ETV Bharat / bharat

Central Investigative Agencies কেন্দ্রীয় সংস্থার গৈরিকীকরণের অভিযোগ, চোখ রাখা যাক কিছু তথ্যে

author img

By

Published : Aug 19, 2022, 10:41 PM IST

শুক্রবার দিল্লিতে আপ নেতৃত্বাধীন সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়ার (Delhi Deputy CM Manish Sisodia) বাড়িতে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার হানা নয়া অস্ত্র তুলে দিয়েছে বিরোধী শিবিরের হাতে ৷ অভিযোগ, বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করতে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে (Central Investigative Agencies) ব্যবহার করা হচ্ছে ৷ এর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করলেন ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি ঐশ্বর্যা ডাখোরে ৷

Central Investigative Agencies in India
ETV Bharat

নয়াদিল্লি, 19 অগস্ট: রাজধানীতে আবগারি নীতিতে অনিয়মের অভিযোগে শুক্রবার দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়ার (Delhi Deputy CM Manish Sisodia) বাড়িতে হানা দিয়েছে দ্য সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) এর তদন্তকারী দল (The Central Bureau of Investigation) ৷ আপ নেতৃত্বাধীন সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার হানা ফের নয়া অস্ত্র তুলে দিয়েছে বিরোধী শিবিরের হাতে ৷ কেন্দ্রের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার এজেন্সি দিয়ে বেছে বেছে বিরোধীদের টার্গেট করছে বলে অভিযোগ তুলছে বিরোধীরা (Allegation against Central Govt of using Central Agencies against opposition parties) ৷

তবে বিরোধীদের এই অভিযোগ বারবার অস্বীকারই করে এসেছে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি (Central Investigation Agencies) ৷ কিন্তু ঘটনা হল, নরেন্দ্র মোদি সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পরে একাধিকবার দেখা গিয়েছে ভোটের আগে বিরোধীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির তৎপরতা বেড়েছে ৷ যদিও দেশে এই বিষয়টি নতুন নয় ৷ ইউপিএ জমানাতেও এই প্রবণতা লক্ষ্য করা গিয়েছে ৷ তবে রাজনৈতিক মহলের মতে, মোদি সরকারের সময়ে এই তৎপরতা আরও বেশি করে প্রকাশ পাচ্ছে ৷ বিষয়টিকে নরেন্দ্র মোদি সরকারের (Narendra Modi Government) ঔদ্ধত্যও বলছেন বিরোধীরা ৷ এই প্রসঙ্গে এমন কিছু ঘটনার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে, যেখানে ভোটের আগে বিরোধীদের বিরুদ্ধে সিবিআই, ইডি, আয়কর বিভাগের মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির তৎপরতার বিষয়টি আরও প্রকট হয় ৷

আরও পড়ুন: অনুব্রতকে 5 কোটি 53 লক্ষ টাকা তোলা দিয়েছিলাম, চাঞ্চল্যকর দাবি ব্যবসায়ীর

2021 সালের 2 এপ্রিল তামিলনাড়ুর বিধানসভা নির্বাচনের মাত্র 4 দিন আগে আয়কর বিভাগ তল্লাশি চালায় ডিএমকে প্রধান এমকে স্ট্যালিনের মেয়ের বাড়িতে ৷ ভোটের আগে টাকা বিলির অভিযোগে এই তল্লাশি চালানো হয় ৷

গত বছরই 21 ফেব্রুয়ারি, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের (West Bengal Assembly Poll 2021) 8 দফা ভোট পর্ব শুরুর মাত্র একমাস আগে সিবিআই কড়া নেড়েছিল তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দরজায় ৷ কয়লাপাচার কাণ্ডে তলব করা হয়েছিল অভিষেকের স্ত্রী ও শ্যালিকাকে ৷

2021 এর 15 মার্চ পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের প্রচারপর্বের মাঝেই সিবিআই সমন পাঠিয়েছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ৷ 2014 সালের একটি চিটফান্ড মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তাঁকে ওই নোটিশ পাঠানো হয় ৷

এর ঠিক একদিন পরেই 16 মার্চ ইডি কয়লা পাচার মামলায় গ্রেফতার করে বিকাশ মিশ্রকে ৷ বিকাশ তৃণমূল যুব নেতা বিনয় মিশ্রের ভাই ৷

এরপর 19 মার্চ সারদা চিটফান্ড মামলায় দুই তৃণমূল নেতা মদন মিত্র ও বিবেক গুপ্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কেন্দ্রীয় সংস্থা ৷ এই মামলাতেই তার আগে সিবিআই গ্রেফতার করেছিল মদন মিত্রকে ৷ পরে তিনি জামিন পান ৷ এই মামলাতেই তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ, তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায় ও সারদার তৎকালীন ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের প্রায় 3 কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোপ করে ইডি ৷

একই দৃশ্য দেখা গিয়েছিল কেরলের বিধানসভা নির্বাচনের সময় ৷ সেসময় ইডি দাবি করেছিল সোনা পাচার মামলায় মুখ্য অভিযুক্ত স্বপ্না সুরেশ মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের জ্ঞাতসারেই ওই কাজ করেন ৷ এরপর অবশ্য ইডি'র আধিকারিকদের বিরুদ্ধে মামলা করে কেরল পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ ৷

আরও পড়ুন: বিজেপি পারলে নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রতিবেদন প্রকাশ করুক, চ্যালেঞ্জ আপ নেতার

গতবছর 3 মার্চ ইডি সমন পাঠায় কেরালা ইনফ্রাস্টাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড বোর্ড (কেআইআইএফবি)-এর চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার কেএম আব্রাহাম ও ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিক্রম সিংকে ৷ বিদেশী মুদ্রা লেনদেন সংক্রান্ত মামলায় তাঁদের তলব করা হয় ৷ এর প্রেক্ষিতে অবশ্য পালটা ইডি'র বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করে কেরল সরকার ৷

2020 সালের অক্টোবরে, জম্মু ও কাশ্মীরের আঞ্চলিক দলগুলি পিপলস অ্যালায়েন্স গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় ৷ এর ঠিক চারদিন পরেই ইডি ডেকে পাঠায় লোকসভার সাংসদ তথা রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুখ আবদুল্লাকে ৷ জম্মু-কাশ্মীর ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের বেআইনি আর্থিক লেনদেন সম্পর্কিত মামলায় তাঁকে তলব করা হয়েছিল ৷

2020 এর অক্টোবরে কর্নাটকের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ডিকে শিবকুমার ও তাঁর ভাই ডিকে সুরেশের সম্পর্কিত 14টি জায়গায় হানা দেয় সিবিআই ৷ প্রায় 75 কোটি টাকার আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তি মামলায় এই তল্লাশি চালানো হয় ৷ বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন ৷

গত বছর জুলাই মাসে রাজস্থানে রাজনৈতিক সংকটের সম্মুখীন হয়েছিল ক্ষমতাসীন কংগ্রেস ৷ মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সচিন পাইলটের মধ্যে সেসময় মতানৈক্য তৈরি হয় ৷ সেসময় আইটি ও ইডি আর্থিক দুর্নীতি মামলায় তল্লাশি চালায় গেহলটের ভাইের একাধিক সম্পত্তিতে ৷

2019 এর সেপ্টেম্বর, মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনের মাত্র 1 মাস আগে ইডি মহারাষ্ট্র স্টেট কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের অর্থ তছরূপের ঘটনায় কেস নথিভুক্ত করে এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার ও তাঁর ভাই অজিত পাওয়ারের বিরুদ্ধে ৷ 2020 এর নভেম্বরে আর্থিক দুর্নীতি সংক্রান্ত আরেকটি মামলায় শিবসেনা বিধায়ক প্রতাপ সারনায়েকের বাড়ি ইডি তল্লাশি চালায় ৷ গ্রেফতার করা হয় তাঁর ছেলে বিহঙ্গকে ৷

তাৎপর্যপূর্ণ হল, এই সমস্ত মামলাই বর্তমানে প্রায় ঠান্ডা ঘরে চলে গিয়েছে ৷ তদন্তের কোনও ফল এখনও সামনে আসেনি ৷ আবার অন্যদিকে, বিজেপি'র 'গুড বুক'য়ে রয়েছেন এমন কয়েকজনের বিরুদ্ধে তদন্ত বর্তমানে প্রায় শামুক গতিতে চলছে ৷ 2017 সালে তৃণমূল থেকে বিজেপি'তে যাওয়ার পর সারদা মামলায় (Saradha Chit fund Case) অন্যতম অভিযুক্ত মুকুল রায়ের বিরুদ্ধেও তদন্তের গতি থমকে গিয়েছিল ৷

একইভাবে তৃণমূল থেকে 2020 সালে বিজেপি'তে যাওয়ার পর নারদাকাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) বিরুদ্ধেও তদন্তের আর আগ্রগতি বিশেষ এগোয়নি ৷ 2020 তে সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা তাঁর কাছ কোটি কোটি টাকা নিয়েছেন ৷ শুভেন্দু অধিকারী নিয়েছেন 6 কোটি টাকা ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.