Afghanistan : আফগানিস্তান নিয়ে চরমপন্থী সংগঠনগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হতে পারে, মত বিশেষজ্ঞের

author img

By

Published : Sep 7, 2021, 3:41 PM IST

আফগানিস্তান নিয়ে চরমপন্থী সংগঠনগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হতে পারে, মত বিশেষজ্ঞের
আফগানিস্তান নিয়ে চরমপন্থী সংগঠনগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হতে পারে, মত বিশেষজ্ঞের ()

আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিতে চরমপন্থী সংগঠনগুলি একে অপরের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে পারে ৷ এই পরিস্থিতিতে তালিবান এবং ইসলামিক স্টেটের কোরাসান প্রদেশের শাখা বা এই ধরনের চরমপন্থী সংগঠনগুলির মধ্যে লড়াই বাঁধতে পারে বলে মত ভারতের প্রাক্তন আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূত গৌতম মুখোপাধ্যায় ৷ তাঁর সঙ্গে কথা বললেন ইটিভি ভারতের সিনিয়র করেসপনডেন্ট চন্দ্রকলা চৌধুরী ৷

নয়াদিল্লি, 7 সেপ্টেম্বর : তালিবান ইতিমধ্যেই আফগানিস্তানে তাদের একমাত্র অজেয় প্রদেশ পঞ্জশির দখল নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ৷ পঞ্জশির প্রদেশ নিয়ে তালিবান এবং প্রতিরোধ বাহিনীর মধ্যে চলা সংঘর্ষের মধ্যে ফের অন্যান্য চরমপন্থী সংগঠনগুলি তাদের ক্ষমতা প্রর্দশনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের ৷ কাবুলের উত্তরের এই প্রদেশটি নিয়ে তালিবান শেষ অবধি আক্রমণ চালিয়ে যাবে বলে ধারণা তাঁদের ৷ তাই এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে তাঁরা মনে করছেন ৷

তালিবান এবং প্রতিরোধ বাহিনীর মধ্যে চলতে থাকা এই লড়াইয়ের কারণে আফগানিস্তানে নতুন সরকার গঠনে বিলম্ব কাবুলে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে ৷ এখন প্রশ্ন উঠছে, আফগানিস্তান এরপর কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে ? বহির্বিশ্ব কি আনুষ্ঠানিকভাবে তালিবানী সরকারকে মেনে নেবে ? আফগানিস্তানে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত গৌতম মুখোপাধ্যায় ইটিভি ভারতকে জানান, পঞ্জশিরে প্রতিরোধ বাহিনী লড়াই চালিয়ে যাবে । বলেন, "পঞ্জশিরে যে প্রতিরোধ তৈরি করা হয়েছে তা শুধু পঞ্জশিরেরই নয়, তার চেয়ে অনেক বেশি প্রতিনিধিত্ব করছে । এটি একটি জাতীয় প্রতিরোধের প্রতিনিধিত্ব করছে । তা পঞ্জশিরে হোক বা ওই প্রদেশের বাইরে, প্রতিরোধ অব্যাহত থাকবে । এটা আরও বড় রূপ নিতে পারে । শুধু তাই নয়, আগামীতে আফগানিস্তান ভাগও হতে পারে ৷"

প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত জোরের সঙ্গে দাবি করেন, "এতে কোনও সন্দেহ নেই যে পাকিস্তান তালিবানকে পঞ্জশিরে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সাহায্য করছে ৷ কারণ নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যাচ্ছে যে, পাকিস্তান ড্রোন, হেলিকপ্টার, কমান্ডো ইউনিটের পাশাপাশি স্যাটেলাইট চিত্র এবং অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে তালিবানকে সাহায্য করছে ৷ পাকিস্তান শুধু পঞ্জশির নয়, গোটা আফগানিস্তানেই আক্রমণ ও দখলের পিছনে রয়েছে ।"

সোমবার একটি অডিও বার্তায় জাতীয় বাহিনীর কমান্ডার আহমদ মাসুদ বলেছেন, আফগানিস্তানের মানুষকে জাতীয় অভ্যুত্থানে ডাক দিয়েছেন ৷ দেশের বাইরে যাঁরা রয়েছেন তাঁদের উদ্দেশ্যেও তিনি একই বার্তা দিয়েছেন ৷ টুইটে মাসুদ লেখেন, "তালিবানকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং আইএসআই নেতৃত্ব দিচ্ছে । তালিবানরা আমাদের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো শক্তিশালী নয় ৷ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাদের সহযোগিতা করছে ।"

এই পরিস্থিতিতে তালিবান-পাকিস্তান-চিন যোগ ভারতের জন্য বিশেষ ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ এর প্রতিক্রিয়ায় গৌতম জানান, ভারতের জন্য এটা চিন্তার বিষয় শুধু পাকিস্তান-তালিবান-চিন যোগের কারণে নয় ৷ চিন্তার কারণ, তালিবানের সঙ্গে আল কায়দা (Al Qaeda), আইসিসের (ISIS) মতো আরও ডজন খানেক চরমপন্থী মৌলবাদী ও সন্ত্রাসী সংগঠন রয়েছে, যাদের মধ্যে কিছু মধ্য এশিয়ান বিরোধী, ইরান বিরোধী, ভারত বিরোধী, শিয়া বিরোধী, সংখ্যালঘু বিরোধী ৷ অতএব, প্রথম উদ্বেগ হল, বড় আকারের আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের প্রত্যাবর্তন । দ্বিতীয় উদ্বেগ হল, এখন পাকিস্তানের রাজনৈতিক প্রভাব এবং নিয়ন্ত্রণ চিনের কৌশল এবং সম্ভাব্য অর্থনৈতিক পেশীশক্তির দ্বারা প্রভাবিত হবে ৷ চিন সেখানে তার কৌশলগত প্রচার এবং অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য স্থিতিশীলতা চায় ৷ এক্ষেত্রে চিনকেও খুব সতর্ক থাকতে হবে কারণ যদি তারা যদি চরমপন্থী সংগঠনগুলোর মধ্যে গিয়ে দাঁড়াতে চায়, তাহলে তাঁদের অতীতে সোভিয়েত এবং সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতির কথা মাথায় রাখতে হবে ৷

এই পরিস্থিতিতে তালিবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের জন্য জম্মু ও কাশ্মীরের নিরাপত্তাজনিত সমস্যা দিয়েছে ৷ একই সঙ্গে 2001 সালে থেকে এখনও পর্যন্ত আফগানিস্তানে বাঁধ, রাস্তা, বিদ্যুৎ পরিষেবা, শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতের ব্যয় করা প্রায় 3 বিলিয়ন ডলারও ক্ষতির মুখে এসে দাঁড়িয়েছে ৷ এখন তালিবানের তরফে ভারতের দিকে যোগাযোগের একটি সূত্র তৈরি করা হয়েছে ৷ এনিয়ে কাতারে ভারতীয় দূত দীপক মিত্তলের সঙ্গে তালিবানের রাজনৈতিক প্রধান স্ট্যানেকজ়াইয়ের বৈঠকও হয়েছে ৷ সেই বৈঠকেই মিত্তল স্পষ্ট করেছেন যে, আফগানিস্তানকে ভারতী বিরোধী কাজে ব্যবহার করা যাবে না ৷ সেই দাবি তালিবানের পক্ষে সায়ও দেওয়া হয়েছে ৷ এখন দেখার তারা তাদের কথা রাখে কিনা ৷

রাজনৈতিক এই অস্থির সময়ে আফগানিস্তানে পরবর্তী কী হবে ? প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত বলেন, " পরিস্থিতি বেশ ভয়াবহ ৷ তবে তালিবান সরকার গঠন করলে কিছুটা স্থিতিশীলতা আসবে ৷"

পাশাপাশি তিনি জানান, প্রতিরোধ বাহিনী তাদের লড়াই চালিয়ে যাবে ৷ আফগানিস্তানে সরকারের পতন এত চটজলদি হয়েছে যে তা আফগানদের মধ্যে একটা শক তৈরি করেছে ৷ তারা যখনই বিষয়টি বুঝতে পেরেছে তখন থেকেই তা প্রতিরোধ করার চেষ্টা শুরু করেছে ৷ বিভিন্ন জায়গায় নতুন নেতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে ৷ আফগানিস্তানের বাইরেও তালিবান বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠনগুলি ফের সংঘবদ্ধ হতে পারে ৷ পাশাপাশি উজবেক, হাজারা, ছোট সংখ্যালঘু এবং তালিবানের মতো বৃহৎ সংখ্যালঘুদের মধ্যে জাতিগত বিভাজন তৈরি হতে পারে ৷

গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, "আফগানিস্তান আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস এবং বিশেষ করে আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদের একটি কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে । এটি চরমপন্থী সংগঠনগুলোর মধ্যে আস্ফালন প্রদর্শনের মঞ্চ হয়ে উঠতে পারে ৷ ঠিক যেমনটি আমরা তালিবান এবং আইসিসের ক্ষেত্রে দেখেছি । সেক্ষেত্রে আফগানিস্তানে ইরাক, সিরিয়া এবং লিবিয়ার পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে ৷ অতএব, তালিবান প্রথম কিছুদিনের মধ্যেই কী পদক্ষেপ করে তার উপর নির্ভর করবে আগামী পরিস্থিতি ৷"

আরও পড়ুন : Afghanistan: আলোচনায় রাজি মাসুদ, পঞ্জশিরের ভবিষ্যৎ নিয়ে বাড়ছে অনিশ্চয়তা

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.