ETV Bharat / bharat

Independence Special : ব্রিটিশদের কঠিন লড়াইয়ে মুখে ফেলেছিলেন আথারগড়ের রাজা এবং জমিদাররা

author img

By

Published : Sep 5, 2021, 6:08 AM IST

আথারগড়ের রাজ এবং জমিদাররা ব্রিটিশদের কঠিন লড়াইয়ে মুখে ফেলেছিল
আথারগড়ের রাজ এবং জমিদাররা ব্রিটিশদের কঠিন লড়াইয়ে মুখে ফেলেছিল

ভারতীয়রা তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল ৷ 1757 সালে পলাশীর যুদ্ধের ফলাফল ব্রিটিশদের বাংলার অবিসংবাদিত শাসক বানিয়েছিল ৷ 1818 সালের মধ্যে ব্রিটিশরা আথারগড় (Atharahagadh) ছাড়া ভারতের প্রায় সমস্ত অঞ্চল দখল করেছিল ৷ ব্রিটিশরা তাই এই প্রদেশই দখলের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল ।

আথারগড়, 5 সেপ্টেম্বর : প্রায় দুশো বছর ভারত ব্রিটিশদের অধীনে ছিল ৷ তাদের অত্যাচার এবং নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন এদেশের মানুষ । সেই সময় ব্রিটিশরা 1857 সালের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ-সহ প্রায় প্রতিটি বিদ্রোহই দমন করতে সক্ষম হয়েছিল । তবে আথারগড়ের উপজাতিদের দমন করতে ব্রিটিশদের বেশ বেগ পেতে হয়েছিল ৷ এই লড়াইয়ের প্রধান নায়ক ছিলেন সম্বলপুরের রাজা সুরেন্দ্র সাই, সোনাখানের জমিদার বীর নারায়ণ সিং এবং পৃথ্বীরাজ চৌহানের বংশধরেরা ৷ এখানকার জমিদারদের মধ্যে কিছু ছিলেন গণ্ড এবং অধিকাংশ ছিল বিঞ্জোয়ার ৷ (Some of the zamindars were Gonds and most were Binjhwars) বনজ সম্পদ আথারগড়ের বাসিন্দাদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল । এখানকার জমিও ছিল খুব ঊর্বর । বর্তমান পূর্ব ছত্তিশগড় এবং পশ্চিম ওড়িশা সেই সময়ের আথারগড়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল ।

1757 সালে ভারতীয়রা আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য পলাশীর যুদ্ধে (battle of Plassey) লড়েছিল ৷ এই যুদ্ধেরই ফলাফল 1818 সালে ব্রিটিশদের বাংলার অবিসংবাদিত শাসক বানিয়েছিল ৷ সেই সময়ের মধ্যেই ব্রিটিশরা আথারগড় ছাড়া ভারতের প্রায় সমস্ত অঞ্চল দখল করে ফেলেছিল ৷ ব্রিটিশরা এই অঞ্চল দখলের আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছিল ৷ সম্বলপুরের সিংহাসনে সুরেন্দ্র সাইয়ের জায়গায় প্রয়াত রাজা মহারাজ সাইয়ের স্ত্রী রানি মোহন কুমারিকে বসানো হয়েছিল । এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছিলেন আথারগড়ের রাজা এবং জমিদাররা ৷ সেই বিরোধিতার জন্য সুরেন্দ্র সাই, তাঁর ভাই উদান্ত সিং এবং কাকা বলরাম সিংকে গ্রেফতার করে হাজারিবাগ জেলে বন্দি করা হয়েছিল ।

সুরেন্দ্র সাই এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের গ্রেফতারের পরও বিদ্রোহ অব্যাহত থাকে । 1856 সালে দুর্ভিক্ষের সময় সোনাখানের বিঞ্ঝোয়ার জমিদার নারায়ণ সিং গুদামের তালা ভেঙে গ্রামবাসীর মধ্যে খাদ্যশস্য বিতরণ করেছিলেন ৷ এই ঘটনার পর তাঁকেও গ্রেফতার করে রায়পুর কারাগারে বন্দি করা হয় । কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই নারায়ণ সিং পালাতে সক্ষম হন এবং 1857 সালের 30 জুলাই ভারতীয় সেনা হাজারিবাগ কারাগারের দরজা ভেঙে সুরেন্দ্র সাই এবং তাঁর সঙ্গীদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করে । পালিয়ে তাঁরা সারানগড়ের রাজা সংগ্রাম সিংয়ের প্রাসাদে আশ্রয় নেন ৷

সুরেন্দ্র সাইকে বাগে আনতে না পেরে ব্রিটিশরা কূটনৈতিক চাল চালে ৷ 1861 সালের সেপ্টেম্বরে সম্বলপুর এবং কটক জেলে বন্দি বিদ্রোহীদের মুক্ত করে দেওয়া হয় । 1862 সালের 22 নভেম্বর গভর্নর জেনারেল এলগিন লন্ডনে ব্রিটিশ সেক্রেটারি অফ স্টেটকে জানান যে সুরেন্দ্র সাই আত্মসমর্পণ করেছেন । এরপর আথারগড়ের রাজা-জমিদাররা ব্রিটিশদের প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন ৷ তবে ব্রিটিশদের প্রশাসনিক কাঠামো পরিবর্তনের ফলে তারা আর সেই প্রতিশ্রুতি রাখেনি ৷ এরপর সুরেন্দ্র সাই আবার সশস্ত্র বিদ্রোহের পরিকল্পনা করেন ৷ ব্রিটিশরা তাঁর পরিকল্পনার কথা জানতে পেরে সুরেন্দ্র সাইকে আবার গ্রেফতার করে মধ্যপ্রদেশের খণ্ডওয়ার কাছে অসিরগড় দুর্গে বন্দি করা হয় । সেখানই 19 বছর বন্দি থাকার পর মৃত্যু হয় তাঁর ৷

তাঁদের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য ব্রিটিশদের কঠিন যুদ্ধের মধ্যে ফেলেছিলেন আথারগড়ের রাজা এবং জমিদাররা

সুরেন্দ্র সাইয়ের মতো সোনাখানের জমিদার নারায়ণ সিংকেও গ্রেফতার করার জন্য ব্রিটিশরা গ্রামবাসীদের উপর অত্যাচার শুরু করে ৷ গ্রামে অগ্নিসংযোগও করে তারা ৷ তাঁর প্রিয় গ্রামবাসীর উপর অত্যাচার দেখে বীরনারায়ণ সিং আত্মসমর্পণ করেন । 1857 সালের 5 ডিসেম্বর তাঁকে রায়পুরে ডেপুটি কমিশনার এলিয়টের কাছে হস্তান্তর করা হয় এবং রায়পুরেই তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় ।

বর্তমান প্রজন্ম ইতিহাসের পাতায় কোথাও হারিয়ে যাওয়া দেশের এইসব বীর যোদ্ধাদের সম্পর্কে খুব কমই জানে ৷ তবে বলা যায়, এই অঞ্চলের রাজা এবং জমিদাররা ব্রিটিশদের বুঝিয়ে দিয়েছিল যে তাঁরা সহজেই তাঁদের স্বাধীনতা কেড়ে নিতে দেবেন না ৷

আরও পড়ুন : Independence Special : ব্রিটিশদের চোখে চোখ রেখে লড়েছিলেন রামগড়ের রানি অবন্তী বাঈ

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.