ETV Bharat / durga-puja

মণ্ডপ ও প্রতিমা সংরক্ষণেও সংক্রমণের খাঁড়া

author img

By

Published : Oct 29, 2020, 7:02 PM IST

wb-kol-01-maximum-durga-idol-immersed-and-pandals-destroyed
কোরোনা অতিমারির প্রভাব দুর্গাপুজোর মণ্ডপ ও প্রতিমার দ্বিতীয় জীবনেও

কলকাতার বেশ কিছু মণ্ডপ কালীপুজো বা জগদ্ধাত্রী পুজোর জন্য অন‍্যত্র‍ যাচ্ছে ৷ সংরক্ষিত হচ্ছে কয়েকটি দুর্গা প্রতিমা। কিন্তু, কলকাতার অধিকাংশ বড় পুজোগুলির প‍্যান্ডেল খুলে নেওয়া হচ্ছে। নিরঞ্জন করে দেওয়া হচ্ছে মায়ের প্রতিমা।

কলকাতা, 29 অক্টোবর : অন্যান্য সবকিছুর মতই কোরোনার জেরে তৈরি পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন ভাবনায় গড়া দুর্গোৎসবের মণ্ডপ ও দুর্গা প্রতিমার দ্বিতীয় জীবনেও। প্রতি বছরই রাজ্যের, বিশেষত কলকাতার দুর্গোৎসবে থিমপুজোর মণ্ডপগুলি কালীপুজো বা জগদ্ধাত্রী পুজোর মণ্ডপ হিসেবে বিভিন্ন জেলায় যায়। অথবা দুর্গা প্রতিমা সংরক্ষণ করা হত সংগ্রহশালায়। এবছরও কলকাতার বেশ কিছু মণ্ডপ কালীপুজো বা জগদ্ধাত্রী পুজোর জন্য অন‍্যত্র‍ যাচ্ছে ৷ সংরক্ষিত হচ্ছে কয়েকটি দুর্গা মূর্তিও। কিন্তু, কলকাতার অধিকাংশ বড় পুজোগুলির প‍্যান্ডেল খুলে নেওয়া হচ্ছে। নিরঞ্জন করে দেওয়া হচ্ছে মায়ের প্রতিমা। কারণ, কালী পুজো বা জগদ্ধাত্রী পুজোগুলিতে তাঁদের মণ্ডপ ব‍্যবহারের জন্য কাউকে রাজি করাতে পারেননি শিল্পীরা।


বেহালার শখের বাজারের বড়িশা ক্লাবের পুজো এবছর শুধু দেশজোড়া নয়, বিশ্বজোড়া খ‍্যাতি পেয়েছে । এই ক্লাবের পুজোয় শিল্পী রিন্টু দাস কোরোনার জেরে তৈরি পরিস্থিতিতে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্বিষহ ও মর্মান্তিক অবস্থার কাহিনি মা দুর্গার মূর্তি ও তার কোলে থাকা ছেলে-মেয়েদের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। এই ক্লাব তাঁদের মণ্ডপ বা প্রতিমা এবার নষ্ট করছে না । কারণ, রাজ‍্য সরকারের তরফে 'পরিযায়ী মা' রূপী মূর্তিকে সংরক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবারের ভাবনা নিয়ে শিল্পী রিন্টু দাস বলেন, "যারা রাতের পর রাত, দিনের পর দিন হেঁটেছিলেন, খাবার বা জল পাননি, আমার মনে হয়েছিল এ বছর তাঁদেরই পুজো করব‌। মানুষের পুজো করব, যে মা রাতের পর রাত হেটেছে, একফোঁটা জল পাননি তাঁর পুজো করব। সেই আমার কাছে মা। অনেকে প্রশ্ন করেছিল, পরিযায়ী শ্রমিক এত সুন্দর কী করে হল ? আমি বললাম, গরিব মানে কি সুন্দর হতে পারে না ? মা মানেই সে বিশ্বের সবথেকে সুন্দর।" এই ভাবনাচিন্তা থেকেই কোলে বাচ্চা নিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে ত্রাণের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন বড়িশা ক্লাবের মা দুর্গা।

রাজ‍্য সরকারের পরিযায়ী মায়ের প্রতিমা সংরক্ষণ করার ভাবনা নিয়ে শিল্পী রিন্টু দাস বলেন, মুখ‍্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবার বড়িশার পুজোর উদ্বোধন করেছিলেন। উনি নিজে প্রথমে প্রতিমার ছবিটা তোলেন। তারপরে বেরোনোর সময় বলেন, এই কাজটা সরকার নেব এবং মিউজ়িয়ামে রাখবে। মুখ‍্যমন্ত্রী সপ্তমী, অষ্টমীতে যে শুভেচ্ছা বার্তা জানিয়েছিলেন তার পিছনে ছিল বড়িশার প্রতিমা ৷ এমনকী নবান্নতে একটা পরিকল্পনা চলছে, মায়ের মূর্তিটাকে কোনও দ্বীপে রাখা হবে এবং তার একটা নামকরণ করা হবে। কেননা কোরোনা একদিন না একদিন চলে যাবে। ফলে, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন কোরোনার মধ্যে পুজোটা কেমন হয়েছিল তা দেখতে পায় তার জন্য একটা দ্বীপে প্রতিমাকে রাখার পরিকল্পনা চলছে।

মণ্ডপ ও প্রতিমা সংরক্ষণেও সংক্রমণের খাঁড়া
ওড়িশায় ভারত সরকারের একটি মিউজ়িয়ামে সংরক্ষিত হচ্ছে হাতিবাগান সর্বজনীন দুর্গোৎসবের কাগজের তৈরি দুর্গা প্রতিমাও। হাতিবাগান সর্বজনীন দুর্গোৎসবের আহ্বায়ক শাশ্বত বোস বলেন, "এই বছর হাতিবাগান সর্বজনীনের যে মণ্ডপ তৈরি হয়েছিল সেই ভাবনার নাম দেওয়া হয়েছিল 'ইনকম্পলিট' অর্থাৎ, অসমাপ্ত। লকডাউনে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল সেটাই আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলাম। এখানে শিল্পীবন্ধুরা কাজ করছিলেন, হঠাৎ লকডাউন হয়ে যাওয়ায় যে যার বাড়িতে ফিরে যান। সেটাই আমরা আমাদের পুজোয় তুলে ধরেছিলাম। মই যেখানে ছিল সেখানেই রয়ে গেছিল, ভাড়া বাঁধা ছিল, জলের ব‍্যাগ, পেরেকের ব‍্যাগ পড়েছিল। সর্বোপরি মণ্ডপটা কাগজ দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। প্রতিমার পুরোটাই ছিল কাগজ দিয়ে তৈরি৷ ম্যাগাজিন কেটে কেটে কাগজের কোলাজ তৈরি করা হয়েছিল। হাতিবাগান সর্বজনীনের মণ্ডপ কালি পুজো বা জগদ্ধাত্রী পুজোর জন্য যাচ্ছে না এবার। বদলে প্রতিমা ওড়িশায় একটি ফোক আর্ট ট্রাইবাল মিউজিয়াম আছে চিলকাতে, সেখানে যাওয়ার কথা হয়েছে।"আবার কালীপুজোর জন্য রাজারহাটে যাচ্ছে জগৎ মুখার্জি পার্কের দুর্গোৎসবের মণ্ডপ। শিল্পী সুবল পাল এবছর জগৎ মুখার্জি পার্কের দুর্গোৎসবের মণ্ডপটিকে 60-র দশকের একটি আর্ট গ‍্যালারির রূপ দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, কালীপুজোয় এটা যাচ্ছে রাজারহাটের কালীপার্কের প্রগতি সংঘে। সামান্য কিছু পরিবর্তন করা হবে সামঞ্জস্য রেখে। ওখানে ভাবনার পরিবর্তন ঘটছে। যার পুরোটাই আর্ট রিলেটেড রাখছেন শিল্পী। সেভাবেই নামকরণ করবেন বলে ভেবেছেন শিল্পী ৷ শিল্পটাকে ফুটিয়ে তোলাটাই মূল উদ্দেশ্য। আর সেই ধাঁচেই প্রতিমাটাও তৈরি করা হবে। রিলিফ ওয়ার্ক অর্থাৎ বোর্ডের উপর প্রতিমা তৈরি করা হবে। যা দেখে একটা ছবি মনে হবে।মুদিয়ালি ক্লাবের দুর্গোৎসবের মণ্ডপ যাচ্ছে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকে কালীপুজোর জন্য। শিল্পী গৌরাঙ্গ কুইলার ভাবনাচিন্তায় এবছর মুদিয়ালি ক্লাবের দুর্গাপুজোর মণ্ডপে কোরোনার সময়ে বাংলার লোকশিল্পীদের কষ্ট ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল। মণ্ডপ সেজে উঠেছিল বাংলার 10 ধরনের লোকশিল্পের কারুকাজে। তমলুকে একটি কালীপুজোয় পুনরায় এই মণ্ডপ আবার তৈরি করা হবে। তবে, কয়েকটি মূর্তি সংরক্ষণ এবং কিছু প্যান্ডেল কালীপুজোর বা জগদ্ধাত্রী পুজোর জন্য অন্য জায়গায় গেলেও বেশিরভাগ মণ্ডপ পুনর্ব‍্যবহারের জন্য কাউকে পাননি অধিকাংশ পুজো উদ্যোক্তারা। যেমন, চেতলা অগ্রণী, নাকতলা উদয়ন সংঘ, সুরুচি সংঘ, সমাজসেবি সংঘ, যাদের প্যান্ডেল সাধারণত দুর্গাপুজোর পরে অন্যান্য পুজোয় ব্যবহার করা হয় ৷ তাই অন্য পুজোর বরাত না পেয়ে মণ্ডপ খুলে নেওয়া এবং প্রতিমা নিরঞ্জন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.