ETV Bharat / city

অনলাইন ক্লাসের জন্য দেওয়া স্মার্টফোন ও ট্যাব ব্যবহার হচ্ছে বিনোদনে !

author img

By

Published : Jul 13, 2021, 11:28 AM IST

sutdents-use-samartphone-and-tablet-for-entertainment-not-for-online-classes-or-studies
অনলাইন ক্লাসের জন্য দেওয়া স্মার্টফোন ও ট্যাব ব্যবহার হচ্ছে বিনোদনে

সরকার থেকে অনলাইনে পড়াশোনার জন্য দেওয়া ট্যাব ব্য়বহার হচ্ছে বিনোদনের জন্য ৷ এবার এমনই চাঞ্চল্যকার তথ্য উঠে এল শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের করা এক সমীক্ষায় ৷ অভিযোগ, অধিকাংশ পড়ুয়া অনলাইন ক্লাস না করে, সেই সময় বিনোদনের মধ্যে ডুবে থাকছে ৷ যা নিয় উদ্বেগপ্রকাশ করেছে শিক্ষামহল ৷

কলকাতা, 13 জুলাই : রাজ্যের সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুল এবং মাদ্রাসার দ্বাদশ শ্রেণির 9 লক্ষ পড়ুয়াকে অনলাইনে পঠন পাঠনের জন্য ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে ট্যাবলেট ও স্মার্টফোন দেওয়া হয়েছিল । কিন্তু, সেই ট্যাবলেট ও স্মার্টফোনের সদ্ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষক মহলে । অভিযোগ উঠেছে অধিংকাংশ ক্ষেত্রেই পড়ুয়ারা সেই ফোনগুলিকে পড়াশোনার কাজে কম ৷ বিনোদনের ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহার করছে ৷ এমনকি অধিকাংশ পড়ুয়া অনলাইন ক্লাস করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে ৷

প্রসঙ্গত, করোনার প্রকোপে গোড়ার দিকে টেলিভিশনের মাধ্যমে ক্লাস নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল রাজ্য সরকার । কিন্তু, সেই ব্যবস্থায় সঠিক ভাবে পড়াশোনার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না ৷ সরকারি স্কুলের পড়ুয়াদের যাতে অনলাইন পড়াশোনায় কোনওরকম অসুবিধা না হয়, তাই তাদের স্মার্টফোন ও ট্যাব দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সেই মতো ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে সরকারের তরফে বিনামূল্যে ট্যাব এবং স্মার্টফোন দেওয়া হয় ৷

তবে, অভিযোগ উঠেছে অধিকাংশ পড়ুয়া ডিজিটাল ডিভাইজকে শিক্ষার ক্ষেত্রে কম, বিনোদনের জন্য অনেক বেশি ব্যবহার করছে । প্রসঙ্গত, অনলাইন ক্লাসে পড়ুয়াদের সংখ্যা অনেকটাই কম থাকছিল ৷ তাই শিক্ষকরা নিজেদের উদ্যোগে একটি সমীক্ষা করেন ৷ সেই সমীক্ষা বলছে, যে মাত্র 20 থেকে 30 শতাংশ পড়ুয়া অনলাইনে পঠনপাঠনের ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিতে নিয়মিত ক্লাস করেছে । বাকি 70 থেকে 80 শতাংশ পড়ুয়া অনলাইনে শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রত্যাখ্যান করছে ।

শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেন, ‘‘সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা বেশ কয়েকটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ, গুগুল মিট এবং জুম অ্যাপের মাধ্য়মে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস করবার চেষ্টা করেছিলেন । এমনকি এখনও সেই ক্লাস করাবার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা । তবে, প্রথম কিছুদিন এই পদ্ধতিতে পড়াশোনা চললেও, তারপর এই পদ্ধতিতে ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ প্রবলভাবে কমতে থাকে । দিনে দিনে পড়ুয়াদের অংশগ্রহণ এক্কেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে । এর একটা বড় কারণ হল তারা ধরেই নিয়েছে যে ক্লাস না করলেও তারা এমনিতেই পাশ করে যাবে । তাহলে আর অনলাইনে ক্লাস করা কেন ? যারা এখনও স্মার্টফোন পায়নি তারাও যেমন আসছে না ৷ যারা স্মার্টফোন পেয়েছে তারাও ক্লাস করছে না । সরকার থেকে যখন তাদের স্মার্টফোন দেওয়া হচ্ছে, তখন আশা করাই যায় যে তারা ক্লাসে যোগ দেবে । কিন্তু বাস্তবে তেমনটা হচ্ছে না ৷’’

আরও পড়ুন : ট্যাবের বিলের চাপে বাড়ছে স্কুলছুট, দাবি প্রধান শিক্ষকদের একাংশের

তিনি আরও বলেন, ‘‘আসলে পড়ুয়ারা এই স্মার্টফোনগুলি নিয়ে কী করছে ? ফোন ও ট্যাবলেট পাওয়ার পরেও তারা কেন নিয়মিত ক্লাস করছে না ? সেটা মনিটার করা হচ্ছে না । এই বিষয়টি আমরা আগেও অনেকবার বলেছি ৷ তবে, এ নিয়ে কোনও সদুত্তর আমরা পাইনি । দেখা গেছে যে অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীই পড়াশোনার জন্য দেওয়া স্মার্টফোন বা ট্যাবকে বিনোদনের জন্য ব্যবহার করছে । তাই ডিজিটাল ডিভাইজ পেয়েও যে পড়াশোনার ক্ষেত্রে তা খুব সুবিধা করে দিয়েছে তেমনটা নয় ৷’’

শুধু অনলাইনে ক্লাসই নয়, সব শ্রেণির বিষয় ও তার চ্যাপটার ধরে ধরে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা ও আলোচনাও পাওয়া যাবে অনলাইনে । ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকারাই ইউটিউবের মতো ভিডিয়ো অ্যাপে সেগুলি আপলোড করে দেন । কিন্তু, সেই ভিডিয়োগুলি ডাউনলোড করে, তা পড়ার ক্ষেত্রেও তেমন আগ্রহ নেই পড়ুয়াদের মধ্যে । তাই শিক্ষকদের একাংশের মতে, বিদ্যালয় শিক্ষার বিকল্প অনলাইন শিক্ষাদান নয় ৷

আরও পড়ুন : নেই নেটওয়ার্ক, অনলাইনে পড়াশোনা স্বপ্নই বাস্তারের জঙ্গলে

মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্র বলেন, ‘‘2020 মার্চ মাস থেকে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলি অনলাইন পঠনপাঠন ব্যবস্থায় একেবারেই সফলতা লাভ করতে পারেনি । কারণ সরকারি স্কুলে যে ধরণের ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা করে, তাদের বেশিরভাগই যে আর্থসামাজিক কাঠামো থেকে আসে তাতে তাদের পক্ষে অনলাইন ক্লাস করা সম্ভব হয় না । কারণ স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট দেওয়ার সময় ঘোষণা করা হয়েছিল যে ফোনে ও ট্যাবে কানেকটিভিটির ব্যবস্থা অভিভাবকদের করতে হবে । তাই অনেকক্ষেত্রেই অর্থ খরচ করে কানেকটিভিটি নেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি । গতবছর যখন এই ডিজিটাল ডিভাইজগুলি ছাত্রছাত্রীদের দেওয়া হয়েছিল, তখনই অনুমান করা গিয়েছিল যে পড়াশোনার ক্ষেত্রে কম ও বিনোদন বা নেট সার্ফিং এর জন্যই বেশি ব্যবহৃত হবে এই ফোন ও ট্যাবগুলি । আর সত্যি যদি পড়ুয়াদের শিক্ষার কথা ভাবা হত, তাহলে অনেক কম খরচে তাদের এডুকেশনাল ট্যাব দেওয়া যেত । কারণ এই ধরনের ট্যাবের মাধ্যমে ফোন করা সম্ভব নয় । কিংবা রেডিয়ো ও টেলিভিশনকে শিক্ষার জন্য ব্যবহার করা যেত’’ ৷

আরও পড়ুন : নেই স্মার্টফোন, অনলাইন পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত পুরুলিয়ার বহু পড়ুয়া

এই বিষয় শিক্ষাবিদ জয়িতা সরকার বলেন, ‘‘অনলাইনে পঠন-পাঠনের জন্য স্মার্টফোনের যেমন প্রয়োজন রয়েছে ৷ তেমনই স্মার্টফোনের অপব্যবহারও হচ্ছে । পড়ুয়ারা বিভিন্ন সাইট সার্চ করছে কিংবা অনলাইন ক্লাসের মধ্যেই হয়তো তারা ভিডিয়ো বন্ধ করে খেলা করছে । তাই অভিভাবকদের অনেক বেশি সচেতন হতে হবে । পাশাপাশি অনলাইনে শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে যেহেতু প্রতিদিন স্কুলে গিয়ে ক্লাস করার নিয়মানুবর্তিতা থাকছে না ৷ তাই স্কুল যেতেই হবে, ক্লাস করতে হবে সেই বিষয়টার প্রতি তারা গুরুত্ব দিচ্ছে না । অন্যদিকে, অধিকাংশ পড়ুয়ারা যে সামাজিক পরিকাঠামোর মধ্যে বড় হয় ৷ সেখানে বাড়ির কাজ বা এই লকডাউন পরিস্থিতিতে যে আর্থিক অনটনের মধ্যে পরিবারগুলি পড়েছে ৷ ফলে উপার্জনের বিষয়টি অনেক বেশি প্রাধান্য পেয়েছে ৷ তাই স্মার্টফোন থাকলেও তারা নানা রকম দৈনন্দিন কাজের মধ্যেই বেশি জড়িয়ে পড়ছে ৷’’

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.