রাখতে এবং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং স্বাস্থ্যক্ষেত্রের বিশারদদের সঙ্গে একজোট হতে ইজরায়েল একটি পয়েন্ট অফ কনট্র্যাক্ট মনোনীত করেছে । তিনি জানিয়েছেন, "এই সংকট ভারত-ইজরায়েলকে আরও কাছাকাছি এনেছে । দুই দেশের যৌথ আস্থা এবং সম্মানের সম্পর্কের কথা মাথায় রেখে ভারতকে আমরা খুব মূল্যবান এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসাবেই দেখি ।"

এর আগে সোমবার, ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নাফতালি বেনেট এক বিবৃতিতে বলেছিলেন,"ইজরায়েল ইনস্টিটিউট ফর বায়োলজিক্যাল রিসার্চে তৈরি করা মনোক্লোনাল নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি কোরোনা ভাইরাস ক্যারিয়ারের শরীরে থাকা ভাইরাসকে অসাড় করে দিতে পারে । IIBR–এর অধিকর্তার বয়ান অনুযায়ী, ইতিমধ্যেই অ্যান্টিবডি ফরমুলাটির পেটেন্ট করা হয়েছে এবং পরে বিশ্বব্যাপী কোনও ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে । যাতে অধিক সংখ্যায় এর উৎপাদন শুরু করা যায় । নেদারল্যান্ডসের তরফেও অনুরূপ দাবি তোলা হয়েছে ।"

AJC–এর (আমেরিকান–ইহুদি কমিটি) সঙ্গে কথোপকথনের অংশ হিসাবে নির্বাচিত কিছু সাংবাদিকদের ড. মালকা বলেছিলেন, এই অ্যান্টিবডি অধিক সংখ্যায় উৎপাদন করা আদৌ সম্ভব কি না বা হলেও কখন তা সম্ভব, তা স্পষ্ট নয় । তাঁর মন্তব্য অনুযায়ী, "আমি জানি না এখন ঠিক কোন স্তরে গবেষণা চলছে । তবে এটুকু বলতে পারি, প্রাথমিক স্তরেই চলছে । আশা করি, সব প্রক্রিয়া যথাযথভাবে সম্পন্ন হলে এমন কিছু তৈরি করা যাবে, যা সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়া যাবে । এখনও পর্যন্ত এটা সম্পর্কে আমি এটুকুই জানি । আমরা নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়ে পরীক্ষা করছি, নানাভাবে চেষ্টা করছি যাতে হয় একটা ওষুধ নয়তো একটা প্রতিষেধক বা অ্যান্টিবডি বা অ্যান্টিডোট তৈরি করা যায় । এটাই আমাদের গবেষণার মূল অংশ । ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা ভাইরাসকে ঠেকিয়ে রাখতে আর যা যা করা যায়, সব করব ।"

ইজরায়েলে যে 16,000 মানুষ কোরোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তার মধ্যে 10,000–এরও বেশি মানুষ সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছেন । এখনও পর্যন্ত সক্রিয়ভাবে আক্রান্ত অন্তত 5000 জনের মধ্যে 70 শতাংশই রয়েছে ICU–তে । আর মৃত্যুর সংখ্যাও তুলনামূলকভাবে খুবই কম । মৃত্যুর সংখ্যা 230 বলে দূতাবাসের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে । সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর বিশ্বের মধ্যে প্রথম যে দেশগুলিতে আন্তর্জাতিক উড়ান বন্ধ করা হয়েছিল এবং প্রথমে লকডাউন জারি করে পরে তা শিথিল করা হয়, ইজরায়েল তাদের মধ্যে অন্যতম । তিনি আরও বলেছেন, একদিকে যেখানে দেশের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়োজন রয়েছে, তেমনই পরিস্থিতি কতটা নিয়ন্ত্রণে আছে, তা বুঝে পরীক্ষামূলকভাবে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা উচিত । ভারত এবং ইজরায়েল লকডাউন তোলার কৌশল নিয়েও একে অন্যের সঙ্গে পরামর্শ আদানপ্রদান করছে ।

স্টার্টআপ এবং নানা ধরনের উদ্ভাবনের জন্য পরিচিত ইজরায়েল ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে প্রযুক্তিকে গভীরভাবে ব্যবহার করেছে । বিশেষ করে কাজ হয়েছে 3D প্রিন্টিং ড্রাইভ যেখানে টেস্টিং সেন্টার, অ্যান্টি ভাইরাস ক্লথ ফ্যাব্রিকে প্রয়োগ করা যায় । আর এর পাশাপাশি ওপেন সোর্স ভেন্টিলেটরের ব্যবহারের সুবিধাও যাতে সকলে পায়, তা নিশ্চিত করতেও উদ্যোগী হয়েছিল তারা ।

কোভিড–19 এ আক্রান্তদের খোঁজ পেতে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন এবং প্রযুক্তি প্রয়োগের উপর গুরুত্ব আরোপ করে রাষ্ট্রদূত জানিয়েছিলেন, "সবার প্রথমে আমাদের এই গুরুত্বের মর্যাদা রক্ষা করতে হবে যে কারও গোপনীয়তার অধিকার যেন লঙ্ঘিত না হয় । কারণ ইজরায়েল একটি গণতন্ত্রের প্রাণবন্ততায় বিশ্বাসী এবং এখানে প্রত্যেকের ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং গোপনীয়তার অধিকার রক্ষাকে যথোচিত গুরুত্ব দেওয়া হয় । কিন্তু অপর দিকে এটাও দেখা যাচ্ছে যে প্রযুক্তির প্রয়োগ সংক্রমণ নিবারণ করে মানুষের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করছে । তাই ঠিক কোথায় সমতা বজায় রাখতে হবে, সে দিকে সতর্ক হওয়া জরুরি ।"

ভারত সরকারের আরোগ্য সেতু অ্যাপ নিয়ে বর্তমানে চারদিকে যে সমালোচনা চলছে, তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তাঁর উত্তর, প্রযুক্তিকে যথাযোগ্যভাবে ব্যবহার করতে হলে আস্থার মর্যাদা রাখা হল সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ । ড. মালকা বলেছেন, "ইজরায়েলে এই পরিষেবা এত ভাল কাজ করার কারণ হল আস্থা । তোমাকে বিশ্বাস করতে হবে এবং বুঝতে হবে কেন মানুষ এটা ব্যবহার করছেন । অন্য সময় হলে কেউ কখনও এই ধরনের ট্রেসিং করতে সাহস করত না । কিন্তু আমরা এটা বুঝেছি যে এই প্রযুক্তি মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে । গণতন্ত্রের নীতি মেনে, একাধিক কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে, সীমিত সময়ের মধ্যেই এটা আমাদের করতে হবে । আমরা যদি একে অপরকে বিশ্বাস করি, সেখানে যদি ঐক্য আর বোঝাপড়া থাকে, তাহলে এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে ।"

ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক থেকে রিপোর্ট আসছে যে, সেখানে মানুষজন নিকাশির অব্যবস্থা এবং পরিষ্কার জলের অভাবের সমস্যায় ভুগছেন । এই প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রদূতের দাবি, ইজরায়েল প্যালেস্তিনীয় কর্তৃপক্ষকে এ নিয়ে সহযোগিতা করার প্রস্তাব দিয়েছে এবং ভাইরাস মোকাবিলায় সবর্শ্রেষ্ঠ পরিষেবা বিনিময়ও করেছে । এই সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, "এখন বন্ধু এবং প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে একজোট হয়ে কাজ করা আগের থেকেও বেশি দরকারি । কারণ এই ভাইরাস সকলেরই শত্রু । কিছু কিছু সংক্রমণ এখনও হচ্ছে । কিন্তু পরিস্থিতি এখনও হাতের বাইরে চলে যায়নি । আমরা যতটা সম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা করছি । যদি আমাদের পড়শি দেশ কোনও সমস্যায় ভোগে, তাহলে তারা এসে আমাদের দরজায় কড়া নাড়তেই পারে ।"

আর চিনই যে এই ভাইরাসের আঁতুড়ঘর, এই দাবি তুলে চিনকে একঘরে করার যে বিশ্বব্যাপী প্রয়াস চলছে, তা নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে রাষ্ট্রদূতের জবাব, বর্তমানে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত ভাইরাস মোকাবিলাকেই । ড. মালকা বলেছেন, "কোথা থেকে এই ভাইরাসের উৎপত্তি আর কেন, সেই নিয়ে তদন্ত আমরা পরেও করতে পারি । এসবে বর্তমানে ইজরায়েল একেবারেই উৎসাহী নয় । আমাদের সমস্ত উদ্যম এবং গুরুত্ব বর্তমানে প্রতিষেধক তৈরি করার দিকেই রয়েছে ।"

Last Updated : May 7, 2020, 4:52 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.